স্বদেশের উপকারে নেই যার মন, কে বলে মানুষ তারে পশু সেই জন’ কিংবা ‘সকলের তরে সকলে আমরা প্রত্যেকে মোরা পরের তরে’- এই পঙ্ক্তিগুলো হৃদয়ে গেঁথে নিয়েছেন জাভেদ নাছিম।
স্বেচ্ছাসেবি হিসাবে রক্তদান ও রক্তদান করতে মানুষ কে সচেতন করা তিনি কর্তব্য বলে মনে করেন। এ জন্য নিয়ম মেনে রক্ত দান করে যাচ্ছেন নিয়মিত। ১৯৮৬ সাল থেকেই হাসিমুখে কাজটি করছেন তিনি।
এর বাইরেও সমাজকর্মী হিসেবে তার আলাদা পরিচিতি রয়েছে। জাভেদ নাছিম প্রসঙ্গে তার পরিচিত জনেরা বলেন তিনিই এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের সবচেয়ে বেশিবার রক্ত দেওয়া একজন স্বেচ্ছাসেবি । ১৯৮৬ সাল থেকে তিনি রক্তদান করছেন। এ পর্যন্ত ১৮৬ বার রক্ত দিয়েছেন। এর মধ্যে ১২৬ বার ফুল ব্যাগ এবং ৫৭ বার শিশুদের রক্ত দিয়েছেন। তিনবার প্লাটিলেট দিয়েছেন। শিশুদের রক্ত দিলে বড়দের দেওয়ার জন্য সময় নিয়েছেন তিন মাস, অন্যদিকে বড়দের রক্ত দেওয়ার পরও এ নিয়ম মেনে চলার চেষ্টা করেছেন তিনি।
জাভেদ নাছিম ১৯৬৮ সালের ২৭ অক্টোবর কুমিল্লা জেলার সম্ভ্রান্ত এক মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। বেড়ে উঠেছেন ঢাকায়। জুরাইনে কেটেছে বাল্যকাল। ঢাকার নারিন্দা সরকারি হাই স্কুল থেকে এসএসসি, আদমজী ক্যান্টনমেন্ট কলেজ থেকে এইচ এস সির পর জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ব্যাচেলর অব আর্টস সম্পন্ন করেন। বর্তমানে তিনি বেসরকারি চাকরিজীবী, পাশাপাশি সামলাচ্ছেন এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের ব্যবসা। জাভেদ নাছিম যখন যুবক তখনও দেশে মুঠোফোন আসেনি। ফেইসবুক তো ভাবাই যায় না। বাংলাদেশ টেলিভিশনে তিনি দেখতে পেতেন মুমূর্ষু রোগীর জন্য রক্তের প্রয়োজন। সেই বিজ্ঞাপন নাড়া দিতো তার নরম হৃদয়ে। সেখান থেকেই অনুপ্রাণিত হন তিনি। কোনো মুমূর্ষু রোগীকে বিনামূল্যে রক্ত দেওয়ার পর যে হাসি তার ঠোঁটে দেখতে পান, সেই হাসিই তার অনুপ্রেরণা। সেই প্রশান্তি বুকে নিয়ে তিনি এখনো কাজ করছেন।
রক্ত দিতে ও রক্তদান এ মানুষকে সচেতন করতে দেশের বিভিন্ন জায়গায় ছুটে গিয়েছেন জাভেদ নাছিম। রক্ত দিতে গিয়ে সবচেয়ে বেশি আবেগাপ্লুত হন গাইবান্ধা গিয়ে। এক শিশুকে রক্ত দেওয়ার জন্য সেখানে হাজির ছিলেন ১৪ জন রক্তদাতা। ১৪ জনের মধ্যে থেকে সেই শিশু নাসিমকে বেছে নেন। রক্ত দেওয়ার পর সেই শিশু তাকে শুভেচ্ছাও জানায়। দিনটি ছিল বিশ্ব ভালোবাসা দিবস। এই স্মৃতি তার জীবনের অন্যতম ভালোবাসার স্মৃতি বলে জানান তিনি।
দেশের বিভিন্ন সংগঠন থেকে নাছিম রক্তদাতা সম্মাননা পেয়েছেন। দেশের রক্তদাতা স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলোতে তিনি ‘দাদুভাই’ নামে পরিচিত। এ ছাড়াও ২০১৯ সালে বাংলাদেশ পুলিশ কুমিল্লা জেলা থেকে পেয়েছেন আইজিপি সম্মাননা। জাভেদ নাছিম মরণোত্তর চক্ষুদান এ রেজিঃ করছেন।জাভেদ নাছিম বলেন, আমি মানুষকে রক্ত দিয়ে আনন্দ পাই। যেখানে যখন রক্তের প্রয়োজন হয় আমি ছুটে যাই। সারাজীবন আমি রক্ত দিয়ে যেতে চাই, আল্লাহ যতদিন ভালো রাখবেন।