শুক্রবার, ২৬ জুলাই ২০২৪, ০৯:৪১ পূর্বাহ্ন
শিরোনামঃ
সড়ক ও জনপথ কর্মকর্তার ব্যাংকে শত কোটি টাকার লেনদেন হরিরামপুরে ৪ ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা অনিয়ম-দুর্নীতির মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা অর্জনের অভিযোগ ডিপিএইচই’র প্রাক্কলনিক আনোয়ারের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের উন্নয়নে চীনের সমর্থন অব্যাহত রাখার আশ্বাস দিলেন শি জিনপিং বেনজীর-মতিউর-এর কুশপুতুল দাহ করায় হুমকি : উদ্বেগ প্রকাশ কোটা সমস্যার সমাধান করার দাবি জাতীয় শিক্ষাধারার হরিরামপুরে পদ্মা তীর রক্ষা বাঁধে ধস, জনমনে আতংক মুরাদনগর শ্রীকাইলে ক্যাপ্টেন নরেন্দ্রনাথ দত্ত স্মৃতি ফুটবল টুর্নামেন্টের ফাইনালে হুরোয়া চ্যাম্পিয়ন তাড়াইলের কথিত পীর লুৎফর রহমানের বিরুদ্ধে ইউএনও বরাবর লিখিত অভিযোগ বর্ষার পানি বৃদ্ধির সঙ্গে বাড়ছে নৌকার চাহিদা

ভোলায় মেঘনার বুকের চর মদনপুরে কেবল পাখিদের কলরব

সাব্বির আলম বাবু (নিজস্ব প্রতিবেদক):
  • আপলোডের সময় : শনিবার, ২৫ মার্চ, ২০২৩
  • ৫৮৩৬ বার পঠিত

মেঘনা অনেকটা শান্ত। অভয়ারণ্যে ইলিশ ধরায় নিষেধাজ্ঞা চলছে। ফলে আশপাশে ইঞ্জিনের কানফাটা শব্দ নেই। ছোট ছোট ডিঙিনৌকায় নিজেদের আড়াল করে মাছ ধরছে শিশু–কিশোরের দল। মেঘনার বুকে কান পাতলে শোনা যায় কেবল পাখিদের মনোমুগ্ধকর ডাক। মাঝেমধ্যে গাঙচিলের তীক্ষ্ণ সুরের ডাক ট্রলারের শব্দকেও হার মানিয়ে দেয়।

চট্টগ্রামগামী লাইটার জাহাজগুলো নদীতে ঢেউ তুলে চলছে। সেই ঢেউয়ের ওপর দিয়ে উড়ছে গাঙচিলের দল। ডানা মেলে বাতাসে ভর করে ছুটছে জাহাজের পিছু পিছু। হেলেদুলে ডিগবাজি দিচ্ছে, মাঝেমধ্যে ছোঁ মেরে ঢেউয়ের মধ্য থেকে শিকার ধরছে। শুধু জাহাজ নয়, যাত্রীবাহী ট্রলারের পেছনেও উড়ছে একদল গাঙচিল। সে এক অপরূপ দৃশ্য! এমন দৃশ্য দেখতে দেখতে আমাদের ট্রলার ভেসে চলল ভোলার তুলাতুলি ঘাট থেকে মদনপুরের উদ্দেশে।

মদনপুর মেঘনার মাঝে জেগে ওঠা দৌলতখান উপজেলার একটি ইউনিয়ন। আমার সঙ্গে যাঁরা ট্রলারের যাত্রী হয়েছেন, তাঁরা কেউ গরুর ঘাস কাটতে যাচ্ছেন। কেউ খালে মাছ ধরতে, কেউবা গবাদিপশুর খোঁজ নিতে। কেউ যাচ্ছেন সবজির খেত, সয়াবিনের খেত তদারকিতে। আত্মীয়ের বাড়ি, ইউনিয়ন পরিষদের কাজে যাওয়া মানুষের সংখ্যাও কম নয়। নদীতে জোয়ার থাকায় ট্রলার মদনপুরের ভেতরে খালে প্রবেশ করল। ভাটা হলে নদীর মধ্যেই নামতে হতো। আমার গন্তব্য মদনপুরের ১ নম্বর ওয়ার্ডে চর টবগী গ্রামে। এখানে কয়েক শ একর জমিতে তরকারির আগাম আবাদ হয়। ঘাটের আগেই ট্রলার খালের উত্তরে তীর ঘেঁষে ধীরে চলতে থাকল। সুবিধামতো জায়গা দেখে একে একে লাফিয়ে নামতে শুরু করলেন যাত্রীরা।

নৌকা থেকে নামতেই চোখে পড়ল, পাঁচটি বক সয়াবিন খেতের পাশে জবুথবু হয়ে রোদ পোহাচ্ছে। পালকে শরীর, গলা ঢেকে রেখে শুধু মাথা বের হয়ে আছে। ওদের যে লম্বা গলা আছে, বোঝাই যাচ্ছে না। মদনপুরের চর, নদী ও খালের তীরে, ফসলের খেতে, এমনকি গবাদিপশুর পিঠেও নানা রকম বক দেখা যায়। মেঘনা নদীতীরের এদিকটায় নলখাগড়ার বন। বাকি সবটুকুতে চাষাবাদের জমিতে ফসল। ওই নলখাগড়া বনের আশপাশে হট্টিটি দুটি ডেকেই যাচ্ছে। ঘুরেফিরে দুটোকেই খুঁজে পাওয়া গেল।

