এস.এম আক্তারুজ্জামান: ডেপুটি ইন্সপেক্টর জেনারেল অব পুলিশ (ডিআইজি) , আপলোডের সময় : মঙ্গলবার, ১৩ ডিসেম্বর, ২০২২ , আজকের সময় : শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪

সাশ্রয়ী ভাবনা: এস এম আক্তারুজ্জামান, ডিআইজি বরিশাল রেঞ্জ

সাশ্রয়ী ভাবনা:
সাশ্রয়ী বা অপচয়রোধ ফুটানি বা বড়লোকি অর্থনীতির শত্রু। তাই, বড়লোকি অর্থনীতির ধারক এবং বাহকদের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে ভাবনা শুরু করছি।
মহান বিজয়ের মাসে প্রথমেই শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাংগালী জাতির জনক শেখ মুজিবুর রহমানকে যার ভিশন এবং সংগ্রামের ফসল আমাদের বাংলাদেশ এবং বংগমাতাকে যিনি প্রতিটি পয়সা সাশ্রয় করে জাতির পিতার হাতে তুলে দিতেন।
তারপরেই স্মরণ করছি সেই পিতামাতাদের যাদের সাশ্রয়ে, সঞ্চয়ে এবং ত্যাগে গড়া এই দেশের আর্থ-সামাজিক ভিত্তি এবং আমাদের গড়ে উঠা।
ক্রেডিট বা ডেফিসিট বাজেটের যুগে সাশ্রয় বা সঞ্চয় নিয়ে ভাবা মহাভারত অশুদ্ধ করার বিষয়। তবে, এটা বলে রাখা ভাল যে ডেবিট বা সঞ্চয় অর্থনীতির পর্ব পার করেই এসেছে ক্রেডিট বা ঘাটতি বাজেট যুগ।প্রাথমিক বিদ্যালয় পার হয়েই মাধ্যমিকে আসতে হয়। এটাই নিয়ম। তবে ব্যাতিক্রম আছে। সবাইতো আর আইজাক আইনস্টাইন নয়। অর্থনীতির ভিত্তি তৈরি হয় সঞ্চয় বা সাশ্রয় দিয়েই। যেমনটা শিশুরা হাটা শিখে মায়ের হাত ধরে।
অর্থনীতিতে কামাই করে খরচা করতে হয় আবার কিছুটা জমাও করতে হয়। অর্থনৈতিতে চড়া এবং মন্দা আছে, যদিও আধুনিক অর্থনীতিতে শুধু চড়া বা স্টেডি স্টেট গ্রোথ বা অবিচলিত বৃদ্ধি’কে লালন করা হয়। এর মুলে রয়েছে বিনিয়োগ এবং প্রযুক্তির ক্রমাগত উদ্ভাবন এবং ব্যাবহার। সাথে আছে কর্জ করে ঘি খাওয়া এবং ব্যাবসা করার ফতোয়া।
তাহলে বলতে পারেন, এই সাত সকালে কেন সাশ্রয় বা কিপ্টামি নিয়ে ভাবছি। ভাবতে চাই নাই, ভাবতে বাধ্য হয়েছি। আমি ক্রেডিট অর্থনীতির বিরুদ্ধে নই, বা কর্জ করে ঘি খাওয়ার বিরুদ্ধে নই। প্রয়োজন হলে ঘি, কস্তুরি খাবেন, কর্জ করবেন আপত্তি নাই, তবে পরে শোধ দিয়ে দিবেন। অপচয় মানে যেটা প্রয়োজন নেই বা ক্ষতিকর অথবা যেটা পরিহার সময়ের দাবি।
গত ৮মাস যাবত যুদ্ধ শুরু হইছে রাশিয়া এবং ইউক্রেনে। পৃথিবীর সেরা দুটি খাদ্য, খনিজ এবং ফুয়েল সরবরাহকারি দেশ ব্যাস্ত হয়ে পড়েছে অস্র বানানো, ঠেকানো, কেনা এবং পরীক্ষা নিয়ে। কুটনৈতিক বিষয় তাই বেশি বাড়লামনা। এই নিয়ে আরোপ হয়েছে নানান ধরনের সেংশন বা অবরোধ। বাজারে টাকা বা মুদ্রা আছে কিন্তু পণ্য নেই, তাই বেড়ে গেছে মুদ্রাস্ফীতি।মানুষের কষ্ট বেড়ে যাচ্ছে।
আমাদের হয়েছে আরোও বিপদ, শাখের করাতের মত। আমরা চলি আমদানি-রপ্তানী দিয়ে, যার মূলে রয়েছে ডলার। আমেরিকা ডলার সরবরাহ কমাতে সুদের হার বাড়িয়ে দিয়েছে, ডলারের দাম বেড়ে গিয়েছে। আমাদের আমিদানি করতে বেশি টাকা খরচ করতে হয়, অন্যদিকে রপ্তানি করে কম ডলার পাই। দুই দিকের চাপে সেন্ডুইচ। তাই ডলারের দাম বাড়ছে। এদিকে অনেকে ফিসফিস করছে, অতি বুদ্ধিমান লোকেরা জমি কেনার পাশাপাশি ডলার কেনাতে আগ্রহী হয়ে উঠছে। কাচা মজুতদারী ব্যবসা।
