দেশ এ মূহর্তে এক চরম ক্রান্তি কাল অতিক্রম করছে। এ সংকট উত্তরনের জন্য সরকার, বিরোধী দল, সুশীল সমাজ, আন্তর্জাতিক মহল কেউ সর্বজনগ্রাহ্য পথ দেখাতে পারছেননা। সবাই জনগণের কথা বলে কিন্তু সংকট উত্তরণে বিবেকবুদ্ধি সম্পর্ন জনগণের মতামত দেওয়ার কোন সুযোগ বর্তমান অবস্থায় নেই। এ অবস্থায় দেশ পরিচালনায় দেশের সচেতন নাগরিদের অংশ গ্রহণের সুযোগ সৃষ্টি করা হলে এ সংকটের উত্তরণ হতে পারে। এই ভাবনা থেকেই জনতার কক নামে একটি অতিরিক্ত সংসদীয় অংশ সৃষ্টি করে দ্বি কক্ষ বিশিষ্ট সংসদীয় সরকার পদ্ধতিতে সচেতন নাগরিকদের অংশগ্রহনের মাধ্যমে (‘‘জনতার কক্ষ’’ Public House) সমান্তরাল ও নিরপেক্ষ মতামতের ভিত্তিতে দেশ পরিচালনা নীতি নির্ধারন করা যায় কিনা এ বিষয়ে ভেবে দেখবার সুযোগ রয়েছে। নিজস্ব চিন্তা থেকে সেই রূপকল্পটি তুলে ধরলাম।
জাতীয় সংসদ হবে দুই কক্ষ বিশিষ্ট
বিস্তারিতঃ
সরকার পরিচালনায় জনগনের সবসময় একটি ভূমিকা থাকা প্রয়োজন। এ ক্ষেত্রে দেশের সকল জনগনের অংশ গ্রহণ করা একটি জটিল ও কঠিন কাজ। একদিকে দেশের সকল জনগন সব সময় দেশপরিচালনার এই সব জটিল বিষয়ে মতামত দেওয়ার যেমন যোগ্যতা রাখেন না অন্যদিকে এই জটিল বিষয়ে অংশ গ্রহনে আগ্রহীও হবেন না। সেই ক্ষেত্রে দেশ পরিচালনায় নিজের মতামত দিতে আগ্রহী একটি যোগ্যতম জনগোষ্ঠি নির্বাচন করে সংসদের সমান্তরাল একটি কক্ষ নির্বাচন করলে তারা দেশর ক্রান্তি কালে সঠিক সমাধান দিতে সহায়তা করতে পারেন।
জাতীয় জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে যখন দেশের ১৭ কোটি মানুষের মতামত গ্রহনের যেমন কোন সুযোগ নেই তেমনি সকল জনগনের সব বিষয়ে মতামত দানের সক্ষমতাও নেই, সে ক্ষেত্রে সকলের মতামত গ্রহনের প্রয়োজন নেই আবার সকলকে মতামত দানের জন্য বাধ্য করারও প্রয়োজন নেই। এ ক্ষেত্রে সাধারণ বিবেক বুদ্ধি সম্পর্ণ এক দল নাগরিক নির্বাচন করা প্রয়োজন, যারা স্বপ্রনোদিত হয়ে জাতীয় জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে মতামত দিতে পারেন। জনমত যাচাইয়ের জন্য তেমনই একটি সহজ ও কার্যকরী পদ্ধতি পেশ করা হল। এটি একটি ধারনা মাত্র, এর আরো পরিবর্তন, পরিবর্ধন হতে পারে, যা নিয়ে ব্যাপক আলোচনা এবং গবেষনা হতে পারে।
দ্বি কক্ষ বিশিষ্ট সংসদীয় সরকার পদ্ধতিতে সচেতন নাগরিকদের অংশ গ্রহনের মাধ্যমে (‘‘জনতার কক্ষ’’ Public House) সমান্তরাল ও নিরপেক্ষ মতামতের ভিত্তিতে দেশ পরিচালনা নীতি নির্ধারন পদ্ধতিঃ
০ পরিচিতিঃ-
বর্তমান সংসদীয় সরকার ব্যবস্থা অপরিবর্তিত রেখে দেশের ভোটারদের মধ্য হতে আপন যোগ্যতায় অনির্দষ্ট সংখ্যক সচেতন নাগরিক নির্বাচন করে, যোগ্যতম এই নাগরিক গোষ্টিকে ‘‘জনতার কক্ষ’’ Public House নামে সংবিধান একটি পৃথক কক্ষ (‘‘জনতার কক্ষ’’ Public House) সৃষ্টি করতে হবে। যখন সংবিধান পরিবর্তনের প্রয়োজন হবে, জাতীয় সংসদের কোন বিল অথবা অন্য কোন জাতীয় ইস্যুতে যখনই জনমত যাচায়ের প্রয়োজন হবে অথবা সাংবিধানিক পদগুলির প্রধান এবং সদস্য নির্বাচনের প্রয়োজন হবে অথবা অন্য কোন জাতীয় ইস্যুতে তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে ইলেকট্রেনিক মাধ্যম উক্ত যোগ্যতম নাগরিকগণ (‘‘জনতার কক্ষ’’ Public House ) তাদের মতামত তথা ভোট প্রদান করবেন।
