এনামুল হক রাঙ্গা (বগুড়া প্রতিনিধি): , আপলোডের সময় : রবিবার, ২৬ ফেব্রুয়ারী, ২০২৩ , আজকের সময় : শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪

বগুড়ায় কাঁচাবাজারে দাম বৃদ্ধি লাল মরিচে আগুন!

বগুড়ায় একশ গ্রাম শুকনো মরিচ কিনতে ৬০ টাকা গুনতে হচ্ছে ক্রেতাদের। বগুড়ায় চাষ হওয়া লাল মরিচ বগুড়ার মানুষকে এত টাকা দিয়ে কিনতে হচ্ছে। আক্ষেপ নিয়ে এ কথা বলছেন শহরের ফতেহ আলী বাজারে কাঁচাবাজার কেনাকাটা করতে আসা আমিনুর রহমান।

বগুড়া শহরের খুচরা বাজারে কাঁচা মরিচ বিক্রি হচ্ছে সর্বোচ্চ ১৬০ টাকা কেজি দরে। আর শুকনো মরিচ ৬০০ টাকায় কেজিতে বিক্রি হচ্ছে । দামের এমন পরিস্থিতি নিয়ে কোনো ধারণা নেই ক্রেতাদের, শুধু আছে আক্ষেপ। শুধু মরিচের বাজার যে গরম তা নয়। বাজারের প্রায় সব পণ্যের উর্দ্ধমুখী দামে হিমশিম খাচ্ছে সব শ্রেণির ভোক্তারা। গতকাল ছুটির দিনে বগুড়ার কয়েকটি বাজার সরেজমিনে গিয়ে এমন পরিস্থিতি দেখা যায়।

চকসুত্রাপুরের বাসিন্দা ও বেসরকারি চাকরিজীবী শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘আমি তো দূরেই থাকলাম, বাবা-মা বলছিলেন শুকনো মরিচের এত দাম কখনও তারা দেখেননি। শুধু শুকনো মরিচেই নয় দাম বাড়ছে কাঁচা মরিচেও।

গত শুক্রবার বাসার সামনে থেকে ভ্যানের ওপর থেকে কাঁচা মরিচ ক্রয় করেন শহরের ঠনঠনিয়া  এলাকার গৃহিণী মুন্নী আক্তার। তিনি জানান, এক পোয়া কাচাঁমরিচ কিনেছি ৪০ টাকা দিয়ে। গত কয়েক সপ্তাহ ধরেই এমন দাম দেখছি। বাজারে গেলে হয়তো হয়তো ৫ টাকা কম পেতাম। কিন্তু শুধু মরিচ নিতে বাজারে যাওয়া কী আর সম্ভব হয়। তাই আমাদের মতো গৃহিণীর জন্য ভ্যানে করে বিক্রি করতে আসা দোকানীরাই একমাত্র ভরসা।

অপরদিকে পাইকারি ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত বছরের ডিসেম্বরের শেষের দিকে শৈত্যপ্রবাহ দেখা দেয়। সেই সময় বাজারে মরিচের আমদানি কমে যায়। ফলে দামও বাড়তে থাকে। এখনকার বাজারে পাইকারি  প্রতিকেজি শুকনো মরিচ তারা বিক্রি করছেন ৪৫০-৫০০ টাকা। কাঁচামরিচ বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ১২০-১৪০ টাকা।

বগুড়া শহরের রাজা বাজারের শুকনো মরিচের পাইকারি ব্যবসায়ী আব্দুল  আলীম বলেন, বাজারে কাঁচা মরিচের দাম অনেক বেশি। এ কারণে কৃষকরা মরিচ শুকাচ্ছেন না। তারা মাঠ থেকেই কাঁচা মরিচ বিক্রি করে দিচ্ছেন। শুকনো মরিচের চেয়ে কাঁচাতেই তারা  বেশি লাভবান হচ্ছে, যার কারনে  আমরাও দেশি শুকনো মরিচ পাচ্ছি না।

একই বাজারের আরেক পাইকারী ব্যবসায়ী ওসমান আলী  বলেন , এখন মরিচের আমদানি কম। এই কারণে দামের উর্দ্ধমুখী বেড়েই চলেছে।

