এস এম আক্তারুজ্জামান, ডিআইজি বরিশাল রেঞ্জ , আপলোডের সময় : শুক্রবার, ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০২২ , আজকের সময় : শুক্রবার, ২২ নভেম্বর, ২০২৪

তদবির অর্থনীতিঃ এস এম আক্তারুজ্জামান, ডিআইজি বরিশাল রেঞ্জ

তদবির অর্থনীতিঃ
বিকাল ৪টা পার হয়েছে। বরিশালের আবহাওয়া বেশ রোমান্টিক মনে হচ্ছিল, হালকা ঠান্ডা সমীরণ বয়ে যাচ্ছিল। মনে অযথাই কি জানি সুরসুরি দিচ্ছিল। এমন সময় একটি ফোন কল ধরতে গিয়ে একটু তদবির অর্থনীতির ভাবনা মাথায় উদয় হল।
“হ্যালো, এইটা কি বরিশালের ডিআইজি স্যারের নম্বর, আপনি কি আক্তারুজ্জামান?”
খুব পরিচিত এবং স্পস্ট মহিলা কন্ঠ, কিন্তু ঠাহর করতে পারছিলাম না। বরিশালের আঞ্চলিক ভাষা। বরগুনার বন্ধু M M Zaman [1], Taptun N Zaman [2] Hasan Jamil [3] Haider Khan [4] এদের দেশীয় মনে হচ্ছিল না। ঠাহর করতে পারছিনা। ভাবছিলাম বিশিষ্ট ভ্রমন সাহিত্যিক Ruhul Amin Shiper [5] এর কথা। তার দেশি কিনা। বলতে পারেন, ফোনদাতাকে ঠাহর করার জন্য এত চিন্তার দরকার কি? কারন আছে, উনাদের পরিচিত অনেকে ফোন দেয়, তাদের সাথে সন্মানের সাথে কথা বলতে হয়, আদব কায়দা ঠিক রেখে কথা বলতে হয়। এছাড়া বরিশালের সবার সাথে বিনয়ের সাথে কথা বলি। উনি যেই টোনে কথা বলছিলেন তাতে মনে হয়েছিল উনি বড় কিছু বা কারও পরিচিত। যাই হোক আগে উত্তর দিই, পরে চিন্তা করব।
“হ্যা, আমি বরিশালের ডিআইজি আক্তারুজ্জামান বলছি”
আমি খুব বিনয়ের সাথে বললাম।
“আপনি আমাকে চিনতে পারছেন? আমি ইয়াসমিন” বলে সে একটু পজ দিল, মানে আমাকে চিনার সুযোগ দিল।
মুহুর্তেই আমার মাথায়, ফেসবুকে, হোয়াটসঅ্যাপ’এ যত ইয়াসমিন আছে সবার মুখগুলি ব্রাউজ করে ফেললাম” একটা কট হয়ে গেল। বাচলাম,
“হ্যা, চিনতে পারছি, আপনি হিজলার না?” বলে উনাকে একটু স্পস্টিকরন প্রশ্ন করলাম। হিজলার এক ভিক্টিম নাম ইয়াসমিন’কে নিয়ে একটি বই লিখেছলাম। সে ছিল এক মামলার অসহায় ভিক্টিম। উনাকে আর্থিকভাবেও সাহায্য করতে হয়েছিল মামলার পাশাপাশি বরিশালের এসপি থাকা অবস্থায় এবং এর পরেও বেশ কয়েক বছর।
“না আমি কলাখালির, আচ্ছা আমার টাকাটা আপনি আদায় করে দিচ্ছেন না কেন? ৯ লাখ টাকার মধ্যে মাত্র আড়াই লাখ দিছে। এখন আর দিচ্ছেনা। আপনি তো বলছিলেন পুরা টাকা আদায় কইরা দিবেন।” তিনি আমাকে তীর্যক সুরে প্রশ্ন মানে আসামির কাঠগড়ায় দাড় করে দিচ্ছিলেন।
আমি অবাক হলাম। এমন কিছু তো মনে পরছেনা। তাই, আমি ডিফেন্ড করলাম।
“না তো, আমি তো কাউকে এমন কথা দিই নাই। আপনি মনে হয় ভুল নম্বরে ফোন করেছেন।”
“না না, আমি ঠিক জায়গায়ই ফোন করেছি,,,,,,? তিনি অনেকটা তর্কের মত করে যাচ্ছিলেন।
আমি ফোন কেটে দিয়ে দুইটি কাজ করলাম। উনার নম্বরটিকে আমি কন্ট্রোল ফোকালকে দিলাম বিস্তারিত জানার জন্য এবং আমি বিষয়টাকে ভাল করে মনে করার জন্য।
মনে করার সময় উনি দিতে চাচ্ছিলেন না। ফোনের উপর ফোন দিয়ে যাচ্ছেন। আমি কেটে দিচ্ছি, আর তিনি আরও দ্রুত কল করে যাচ্ছেন। এক পর্যায়ে আপাতত ব্লক করে চিন্তা করতে থাকলাম।
এর মধ্যেই কন্ট্রোল আমাকে বিস্তারিত জানাল।