তাই, ডলার সঞ্চয় বা অতি চাহিত দ্রব্য ব্যাবহারে সাশ্রয়ী হওয়া বা কৃচ্ছতা সাধন করা আমাদের জাতীয় কর্তব্য। তবে যে সব পন্য বা সেবা দেশেই তৈরি হয় তাতে সাশ্রয়ী হওয়ার পরিবর্তে অপচয় করাও যায়: যেমন দেশি কলা, আমড়া, সফেদা খাওয়া, প্রেম-ভালবাসা করা, সাইকেল, রিক্সা চড়া ইত্যাদি।
তবে আমদানি করা ভোগ্য পণ্য যেমন তেল, গ্যাস, গাড়ি, এসি, ব্লেজার, আসবাবপত্র কেনা এবং ব্যাবহার করতে সাশ্রয়ী হওয়া জরুরি।সরকারেই পক্ষ থেকে বলা হয়েছে ফুয়েল এবং বিদ্যুৎ খাতে সাশ্রয়ী হতে। আমি নিজেই একটু কিপ্টে বা সাশ্রয়ী। তার উপর আবার জাতীয় এবং সরকারি নির্দেশ।
এসি বন্ধ রাখি অথবা ২৫/২৬ এ চালাই। খাবারে আইটেম কমিয়ে দিয়েছি আগেই। অনেকে বলছেন আমি নাকি জিরো থেকে মাইনাস ফিগারে চলে যাচ্ছি। না এটা সাশ্রয়ের কারনে নয়, খাবার কম বা বাতাস খেয়েও অনেকে মোটা হয়। এক ভাবি দাবি করেছেন, “ভাই শুধু খেয়েই যায়, মোটা হয়না, আর ভাবি না খেয়েই মোটা হয়”
শীতের সকালে গরম পানি দিয়ে গোসল করা অনেকটা অভ্যাস হয়ে গিয়েছে। অনেক হট বন্ধুরা Ashish Kumar Banik [1], Ruhul Amin Shiper, m m M M Zaman [2] উনারা অবশ্য বরিশালের পোলা, সকালে শীতল পানিতে গোসল বেশ উপভোগ করেন। শুনেছি বাসায় বরফ-টুকরা সরবরাহকারি ফ্রীজ নাকি উনারা সেট করেছেন।
বাথরুমে গিজার আছে, টিপ দিলেই উনি কাজ শুরু করেন। বাট কখন টিপ দিব সেটা চিন্তার বিষয়। ৫/৭ মিনিটে পানি গরম হয়। কিন্তু, অনেক সময় দেখা যায়, গিজার টিপেছি বাট হাটতে বা ফোন ধরতে গিয়ে গিজার বেশি সময় ধরে চালু থাকে যদিও গিজারে থার্মোস্টেট সিস্টেম থাকে। তাই, বাসার অর্ডারলিকে বলেছি হাটা শেষ করার ৫ মিনিট আগে গিজার চালু দিতে। সে আবার বকা সাশ্রয়ী, যাতে তার দোষ ধরতে না পারি, তাই সে কিছুটা আগেই গিজার অন করে রাখে।
আমার গিজারটি ৫০লিটার ক্যাপাসিটির, ২০০০ ওয়াটের। গোসল করতে কত লিটার পানি দরকার? ২০/৩০ লিটার পানিই যথেষ্ঠ।কিন্তু গিজারে তো এটা সম্ভব না। বিদ্যুৎ অপচয় হয় গিজারে। তাই, ৩ লিটার, ৫০০ ওয়াট কেটলি কিনে নিয়ে আসি। সেটা ২/৩ মিনিটে পানি গরম হয়ে যায়। ৩লিটার ৯০ডিগ্রি উত্তপ্ত পানিতে ১৫/২০ ডিগ্রি শীতল ১৫লিটার পানি যোগ করে অনায়াসেই গোসল সেরে নেয়া যায়। দাত ব্রাশ, সেভ করতেই এই কাজ করা যায়।
বিঘ্ন ঘটেছে অন্য যায়গায়। আজকে যেতে হবে বরগুনায়, ১০টায় প্রোগ্রাম আছে ওখানে। সকাল ৮টায় রওয়ানা দিতে হবে। গোসল করতে হবে ৭:৩০’এ। একটু বেশি শীতল ছিল পানি। আর শেভিং করতে বেশি সময় লেগেছে, ট্যাপ অতিরিক্ত ঠান্ডা পানি যোগ করেছে। বালতির পানি খানিকটা ঠান্ডা হয়ে গিয়েছিল। গায়ে ঠান্ডা পানি ঢালতেই বেশ রোমান্টিক শীতের শিহরণ উপভোগ করে রওয়ানা দিলাম বরগুনায়। সারদা’র গোসলের টেষ্ট পেলাম।
মন খারাপ। বরিশালের বাবুগঞ্জে একটি দুর্ধর্ষ ডাকাতি হয়েছে। খোজ খবর নিলাম, প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিলাম।সবাই সতর্ক থাকবেন। সাশ্রয়ী হবেন। রাত জেগে ফুটবল খেলা দেখে ঘুমিয়ে যাবেন, ভাল কথা তবে বাড়ি ঘর অরক্ষিত রাখবেন না, এতে চোর-ডাকাত বাড়তি সুযোগ পেয়ে যাবে। আর মুরুব্বিরা তাহাজ্জুত নামাজ পড়বেন। তাহাজ্জুত আপনাকে শ্রষ্টার প্রিয়পাত্র করবে এবং আমরা পাব নিরাপত্তা এবং কল্যান।