কে জনতার কক্ষ Public House সদস্য নির্বাচন করবেনঃ-
নির্বাচন কমিশনের মাধ্যমে জনতার কক্ষ সদস্য নির্বাচন করা হবে।
০ জনতার কক্ষ (Public House) সদস্যদের যোগ্যতাঃ-
বাংলাদেশের ভোটার যে কোন নাগরিক জনতার কক্ষ সদস্য হিসাবে নিজের যোগ্যতা অর্জনের জন্য যোগ্য হবেন।
০ জনতার কক্ষ (Member of Public House ) সদস্য নির্বাচন পদ্ধতিঃ-
নির্বাচন কমিশন বছরে একবার জনতার কক্ষ সদস্য নির্বাচনের জন্য এম সি কিউ পদ্ধতিতে পরীক্ষা গ্রহন করবেন।
০ পরীক্ষা বিষয় বস্তুঃ-
বাংলাদেশ, বাংলাদেশের স্বাধীনতা, বাংলাদেশের সংবিধান ও প্রশাসনিক আইন এবং সমসাময়িক বিশ্ব রাজনীতি ও অর্থনীতি।
পরীক্ষগ্রহণ পদ্ধতিঃ
০ ১০০টি প্রশ্নের এম সি কিউ পদ্ধতির পরীক্ষা গ্রহন করতে হবে। যারা এই পরীক্ষায় কমপক্ষে ৬০ নম্বর পাবেন তারা জনতার কক্ষ সদস্য MemberPublic House নির্বাচিত হবেন। জনতার কক্ষ সদস্য সংখ্যা অনির্দিষ্ট হবে।
০ জনতার কক্ষ সদস্য একবার নির্বাচিত হলে তিনি আজীবনের জন্য নির্বাচিত হবেন।
০ জনতার কক্ষ ( Public House ) সদস্যরা কখন ভোট দেবেনঃ–
১. জাতীয় সংসদে কোন বিষয়ে জনমত জরিপের দাবি উত্থাপন করা হলে সে বিষয়ের উপর জনতার কক্ষ সদস্যরা ভোট প্রদান করবেন।
২. বাংলাদেশের সংবিধান পরিবর্তনের সময় জনতার কক্ষ ( Member of Public House) সদস্যরা ভোট প্রদান করবেন।
৩. বাংলাদেশের সাংবিধানিক পদ সমুহের প্রধান ও সদস্যদের নির্বাচনের জন্য জনতার কক্ষ সদস্যরা ভোট প্রদান করবেন।
৪. রাষ্ট্রের স্পর্শকতর বিষয়ে, কোন দেশের সাথে চুক্তির বিষয়ে, কোন কোম্পানীর সাথে চুক্তি (যেমন- গ্যাস, কয়লা চুক্তি) সিদ্ধান্ত গ্রহনের জন্য জনতার কক্ষ সদস্যরা ভোট প্রদান করবেন।
০ ভোট দান পদ্ধতিঃ-
১. যোগ্যতা অর্জনের পর প্রত্যক সদস্যকে একটি আইডি নম্বর সম্মলিত কার্ড দেওয়া হবে।
২. তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহারে করে ভোট প্রদান করা হবে।
৩. মোবাইল ফোনের মাধ্যমে ভোট প্রদান করা যাবে।
৪. জনতার কক্ষ (Member of Public House সদস্য নিজে তার গোপন নম্বর ঠিক করবেন:-
নির্বাচিত সদস্য মোবাইল ফোন অথবা কম্পিউটার ব্যবহার করে নিজে নিজের গোপন নম্বর (পাশ ওয়ার্ড) ঠিক করবেন। তিনি তার পছন্দ মত গোপন নম্বরে নির্বাচন করবেন।
৫. যে বিষয়ে উপর ভোট গ্রহন করা হবে প্রথমে সে বিষয়টি নির্বাচন করা হবে।
৬. বিষয়টি উপর সকল মিডিয়ার উম্মুক্ত আলোচনা হবে।
৭. মোবাইল টেলিফোনে একটি নির্দিষ্ট নম্বর দিয়ে ভোটার তার গোপন নম্বর ব্যবহার করে জাতীয় সংসদের নির্দিষ্ট সাইটে প্রবেশ করবেন।
৮. সাইটে প্রবেশের পর ভোটারের আইডি নম্বর চাইবে, তখন ভোটার তার আইডি নম্বর প্রবেশ করাবেন, ভোটার সঠিক ভাবে আইডি নম্বর প্রবেশ করালে তার কাছে গোপন নম্বর (পাশ ওয়ার্ড) চাইবেন। সঠিক পাসওয়ার্ড প্রধানের পর ভোটার নির্দিষ্ট অপশনে ভোট প্রদান করবেন।