কৃষক পর্যায়ে খোঁজ নিয়ে মরিচের এমন পরিস্থিতি জানা যায়। কৃষক ও মরিচ ব্যবসায়ী বগুড়ার সারিয়াকান্দির কালিতলার মোহাম্মদ ওমর ফারুক গত এক যুগেও এমন দামে মরিচ বিক্রি করতে পারেন নি । তিনি জানান, এখন লাল বা শুকনো  মরিচের ভরা মৌসুম। এই সময়ে শুকনো মরিচের দাম প্রকারভেদে পাইকারিতে প্রায় ১৬ হাজার থেকে ১৮ হাজার টাকা  মণ। অথচ গত বছর একই সময়ে এই দাম ছিল সর্বোচ্চ ৭ হাজার টাকা। এবার কাঁচা মরিচেরও দাম বেশি। মাঠ থেকেই বিক্রি হচ্ছে প্রতি মণ তিন হাজার টাকা।

মরিচ চাষী আব্দুল করিম  বলেন, ‘৫ মণ মরিচ শুকিয়ে হয় এক মণ। এতে সময় ও শ্রম দুটোই  লাগে। কোন কৃষক আর কষ্ট করবে? একারনে  তারা মাঠেই কাঁচা মরিচ বিক্রি করছেন।

শুধু মরিচ নয় বগুড়ার বাজারে অন্য পণ্যের দামও উর্দ্ধমূখী। এর মধ্যে শীতকালীন সবজির দাম বেশি হলেও অনেকদিন ধরে তা স্থির আছে। অস্থির বাজার দেখা গেছে মুরগি ও ডিমের। হঠাৎ করেই এসবের দাম বেড়েছে। ক্রেতাদের ভাষায়, বাজারে এলে পকেট শূণ্য হওয়া ছাড়া উপায় নেই।

খুচরা বাজারে প্রতি কেজি আলু ৩০-৪০ টাকা, পেঁয়াজ ৩৫, আদা ১২০, রসুন ১৬০, বেগুন ৫০, মিষ্টি কুমড়া ৪০, টমেটো ও গাজর ৩০, ফুলকপি ও বাঁধাকপি ২০, শিম ৪০-৬০ ও মটরশুটি ৮০ টাকা।

এছাড়াও বগুড়ার বাজারে ব্রয়লার মুরগি প্রতি কেজি ২২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর সোনালী ও লেয়ার মুরগি বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ২৯০ থেকে ৩২০ টাকা। মুরগির ডিম প্রতি হালি ৩ টাকা বেড়ে হয়েছে ৪৮ টাকা। হাঁসের ডিম বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকায় হালিতে।

শহরের অদুরে কলোনী বাজারে আসা শাহাদাৎ  ইসলাম নামে এক ক্রেতা বলেন, এখন বাজারে আসতে একটু ভয় করে। দাম বৃদ্ধিতে আমাদের নাভিশ্বাস উঠেছে। খাওয়া লাগে তাই বাজারে আসতে হয়।

মুরগির দাম বাড়ার কারণ সম্পর্কে কলোনী বাজারের ব্যবসায়ী লিমন জানান, পোল্ট্রি খাদ্যের দাম বাড়ছে। তাই আমরা বেশি দামে মুরগি কিনছি, বেচতেও হচ্ছে বেশি দামে। আবারর শুনছি এই দাম আরও বাড়তে পারে।

রাজাবাজার আড়তদার ব্যবসায়ী মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক পরিমল প্রসাদ রাজ বলেন, আমদানি কম থাকায় নিত্য প্রয়োজনীয় পন্যের যোগান কমেছে। ফলে সব কিছুরই দাম বাড়ছে। মরিচেরও একই অবস্থা। জেলায় মাসে অন্তত ৬০ টন শুকনো মরিচ কেনাবেচা হয়। কিন্তু ভারত থেকে শুকনো মরিচ আমদানি কমে গেছে। এ কারণে দেশীয় মরিচের ওপর চাপ বেশি।

দ্রব্যমূল্যের ওঠানামায় ক্রেতাদের দুরাবস্থার পাশাপাশি বিক্রেতারা বেশ সংকটে আছে বলে জানান এই ব্যবসায়ী নেতা।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিপ্তরের তথ্যমতে, বন্যার কারণে বগুড়ায় মরিচ চাষে লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়নি। ৭ হাজার ১০০ হেক্টর লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে আবাদ হয়েছে ৫ হাজার ৬৫০ হেক্টর জমি। শুকনো মরিচ আকারে এতে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় প্রায় ১৮ হাজার ৬০০ মেট্রিক টন।

দপ্তরটির উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা ফরিদুর রহমান জানান, গত বছর বর্ষা মৌসুমের শেষের দিকে হয়ে যাওয়া বন্যায় বেশ কিছু ফসল নষ্ট হয়। এর মধ্যে মরিচ একটি। পরবর্তীতে কৃষক সেই জমিতে অন্য ফসল করে। কিন্তু মরিচের আবাদ কমে যায়। যার ফলে বাজারে মরিচের সংকট হওয়ায় এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।