সাব্বির আলম বাবু (ভোলা ব্যুরো চিফ): , আপলোডের সময় : সোমবার, ৩১ অক্টোবর, ২০২২ , আজকের সময় : শুক্রবার, ২২ নভেম্বর, ২০২৪

নদী ভরা মাছ, ভোলার জেলে পল্লীতে আনন্দের বন্যা

রহিম মাঝি। ছোট্ট একটি নৌকা নিয়ে ঘাটে ফিরলেন। চোখে মুখে আনন্দরেখা। নৌকার খোন্দল (পাটাতনের নিচে মাছ রাখার স্থান) থেকে বের করছেন ছোট বড় বিভিন্ন আকারের ইলিশ এবং বেশ কয়েকটি পাঙ্গাস মাছ।
ভাগিদাররা মাছগুলো নিয়ে তুলছেন আড়ৎদারের গদিতে।

হাঁকডাক দিয়ে বিক্রি করা হচ্ছে সেই মাছ। অবশেষে দেখা গেল ৬০ হাজার টাকায় বিক্রি হয়েছে তার মাছ। গত রাতে নদীতে গিয়ে আজ ভোরে ফিরে এসে ৬০ হাজার টাকার মাছ বিক্রি করতে পেরে দারুন খুশি জেলে।

শুধু রহিম মাঝিই নন। প্রত্যেক জেলেই প্রত্যাশার চেয়ে অনেক বেশি মাছ পেয়েছেন। তাই খুশির বন্যা জেলে পল্লীতে। রবিবার ভোরে ভোলা সদর উপজেলার নাছির মাঝি মাছঘাটে গিয়ে এমন চিত্র দেখা যায়। একই চিত্র দেখা যায় ভোলার খাল মাছঘাটে গিয়ে। জেলেরা জানান, মেঘনা নদীতে প্রচুর মাছের দেখা মিলছে। জাল ফেললেই উঠে আসছে কাঙ্ক্ষিত ইলিশ, পাঙ্গাসসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ। জেলেরা জানান, মা ইলিশ রক্ষায় টানা ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা ছিল মেঘনা নদীতে। তাই তারা ৬ থেকে ২৮ অক্টোবর পর্যন্ত নদীতে নামতে পারেননি। আয়ের পথ বন্ধ ছিল। তবে সরকার ২০ কেজি করে চাল দিয়েছে। তা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম। তা ছাড়া জেলায় জেলে রয়েছেন প্রায় দুই লক্ষ। সরকারি হিসেবে নিবন্ধিত জেলে এক লক্ষ ৫৭ হাজার। চাল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে এক লক্ষ ৩২ হাজার জেলেকে। বাকিরা বঞ্চিত ছিলেন। তবে এখন নদীতে মাছ থাকায় সেই দুঃখ আর নেই তাদের মনে।

নাছির মাঝি মাছঘাটের আড়ৎদার আহসান কবির লিটন জানান, এবার মাছের মৌসুমে নদীতে মাছ ছিল না। কাঙ্ক্ষিত মাছ ধরতে না পারায় জেলে, আড়ৎদার, পাইকার সকলেই বিপাক পড়েছেন। সবাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। কিন্তু এখন খুশির খবর নদীতে প্রচুর মাছ আছে। জেলেদের জালেও ধরা পড়ছে। এরকম আরও কয়েকদিন মাছ পেলে সকলের ক্ষতি পুষিয়ে লাভের মুখ দেখবেন।

এদিকে এবারের নিষেধাজ্ঞা ৯৮ ভাগ সফল হয়েছে দাবি করে জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোল্লা এমদাদুল্যাহ জানান, নিষেধাজ্ঞা বাস্তবায়নে কঠোর পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। এবার নৌকাগুলো থেকে জাল নামিয়ে নৌকা গুলোকে নির্দিষ্ট স্থানে বেঁধে রাখতে বাধ্য করা হয়েছে। কোন নৌকা যাতে নদীতে পারে সে জন্য দিন রাত পাহারার ব্যবস্থা করা হয়েছে। তার পরও নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে নদীতে নামায় বৃহস্পতিবার পর্যন্ত মোট ৮৬ জন জেলেকে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে জেল, ১৫৫ জনের জরিমানা করা হয়েছে। পাশাপাশি ২ টন ইলিশ, এক কোটি ৬০ লাখ টাকার জাল জব্দ করে পুড়িয়ে ফেলা হয়েছে।
মৎস্য কর্মকর্তা আরও জানান, আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবছর অধিকাংশ মাছ ডিম ছাড়তে পেরেছে। তবে এখনো কিছু কিছু মাছের পেটে ডিম আছে। নিষেধাজ্ঞা আরও ৫-৭ দিন থাকলে ভাল হত। সকল মাছ ডিম ছাড়ার সুযোগ পেত। তিনি আরও জানান, চলতি মৌসুমে ইলিশ আহরণের লক্ষমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে এক লক্ষ ৯২ হাজার মেট্রিকটন। আশা করা হচ্ছে লক্ষমাত্রার চেয়ে অনেক বেশি ইলিশ আহরণে করতে সক্ষম হবেন জেলেরা।