শুক্রবার, ০৪ অক্টোবর ২০২৪, ০১:৩৩ অপরাহ্ন
শিরোনামঃ
ইউনূস-মোদি বৈঠক হতে পারে নভেম্বরে বিমসটেক শীর্ষ সম্মেলনে : পররাষ্ট্র উপদেষ্টা দক্ষিণ আমেরিকায় বিরল ‘অগ্নিবলয়’ তৈরি করবে সূর্যগ্রহণ তাড়াইলে আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক গ্রেফতার পদ্মায় অবৈধ বালু উত্তোলনের বিরুদ্ধে প্রশাসনের অভিযান জোরপূর্বক জমি দখলের বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলন,কান্নায় ভেঙে পড়ে ভুক্তভোগী পরিবার বামনায় শিক্ষকদের ১০ম ও ৯ম গ্রেডের দাবীতে মানববন্ধন পটুয়াখালীতে সার্ভে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্সদের কর্মবিরতি ও অবস্থান কর্মসূচী শুরু মুরাদনগরে স্মার্ট জাতীয় পরিচয়পত্র বিতরণ শুরু বামনায় জাতীয় কন্যা শিশু দিবস ২০২৪ উদযাপন উপলক্ষ্যে আলোচনা সভা সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে মানহানী মামলা প্রত্যাহারের দাবী ডিআরইউর

চারিদিকে শুধু ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের ক্ষতচিহ্ন

সাব্বির আলম বাবু (ভোলা ব্যুরো চিফ):
  • আপলোডের সময় : শুক্রবার, ২৮ অক্টোবর, ২০২২
  • ৬১০০ বার পঠিত

ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের আঘাতে ধসে পড়েছে শফিক মাঝির বসতঘর। সেই ঘরের ধ্বংসস্তূপ সরাচ্ছেন তিনি। ভোলার চরফ্যাশনের মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন ঢালচর ইউনিয়ন।

উপজেলার সর্বদক্ষিণের ইউনিয়নের সর্বত্রই ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের ক্ষতচিহ্ন। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কয়েকটি রাস্তা। চরের কিছুদূর পর পরই দু-একটি করে বিধ্বস্ত ঘর। পড়ে আছে বড় বড় গাছ। কোনো কোনো ভিটাও ধুয়ে গেছে। তবে বড় জলোচ্ছ্বাস না হওয়ায় বেশির ভাগ বসতি রক্ষা পেয়েছে।

চরফ্যাশন উপজেলা শহর থেকে দক্ষিণ আইচা থানার কচ্ছপিয়া ঘাটের দূরত্ব প্রায় ৩১ কিলোমিটার। গত বুধবার ওই ঘাট থেকে ছোট লঞ্চে প্রায় দুই ঘণ্টায় পৌঁছানো গেল চরে। আনন্দবাজার ঘাটে লঞ্চ থামতেই চোখে পড়ল ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের থাবার আলামত। জেলেদের ঘরের ওপর পড়ে আছে গাছ।

শফিক মাঝি নামের এক বৃদ্ধের সঙ্গে কথা হয় ঢালচরের আনন্দবাজারের পাশে বাড়ির ছোট উঠানে। ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘কাশেম মেম্বার আইসা দেইখা গেছে, কিন্তু এখন পর্যন্ত কেউ কোনো সাহায্য দিল না।’ সাইক্লোন শেল্টারে যাননি কেন—এমন প্রশ্নে শফিক বলেন, ‘আমাগো চরে তো কোনো সাইক্লোন শেল্টার নাই। লোকজন কোস্ট ট্রাস্ট এনজিওর বিল্ডিংয়ে আর পুলিশ ফাঁড়ির মধ্যে কিছু আছিল। আমরা রুহুটারে হাতে নিয়া সবার কাছ থেকে শেষবারের মতো মাফ চাইয়া আল্লাহ আল্লাহ করছিলাম। ’ স্ত্রী রেনু বেগম ও তিন ছেলেমেয়েকে নিয়ে চরে বসবাস করেন শফিক মাঝি। সরকারি কার্ডে রেকর্ড-পরচার মাধ্যমে বরাদ্দ পাওয়া ঘরের ভিটাটুকুই তাঁর একমাত্র সম্বল। শফিক মাঝির ঘরের পাশের ঘরগুলো টিকে থাকলেও জোয়ারের পানিতে ধসে গেছে ঘরের ভিটা। বাতাসের তোড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ঘরের টিনের বেড়া।

আনন্দবাজারের পাশেই সরকারিভাবে নির্মিত আধাপাকা ঘরের জেলে কলোনি। ৪৫০টি জেলে পরিবারের বসবাস এখানে। কলোনির বাসিন্দা আব্দুস সালাম ও আব্দুল হক মাঝির বয়স সত্তরের কাছাকাছি। আব্দুস সালাম বলেন, ‘আমাগো চরে কমপক্ষে ১৫-১৬ হাজার মানুষ বসবাস করে। কোস্ট এনজিও আর পুলিশের ফাঁড়ির মধ্যে সব মানুষের জায়গা হয় নাই। এই কারণে আমরা কলোনির ঘরের মধ্যেই আছিলাম।

সোমবার দুপুরের পর তনে বাতাসের লগে পানি বাড়া শুরু অইলে কলিজার মধ্যে কামড় দেয়। সবাই সবার তনে মাপটাপ চায়া ঘরের মধ্যে ছিলাম।’ চরে ঘুরে দেখা গেছে, আনন্দবাজারের আশপাশে, তারুয়া চর ও খালেকের এলাকায় জনমানুষের বসবাস। সরকারি হিসাবে চরে আড়াই হাজার জেলে। তবে গোটা চরে মেলে প্রায় পাঁচ হাজার ঘরে মৎস্যজীবীর বাস। একসময় ঢালচরে ধানসহ বিভিন্ন ফসলের আবাদ হলেও এখন কোনো ফসল চাষ করা হয় না। বাসিন্দারা সবাই মাছ শিকারসহ অন্যান্য ব্যবসা-বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িত।

ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) ২ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য হারুন হাওলাদার বলেন, ‘ঝড়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে ঘরবাড়ি আর রাস্তাঘাটের।’ ইউপির ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য আব্দুস সালাম মুন্সী বলেন, ‘সব জায়গায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সাইক্লোন শেল্টার থাকলেও আমাদের এই চরে নেই। অথচ আমরাই সবচেয়ে বেশি ঝুঁকির মধ্যে আছি।’ তিনি জানান, আগে দুটি স্কুলের সঙ্গে সাইক্লোন শেল্টার ভবন ছিল এবং একটি সরকারি বহুতল ভবনে শেল্টার ছিল। এক যুগ আগে এসব ভবন ভেঙে গেছে। এরপর আর কোনো বহুতল ভবন বা সাইক্লোন শেল্টার করা হয়নি।

৬ নম্বর ওয়ার্ডের শরীফ সওদাগর মার্কেটের পাশে জেলেপল্লীতে গিয়ে দেখা গেল, কয়েকজন জেলে জাল ঠিক করে নদীতে মাছ ধরার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তাঁদের পাশেই দুটি টিনশেড ঘর ভেঙে পড়েছে। ঘরের ওপর কয়েকটি গাছ। ৮ নম্বর ওয়ার্ডের মাহে আলমের ঘরের বেড়া ছাড়া নিচে আর কিছু নেই। মাহে আলমের স্ত্রী রহিমা বেগম মাটি দিয়ে ঘর ঠিক করছিলেন। তিনি বলেন, ‘বাঁইচা আছি এইডাই বড় কথা।’

দয়া করে শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরীর আরো খবর..