১৯৭১ সালের ১০ ডিসেম্বর ভোলা পাকিস্তানি হানাদারদের হাত থেকে মুক্ত হয়। মুক্তিযোদ্ধাদের প্রবল চাপের মুখে পাকিস্তানি বাহিনী কোণঠাসা হয়ে পড়ে। নিজেদের জীবন বাঁচাতে ১০ ডিসেম্বর হানাদার বাহিনী কার্গো লঞ্চে করে ভোলা থেকে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়। তাদের চলে যাওয়ার পর সম্পূর্ণরূপে হানাদার মুক্ত হয় ভোলা জেলা।
হানাদার বাহিনী পালিয়ে যাওয়ার পর ১০ ডিসেম্বর বর্তমান ভোলা কালেক্টরেট ভবনের সামনের জেলা হিসাবরক্ষণ অফিসের ছাদে পতাকা উড়িয়ে ভোলাকে হানাদার মুক্ত ঘোষণা করেন মুক্তিযোদ্ধারা। তাদের চলে যাওয়ার পর ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা মুক্তিযোদ্ধারা আশপাশ থেকে শহরে ঢোকে।
শহরের ওয়াপদা, পাওয়ার হাউস ও জেলা সরকারি বালক বিদ্যালয়সহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে ক্যাম্প স্থাপন করে শুরু হয় আনন্দ মিছিল। ১৯৭১ সালের এই দিন দীর্ঘ ৯ মাসের সশস্ত্র সংগ্রাম ও যুদ্ধের পর হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসররা ভোলার মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতিরোধের মুখে পালিয়ে যায়। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন ভোলা শহরের পানি উন্নয়ন বোর্ড অফিস চত্বর দখল করে, হানাদার বাহিনী ক্যাম্প বসায়। সেখান থেকেই একের পর এক অমানবিক কর্মকাণ্ড চালায়।
মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিকামী নিরীহ মানুষকে ধরে এনে হত্যা করাসহ লাশগুলো সেখানেই দাফন করা হয়। এছাড়াও ভোলার খেয়াঘাট এলাকায় মুক্তিযোদ্ধাদের ধরে এনে হত্যা করে তেঁতুলিয়া নদীতে ফেলে দেওয়া হয়। মুক্তিযোদ্ধা ও সাধারণ মানুষের রক্তে রঞ্জিত হয় তেঁতুলিয়া নদীর পানি। বহু নারীকে ক্যাম্পে ধরে এনে রাতভর নির্যাতনের পর লাইনে দাঁড় করিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করে। ওই সময় হানাদার বাহিনী অগণিত মানুষকে হত্যা করে। মুক্তিযোদ্ধাদের দাফন ছাড়াই গণকবর দেওয়া হয়। মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে হানাদার বাহিনীর সম্মুখ যুদ্ধ হয় ভোলার ঘুইংঘারহাট, দৌলতখান, বাংলাবাজার, বোরহানউদ্দিনের দেউলা ও চরফ্যাশন বাজারে। ওই যুদ্ধে শতাধিক মুক্তিযোদ্ধা শাহাদাত বরণ করেন। পাশাপাশি বহু হানাদারও মারা যায়। ১৬ ডিসেম্বর সারা দেশ স্বাধীন হলেও ভোলা স্বাধীন হয় ১০ ডিসেম্বর।
ভোলা মুক্ত দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, ভোলা জেলা প্রশাসক ও বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থাসহ সামাজিক অঙ্গ সংগঠন র্যালি, আলোচনা সভা ও বিভিন্ন কর্মসূচির আয়োজন করেছে।