আরেক পাশে দেখা যায়, চরে বেড়ানো লাল গরুর ঘাড়ে বসে পোকা খুটে খাচ্ছে শালিক। যেন বুড়ির চুল থেকে উকুন বেছে দিচ্ছে বালিকা। গবাদিপশুর সঙ্গে পাখিদের এ এক দারুণ মিতালি। মেঘনার বাঁকের দুই খালের মোহনায় পুঁতে রাখা ডালে পানকৌড়ি ডানা ও লেজ ছড়িয়ে ভেজা পালক শুকাচ্ছে। আবার পানির নিচে লম্বা ডুবসাঁতার দিয়ে শিকার ধরছে। ঠায় দাঁড়িয়ে এমন দৃশ্য দেখতে দেখতে সময় বয়ে যায়।

সামনে এগোতেই একরের পর এক সবজিখেত। করলা, চিচিঙ্গা, সয়াবিন, মরিচই বেশি। এক কৃষক তাঁর স্ত্রী-সন্তানকে নিয়ে সয়াবিনের খেতে নিড়ানি দিচ্ছেন। তরকারি খেতের বিশাল মাচা দেখে বোঝার উপায় নেই, ভেতরে ব্যস্ত মানুষ আছে। খুবই নিরিবিলি পরিবেশ। এ নীরবতার ফাঁকে কাঠশালিক করলার পাতার পোকা খুটে খাচ্ছে। খাচ্ছে পাকা ফল। আছে ভেতো শালিক, গুবরে শালিক, চড়াই, ফিঙে, বুলবুলি, খয়রা হাঁড়িচাচা, পাতি আবাবিল, বেনেবউ। বসন্তের ছোঁয়ায় পাখিগুলো যেন চকচক করছে। বর্ষা বা শীতের মতো ‘ম্যান্দামারা’ নয়।

দু–একটি পাখির ডাক শুনে তার পিছু নিয়ে খুঁজে বের করা যায়। কণ্ঠ শুনে চেনাও যায়। কিন্তু শত রকমের হাজারও পাখির ডাক যখন একত্র হয়, তখন যে সুর বা আবহসংগীত সৃষ্টি হয়, তা পৃথিবীর সেরা সংগীতজ্ঞের সুরকেও হার মানায়। বিশেষজ্ঞ ছাড়া পাখির ডাক আলাদা করা সহজ নয়। ফলে সেই কলরব শুনতে শুনতে সামনে এগিয়ে যাই। এমন সময় মন আরও উতলা হয়ে যায় হট্টিটি নামের পাখির ডাকে।

বেশ উঁচু স্বরে অবিরাম ডেকে যাচ্ছে ‘টিটিটিউট…টিটিটিউট’। একটি থামলে আরেক পাশ থেকে আরেকটি ডেকে উঠছে। পাখি দুটির সঙ্গে সমানে একটি ছাগলও ডেকে যাচ্ছে। মনে হচ্ছে, পাখিদের ডাক অনুকরণ করছে। কিন্তু ছাগলের ডাক কানে বড্ড বেসুরো ঠেকে। মেঘনা নদীতীরের এদিকটায় নলখাগড়ার বন। বাকি সবটুকুতে চাষাবাদের জমিতে ফসল। ওই নলখাগড়া বনের আশপাশে হট্টিটি দুটি ডেকেই যাচ্ছে। ঘুরেফিরে দুটোকেই খুঁজে পাওয়া গেল। একদফা ডেকে উড়ে যাচ্ছে। আবার ফিরে আসছে। বেশ কর্মচঞ্চল। হট্টিটির ডাক আগে শোনার অভিজ্ঞতা থাকলেও এমন অবিরাম ডাক এবারই প্রথম।

পাখিবিশেষজ্ঞ বাংলাদেশ বার্ডস ক্লাবের ভাইস প্রেসিডেন্ট সায়েম উল চৌধুরীর সঙ্গে মুঠোফোনে কথা হলো। তিনি জানালেন, হট্টিটি পাখি ভোর ও গোধূলিবেলায় সবচেয়ে বেশি কর্মচঞ্চল হয়। অনবরত ডাকতে থাকে। পূর্ণিমা রাতেও কর্মচঞ্চল থাকে। মার্চ-সেপ্টেম্বর মাস এ পাখির প্রজননকাল। এ সময় জোড়া বেঁধে প্রজনন এলাকা ঠিক করে। পানির ধারে, উদ্ভিদের মধ্যে বা দালানের ছাদে, পাতার ডাঁটা, ঘাস ইত্যাদির মধ্যে বাসা বানিয়ে ডিম পাড়ে। বাসা বানানোর সময়ে এ রকম কর্মচঞ্চল ও বিরামহীন ডেকে থাকে। এটা তারই লক্ষণ। পাখির কয়েকটি ছবি তুলে একটি খেতের আলপথে দাঁড়াতেই এক সবজিচাষি খেতের মধ্য থেকে মাথা বের করে ডাক দিলেন। বললেন, ‘পোইক্ষে যে আমগো তরকারি খাই হালায়, ক্ষ্যতি করে, হেইডা এট্টু লেইকখেন যে!’

দয়া করে শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরীর আরো খবর..