মঙ্গলবার, ২৩ জুলাই ২০২৪, ১০:৩১ পূর্বাহ্ন
শিরোনামঃ
সড়ক ও জনপথ কর্মকর্তার ব্যাংকে শত কোটি টাকার লেনদেন হরিরামপুরে ৪ ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা অনিয়ম-দুর্নীতির মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা অর্জনের অভিযোগ ডিপিএইচই’র প্রাক্কলনিক আনোয়ারের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের উন্নয়নে চীনের সমর্থন অব্যাহত রাখার আশ্বাস দিলেন শি জিনপিং বেনজীর-মতিউর-এর কুশপুতুল দাহ করায় হুমকি : উদ্বেগ প্রকাশ কোটা সমস্যার সমাধান করার দাবি জাতীয় শিক্ষাধারার হরিরামপুরে পদ্মা তীর রক্ষা বাঁধে ধস, জনমনে আতংক মুরাদনগর শ্রীকাইলে ক্যাপ্টেন নরেন্দ্রনাথ দত্ত স্মৃতি ফুটবল টুর্নামেন্টের ফাইনালে হুরোয়া চ্যাম্পিয়ন তাড়াইলের কথিত পীর লুৎফর রহমানের বিরুদ্ধে ইউএনও বরাবর লিখিত অভিযোগ বর্ষার পানি বৃদ্ধির সঙ্গে বাড়ছে নৌকার চাহিদা

ভোলায় বীরশ্রেষ্ঠ মোস্তফা কামাল স্মৃতি জাদুঘর নিজেই স্মৃতি হতে চলেছে

সাব্বির আলম বাবু (ভোলা ব্যুরো চিফ):
  • আপলোডের সময় : রবিবার, ১১ ডিসেম্বর, ২০২২
  • ৬০১৫ বার পঠিত

ভোলার দৌলতখান উপজেলার হাজিপুর ইউনিয়নের পশ্চিম হাজিপুর গ্রামের ছেলে মোহাম্মদ মোস্তফা কামাল। যিনি মহান মুক্তিযুদ্ধে অসামান্য অবদান রাখায় লাভ করেছেন মুক্তিযুদ্ধের সর্বোচ্চ খেতাব ‘বীরশ্রেষ্ঠ’।

দেশের ৭ বীরশ্রেষ্ঠের মধ্যে তিনি একজন ও অন্যতম। তাঁর প্রতি সম্মান জানিয়ে বাংলাদেশ সরকার জেলা পরিষদের মাধ্যমের ২০০৮ সালের ৩ মে তাঁর বর্তমান বাড়ীর সামনের স্কুল ক্যাম্পাসে একটি গ্রন্থাগার ও স্মৃতি জাদুঘর নির্মাণ করেন। জাদুঘরটি ভোলার অন্যতম একটি দর্শনীয় স্থান হিসেবেও স্বীকৃতি লাভ করেছে। কিন্তু তা রক্ষণা-বেক্ষণ করার জন্য যে পরিমান জনবল থাকার কথা, তা না থাকায় প্রতিষ্ঠানটিকে সঠিকভাবে সুচারু রুপে পরিচালনা করা যাচ্ছে না।

এছাড়া শহর থেকে দূরে হওয়ায় পাঠকদের তেমন কোন কাজেই আসছে না। সরকার যে উদ্দেশ্য নিয়ে এই গ্রন্থাগারটি নির্মাণ করেছে সেটিও ভেস্তে যাওয়ার উপক্রম দেখা দিয়েছে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে এবং মাননীয় উপদেষ্টা মো. আনোয়ারুল ইবকাল বি.পি.এম (বার) পি.পি.এম এর উদ্যোগে ২০০৮ সালের ৩ মে ভোলা সদর উপজেলার আলীনগর ইউনিয়নের মৌটুপী বর্তমানে (মোস্তফা কামাল নগর) গ্রামে বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ সিপাহী মোহাম্মদ মোস্তফা গ্রন্থাগার ও স্মৃতি জাদুঘরটি নির্মাণ করা হয়। ভবনটির উদ্বোধন করেন মুক্তিযুদ্ধের ৩নং সেক্টর কমান্ডার মেজর জেনারেল (অবঃ) কে এম সফিউল্লাহ বীর উত্তম। সূত্রে আরো জানা যায়, গ্রন্থাগারটিতে প্রায় ২ হাজারেরও বেশী বই রয়েছে। রয়েছে পাঠকদের জন্য পড়ার সু-ব্যবস্থা। তবে সেই পরিমানে পাঠক নেই, রয়েছে যথসামাস্য পাঠক। এর মুল কারণ হচ্ছে, জেলা শহর থেকে ৩ থেকে ৪ কিলোমিটার দুরে তার অবস্থান। যদি এটি শহরের কাছাকাছি হতো, তাহলে পাঠকরা তাদের ইচ্ছেমত জ্ঞানের পিপাসা মিটাতে পারতো। এখানে রয়েছে বীরশ্রেষ্ঠ মোস্তফা কামালের স্মৃতি মাখা ইতিহাস। রয়েছে তাঁর ব্যবহৃত পোষাক, খাবার প্লেট, ক্রেষ্ট ও প্রাপ্ত মেডেলগুলো। এ যোদ্ধার ইতিহাস ও ঐতিহ্য ও আত্মজীবনী মূলক বইসহ দেশী-বিদেশী বইয়ের বিশাল সমাহার। চমৎকার কারুকাজ সমৃদ্ধ কনক্রিটের এ সুরম্য ভবন কোন কাজেই আসছে না জ্ঞান পিপাসু শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের।