সারদা থেকে বরিশাল রেঞ্জে বদলির আদেশ পেয়েছি। ফেসবুকে হাজার হাজার খানেক

অভিনন্দন

বার্তা। এক পর্যায়ে ফেসবুক কর্তৃপক্ষ আমাকে আমার প্রোফাইল ব্যাক্তিগত থেকে পাবলিক লেভেল আনার পরামর্শ দিয়েছিল।

বরিশালে জয়েন করার পর আরেক দফা বার্তা। বলতে পারেন আমি কি বার্তা পেয়ে খুব আনন্দিত বা গর্বিত হয়েছিলাম কিনা? আমি কি তা প্রত্যাশা করেছিলাম কিনা? উত্তরে বলব, না কোনটাই না। ফেসবুক, মেসেঞ্জার একাউন্টে এরকম হতেই পারে।
অনেকে ফ্রেন্ড রিকুয়েষ্ট পেয়েছিলাম। তারা অনেকেই আমাকে বিভিন্নভাবে প্রশংসায় মাত করতে চেয়েছিল। তবে, বন্ধু যোগ করেছি ভেবেচিন্তে।
তবে জননিরাপত্তা সচিব স্যার অবসর নিয়ে নুতন সচিব আসার পর একজন আমাকে মেসেঞ্জারে এবং ফোনে বার বার নক করছিলেন কিছু আকর্ষনীয় তথ্য এবং ভার যোগ করে।
সেই ভদ্রলোক বার বার ফোন করছিল আমার খোজ খবর নিতে। যাই হউক আমি খাতিরি আলাপ লম্বা না করে কাজের কথা বলা পছন্দ করি। তাই উনাকে আমি কোন সমষ্যা থাকলে জানাতে বলেছিলাম। অবশেষে আমাকে এই ইয়াসমিনের সমষ্যার কথা জানিয়েছিলেন। অনেক বড় সমষ্যা যার সাথে তার স্বামী, পিতা, ভাই, মামা সদ পদের রিলেটিভ জড়িত, টাকা জমি সব আইটেম ছিল। সত্যিই জটিল সমষ্যা ছিল। যাই হউক, উনি আমাকে অনেকবার ফোন দিয়েছিল, আমিও উনার সাথে দুই একবার কথা বলেছিলাম। ওসি সাহেবকে সর্বোচ্চ চাপ প্রয়োগ করে কাজটি এগিয়ে নিচ্ছিলাম। যতদুর মনে পড়ে মার্চ এপ্রিল পর্যন্ত উনি আমার সাথে নিয়মিত কথা বলছিলেন। একবার মিনিষ্ট্রিতে দেখাও হয়েছিল। এর পর লম্বা বিরতি।
বিরতির পর আজকে আবার শুরু। কন্ট্রোল আমাকে জানাল ইয়াসমিন অভিযোগ করেছে, ভদ্রলোক তাকে বলেছিল আমি উনার আপন মামা হই। সে তার কাছ থেকে কয়েক দফায় ৩৫,০০০ টাকা নিয়েছিল আমাকে খুশি করার পারপাসে। গতকাল ভদ্রলোক ইয়াসমিনের কাছে ২ লাখ টাকা চায় আমার নামে।
আমি এবার সিরিয়াস হলাম, উনাকে আনব্লক করে ফোন দিলাম, নিজ কানে সব শোনলাম। ভদ্রলোককে ফোন দিলাম, উনার খোজ নিলাম। তার ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ একাউন্ট চেক করলাম। সেখানে আর ছবি পেলাম না, পেলাম গোলাপ ফুলের ছবি।

রেগে উনাকে ধরে আনার উদ্যোগ নিতে চাইলাম। কিন্তু, অর্থনীতির উন্নয়নের স্বার্থে তাকে আর ধরার চিন্তা বাদ দিলাম। যেখানে আইনের প্রয়োগ দুর্বল, জটিল সেখানে তদবির চলবে। উকিল মামলা চালাতে পয়সা নিলে তিনি কেন নিবেন না। সমষ্যা হল তিনি আমার নামে নিয়েছেন। যাই হউক, তিনি এই শিল্পে একা নন, হাজার হাজার কৌশলি এই শিল্পে জড়িত। তারা সেবা খাত গড়ে তুলেছেন।

অভিনন্দন উনাকে।