কিশোরগঞ্জের তাড়াইলে কোনো প্রকার নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করেই ভাঙা হচ্ছে পুরাতন ব্যাটারি, আর এ ব্যাটারি পুড়িয়েই তৈরি হচ্ছে সিসা। ব্যাটারির অ্যাসিডের তীব্র গন্ধে ভারী হয়ে ওঠছে আশপাশের এলাকা। এতে মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকিতে আছেন আশপাশের মানুষ ও গবাদিপশু। দূষিত হচ্ছে নদীসহ পরিবেশ। এসব বর্জ্য যাচ্ছে আবাদি জমিতেও।
সরেজমিনে দেখা যায়, গাইবান্ধা থেকে এসে স্হানীয় একটি শক্তির প্রভাব কাটিয়ে তাড়াইল উপজেলার জাওয়ার ইউনিয়নের পূূর্ব জাওয়ার হিজলজানী বিলের পাশেই টিন দিয়ে চারদিক ঘিরে তৈরি করেছে সিসার কারখানা। সারি সারি পুরাতন ব্যাটারি রাখা হয়েছে স্তূপ করে। দিনের আলোয় মাস্কবিহীন শ্রমিকরা ব্যাটারি ভাঙার কাজ করলেও রাতে বেশ কয়েকটি বড় চুল্লিতে ভাঙারি পুড়িয়ে তৈরি করা হয় সিসা।
বিষাক্ত সালফিউরিক অ্যাসিডসহ ব্যাটারির ময়লা আবর্জনা ফেলা হচ্ছে যত্রতত্র। লোহার মোটা ছুরির সাহায্যে আলাদা করা হচ্ছে প্লাস্টিক ও সীসা। এভাবেই অবাধে চলছে কারখানায় সিসা তৈরির কাজ। ফলে জলাশয়, আবাদি জমিতে বিষাক্ততা ছড়িয়ে পড়ছে। এ থেকে সিসা যাচ্ছে মানবদেহে। ধোঁয়া থেকে আশপাশের গ্রামের কোমলমতি শিক্ষার্থীদের মাঝে বাসা বাঁধছে শ্বাসকষ্টসহ নানা রোগের। ফলে বিদ্যালয়গুলোতে কমছে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতির হার।
এ বিষয়ে উপজেলার সচেতন মহল বলেন, এসব সীসা এবং অ্যাসিড জলাশয়ে গিয়ে মাছসহ প্রাণিজ ধ্বংস করছে। পাশাপাশি আবাদিজমি, জলাশয়ে মিশছে সিসা ও অ্যাসিডের পানি। ফলে ফসলি জমির উর্বরতা নষ্ট হচ্ছে। ক্ষতি হচ্ছে মানবদেহের।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, জাওয়ার ইউনিয়নের হিজলজানী বিলের পাশের অবৈধ সিসা কারখানা ছাড়াও ইতিপূর্বে রাউতি ইউনিয়নের মেছগাঁঁও গ্রামেও গড়ে তুলেছিল অবৈধ সিসা কারখানা। সেখানে ব্যাটারী পুড়ার অ্যাসিডের তীব্র গন্ধে ৭টি গরুর মৃত্যু হয়েছিল। মেছগাও গ্রামবাসী উত্তেজিত হলে রাতের আঁধারে সব গুটিয়ে পালিয়ে যায়।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার-পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মোহাম্মদ আলমাস হোসাইন জানান, সিসার মাধ্যমে যে বায়ুদূষণ হয়, এটি দিন দিন প্রকট আকার ধারণ করছে। এর বিরূপ প্রতিক্রিয়া মানুষের ব্রেইনের নারভাস সিস্টেমের ক্ষতি হচ্ছে। কিডনিতে বিভিন্ন রোগের সৃষ্টি করে এটি। বাতাসে অক্সিজেন কমে যাচ্ছে। অক্সিজেন ক্যারিং ক্যাপাসিটি কমে যায়। ফলে মানুষের শ্বাসকষ্টজনিত রোগ বাড়ছে। এই বায়ুদূষণ বাড়ন্ত শিশুদের ব্রেইনের হেম্পার করে। আর এসব কারণে প্রতিনিয়ত অক্সিজেন লেভেল কমে যাচ্ছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা লুবনা শারমিন বলেন, সিসা তৈরির কারখানার অভিযোগ পেয়েছি। রাতের আঁধারে এমন কর্মযজ্ঞ হয়। অতিদ্রুত অভিযান পরিচালনার করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
Print [1]