বেতাগী (বরগুনা) প্রতিনিধি:
বরগুনার বেতাগীতে সরকারি খালে বাঁধ দিয়ে অবৈধভাবে মাছ চাষের অভিযোগ উঠেছে সদর ইউপি চেয়ারম্যান ও বেতাগী উপজেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি মো. হুমায়ুন কবির খলিফার বিরুদ্ধে। যার দায় দল নিবে না বলে জানিয়েছেন উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ও বেতাগী পৌর মেয়র এ.বি.এম গোলাম কবির।
জানা গেছে বাঁধ দেয়ার কারণে খালের স্বাভাবিক পানি প্রবাহ বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে খালের এক পাড়ের ফসলি জমিতে বৃষ্টির পানি জমে আছে। এতে আমন বীজতলা নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন কৃষক। বাঁধের ফলে ওই এলাকার শত শত কৃষক ও সাধারণ মানুষ ক্ষতির মুখে পড়েছেন। তাঁদের দাবি খালটি দখলমুক্ত ও পুনঃখনন করে পানির স্রোতধারা স্বাভাবিক করার।
উপজেলার সদর ইউনিয়নের ঝোপখালী ও লক্ষ্মীপুরা এলাকায় গ্রেদ লক্ষ্মীপুরা গ্রামের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত লক্ষ্মীপুরা খাল। শুক্রবার (২২ জুলাই) দুপুরে ঐ এলাকায় সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, সরকারি লক্ষ্মীপুরা খালের মূল শাখা ও উপশাখার চারটি স্থানে বাঁধ দিয়ে পানিপ্রবাহ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ফলে এটি এখন ঘেরে পরিণত হওয়ায় সেখানে রুই, কাতলা, মৃগেলসহ দেশি প্রজাতির মাছ চাষ করা হয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় একাধিক ব্যক্তি অভিযোগ করেন, এক সময় এলাকার জেলেরা এই খালে মাছ ধরে বিক্রি করতো এবং এলাকাবাসী মাছ ধরে নিজেদের মাছের অভাব মিটাতো। কিন্ত মো. হুমায়ুন কবির খলিফা গত বছর ইউপি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পরপরই খালটি দখলে নিয়ে নেয়। ক্ষমতার দাপটে তিনি কাউকে পরোয়া করেন না। খামখেয়াালি ভাবে সে সরকারি খালে বাঁধ বসিয়ে নিজের ছেলেকে দিয়ে আধিপত্য বিস্তার করে মাছের চাষ করছেন। এখন আর অন্য কেউ এই খালে মাছ ধরতে পারে না।
তাদের অভিযোগ, মো. হুমায়ুন কবির খলিফা একই সাথে সদর ইউপি চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি এবং তাঁর ছেলে গোলাম শাহরিয়ার মনির সদর ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক হওয়ায় তাঁরা অনিয়ম করলেও ক্ষমতার দাপটে কোন কিছুর তোয়াক্কা করেন না। স্থানীয়দের অভিযোগ ভয়ে তাঁদের বিরুদ্ধে এলাকায় কেউ মুখ খুলতে চায় না।
স্থানীয় বাসিন্দা মো. কবির হোসেন চৌকিদার বলেন, সদর ইউপি চেয়ারম্যান ও তাঁর ছেলে সরকারি খালে বাঁধ দিয়ে মাছ চাষ করছেন। গত শুকনা মৌসুমে তাঁরা খালে বাঁধ তৈরি করেন। বাঁধ দেওয়ার কারণে খালের স্বাভাবিক পানি চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। এতে এলাকার কৃষকের ফসল ফলানোর পাশাপাশি চাষবাদ করতে খুবই সমস্যা হচ্ছে। খালটি দখলমুক্ত করে পরিকল্পিতভাবে খনন করা উচিত।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বেতাগী সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. হুমায়ুন কবির খলিফা বলেন, আমি সদর ইউনিয়ন পরিষদ থেকে রেজ্যলুশন করে সরকারি ঐ খালে বাঁধ দিয়ে মাছ চাষ করছি। খালের বাঁধের অংশের সাথে কৃষি জমির কোন সংযোগ নেই। এতে কৃষি কাজের কোন ক্ষতি হয় না। তারপরও এই মাছ চাষে যদি কৃষকের ক্ষতি হয় তাহলে আমি বাঁধ কেটে দিবো। আর যদি ক্ষতি না হয় তাহলে মৎস্য প্রকল্প করবো।
এ বিষয়ে বেতাগী উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ও বেতাগী পৌর মেয়র এ.বি.এম গোলাম কবিরের সাথে মুঠোফোনে কথা বললে তিনি বলেন আমি বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী অফিসারের মাধ্যমে জেনেছি। আমি এখন ঢাকা থেকে বেতাগীর পথে আছি আগামী কালকে উপজেলা চেয়ারম্যান সাহেব অভিযুক্ত সদর ইউনিয়ন চেয়াম্যান হুমায়ুন কবির খলিফাকে ডেকে আইনগতভাবে আমরা এটা নিষ্পত্তি করবো ইনশা আল্লাহ। তিনি আরো বলেন খাল আমাদের ওপেন থাকবে সরকারি খালে বাঁধ দিয়ে চাষাবাদ করার সুযোগ নেই। বেতাগী সদর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়াম্যান হুমায়ুন কবির খলিফা বেতাগী উপজেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি বলেও তিনি নিশ্চিত করেন। বেতাগী উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি এ.বি.এম গোলাম কবির আরো বলেন যদি কোন ব্যক্তি নৌকা প্রতীক নিয়ে জনপ্রতিনিধি হয়ে তার ব্যক্তিগত খামখেয়ালীপনা বা কোন খারাপ কাজে সে সংশ্লিষ্ঠ হয় তাহলে দলও তার পক্ষে কথা বলবে না।
বেতাগী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. সুহৃদ সালেহীন বলেন, কোনোভাবেই সরকারি খালে বাঁধ দিয়ে পানির স্বাভাবিক প্রবাহ বন্ধ করা যাবে না। খালে মাছ চাষের অনুমোদনের জন্য ইউনিয়ন পরিষদ রেজ্যুলেশন করলেও কোনভাবেই সরকারি খালে মাছ চাষ করা ঠিক নয়। এ বিষয়ে সরেজমিনে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।