ভোলা সরকারী কলেজের শিক্ষার্থী মোঃ হারুনুর রশিদ, হাসিব, শিশির ও আব্দুর রহমান বলেন, শহরের আলীনগরে বীরশ্রেষ্ঠ মোস্তফা কামাল জাদুঘর আছে জানি, কিন্তু প্রতিনিয়ত এসে দেখার সুযোগ পাই না। কারণ জেলা শহর থেকে প্রায় ৩ থেকে ৪ কিলোমিটার দূরের পথ। যাওয়া আসায় খরচ প্রায় ৪০ থেকে ৫০ টাকার মত। যার কারণে কোন শিক্ষার্থী-ই সাধারণত সেখানে জ্ঞান পিপাসা মিটাতে যেতে চায় না। যদি এটি শহরের কাছাকাছি থাকত, তাহলে অনেক শিক্ষার্থীই বিকেলে অবসর সময়ে সেখানে নানান ধরনের বই পড়তে যেত। ভোলা শহরে এত জায়গা থাকা সত্ত্বেও কেন আলীনগরের মত একটা নির্জন স্থানে এটা নির্মাণ করা হয়েছে এমন প্রশ্ন সকলের। তবে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন তাঁর গ্রামকে বিখ্যাত ও পরিচিত করার জন্যই এটি সেখানে নির্মাণ করা হয়েছে। গ্রন্থাগারটি দেখতে আসা নুসরাত জাহান মৌ, সাদিয়া হক মৌরি, ফয়েজ, মাকসুদ ও তৌহিদ নামের অপর কয়েকজন শিক্ষার্থীর সাথে আলাপ করলে তারা জানান, ভোলায় ভালো মানের কোন গ্রন্থাগর নেই বললেই চলে। গ্রন্থাগার ও স্মৃতি জাদুঘরটি যদি শহরের মধ্যে থাকত, তাহলে এটাকে জ্ঞান-বিজ্ঞানের মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করতে পারতাম। এতে করে আমাদের জ্ঞানের চর্চাও হতো এবং ভালো কাজে সময়টাও কেটে যেত। এছাড়া ভোলার তরুণ প্রজন্ম দেশ ও দেশের শ্রেষ্ঠ বাঙ্গালীদের জীবন আদর্শ সম্পর্কে জানতে পারতো। দেশের প্রয়োজনে নিজেকে উৎসর্গ করার প্রেরণা লাভ করতো।

আগামী প্রজন্মের কাছে মোস্তফা কামালের পরিচয় তুলে ধরার লক্ষ্যে ভোলা শহরে গ্রন্থাগার ও স্মৃতি জাদুঘর নিমার্ণ করা হলে এটা আরো বেশী কার্যকর তহো বলে মনে করেন সরকারী প্রাইমারী স্কুলের শিক্ষক মোঃ হারুন, হান্নান ও মোস্তাফিজসহ একাধিক ব্যক্তি। কারণ সম্পর্কে তারা বলেন, মোস্তফা কামাল ভোলার গর্ব। তিনি আমাদের প্রেরণা। দেশ ও জাতি আজীবন তাকে স্মরণ করবে।

অন্যদিকে, এই গ্রন্থাগারটি পরিচালনার জন্য ৪ জন লোক প্রয়োজন। সেখানে রয়েছে মাত্র ২ জন। একজন লাইব্রেরিয়ান, অন্যজন কেয়ারটেকার। সেই ঝাড়ৃদার ও মালি। গ্রন্থাগার ও স্মৃতি জাদুঘরের লাইব্রেরীয়ান মোঃ সেলিম এর সাথে কথা হলে তিনি বলেন, “গ্রন্থাগারটি শহর থেকে ৩-৪ কিলোমিটার দূরে হওয়ায় এখানে তেমন কোন পাঠক আসেন না। তবে স্থানীয় প্রাইমারী, হাই স্কুল ও কলেজ চলাকালীন সময়ে কিছু পাঠক দেখা যায়। এছাড়া মাঝে মধ্যে শহর থেকে দু-চারজন দর্শনার্থী দেখতে আসেন একটাকে।” তিনি আরো বলেন, “আমরা এখানে ২০০৮ সাল থেকে কর্মরত আছি। জেলা পরিষদেও মাধ্যমে অস্থায়ীভাবে এটি পরিচালিত হচ্ছে। কিন্তু সরকার এখনও এই প্রতিষ্ঠানটিতে যারা কর্মরত আছেন তাদেরকে স্থায়ী করা হয়নি। কবে নাগাদ চাকুরী স্থায়ী হবে তাও বলতে পারছেন না তিনি।”

সরকারের কাছে দ্রুত চাকুরী স্থায়ী করার দাবী জানিয়েছেন তিনি। বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ সিপাহী মোহাম্মদ মোস্তফা কামাল গ্রন্থাগার ও স্মৃতি জাদুঘরে যথেষ্ঠ পরিমানে পাঠক না থাকার কারণ জানতে জেলা পরিষদ সূত্রে জানা যায়, এটি শহর থেকে একটু দূরে হওয়ায় পাঠক সংখ্যা কম। গ্রন্থাগারটি যখন প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল, তখন যদি শহরের কাছা-কাছি করা হতো তাহলে প্রচুর পরিমানে পাঠক পাওয়া যেত।

দয়া করে শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরীর আরো খবর..