৯. যেই বিষয়ের উপর ভোট হবে সে বিষয়ে কতগুলি অপশন পরপর সাজানো থাকবে, যেমন- ‘‘নির্বাচন কমিশনার, পাবলিক সার্ভিস কশিনের প্রধান’’ ইত্যাদি পদে নিয়োগের জন্য ব্যক্তি নির্বাচনের ক্ষেত্রে পর পর মনোনীত ব্যক্তি নাম, যেমন হরতাল হবে কি হবে না সে বিষয়ে হ্যাঁ/না, সংবিধানে কোন অনুচ্ছেদ পরিবর্তন হবে কি হবেনা ইত্যাদি অপশন। ভোটার তার ইচ্ছামত অপশনে টিক মার্ক প্রদান করে তা প্রেরন করবেন।
১০. এই ভাবে জাতীয় সংসদের সাইটে ভোট কাষ্ট এবং সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের উপস্থিতিতে যথেষ্ট নিরাপত্তা ব্যবস্থার মাধ্যমে ফলাফল প্রত্যক্ষ করা হবে।
কেন এই পদ্ধতিঃ-
রাষ্ট্র পরিচালনায় সংসদ যখন ব্যর্থ হবে তখন প্রভাবমুক্ত ভাবে যোগ্যতম নাগরিকদের মতামতের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত গ্রহনের জন্য এ পদ্ধতি করা যেতে পারে। রাষ্ট্রের কঠিন সংকট উত্তরনে এ পদ্ধতি প্রয়োগ করা যেতে পারে।
এই পদ্ধতির সুফলঃ–
বর্তমান সংসদীয় সরকার পদ্ধতি বলবৎ রেখে প্রস্তাবিত পদ্ধতি সংবিধানের অন্তর্ভূক্ত দ্বি কক্ষ বিশিষ্ট সংসদীয় পদ্ধতির সরকারে ব্যবস্থা প্রবর্তন করতে হবে।
১. জনতার কক্ষ সদস্যরা Member of Public House নিজ যোগ্যতায় নিজের তাগিদে নির্বাচিত হবেন, এক্ষেত্রে কোন প্রভাবে বা অন্য কোন পিছনের পথে কেউ নির্বাচিত হওয়ার সুযোগ থাকবেনা।
২. জনতার কক্ষ সদস্যরা শুধু দেশের প্রয়োজনে তাদের মতামত প্রয়োগ করবেন। এতে কোন দলগত প্রভাব থাকবে না।
৩. মতামত দেওয়া ছাড়া জনতার কক্ষ সদস্যদের আর কোন ক্ষমতা থাকবেনা।
৪. জনতার কক্ষ সদস্যরা নিজ যোগ্যতায় নির্বাচিত হবেন, সুতরাং যে কোন মতামত প্রদানে তারা গড্ডলিকা প্রবাহে ভেসে যাবেন না।
৫. জনতার কক্ষ সদস্যরা সংখ্যায় অগনিত হবেন এবং দেশে বিদেশে ছড়িয়ে থাকবেন, ফলে তাদেরকে কোন রকম প্রভাবিত করা যাবেনা।
৬. দেশে রাজনীতি সচেতন জনসংখ্যা বাড়বে।
৭. বিবেক বুদ্ধিমান লোকের মতামতের প্রতিফলন হবে।
৮. প্রকৃত জনমত পাওয়া যাবে।
৯. সাংবিধানিক পদ সমূহের প্রধান নির্বাচনে সরকারে হাত থাকেনা।
১০. যোগ্যতম লোক নির্বাচিত হবেন।
১১. অযোগ্য এবং দলীয় লোক নির্বাচিত হওয়ার সুযোগ থাকবেনা।
১২. যেহেতু সংসদ কোন সিদ্ধান্ত নিতে ব্যর্থ হলে জনতার কক্ষ সদস্যদের ভোটে তা মিমাংসা হবে এবং বার বার সংসদ সদস্যরা ব্যর্থ হলে তাদের ইমেজের ক্ষতি হবে সে জন্য তারা এক মত হয়ে সিদ্ধান্ত নিতে সচেষ্ট হবেন অথার্ৎ সংসদ কার্যকর হতে সহায়তা করবে। দেশ পরিচালনায় সংসদ সদস্যরা অধিক মনোযোগি হবেন।
১৩. দেশে শিক্ষিত লোকের সংখ্যা বাড়বে।
১৪. ভোট গ্রহনে কোন কারচুপি হওয়ার সুযোগ থাকবেনা।
১৫. এ পদ্ধতিতে প্রয়োজন অনুযায়ী যখন তখন ভোট গ্রহন করা যাবে।
১৬. এ পদ্ধতি অতি সহজ এবং ভোট গ্রহনে তেমন কোন খরচ হবে না।
১৭. এ পদ্ধতি প্রয়োগ করলে রাজনৈতিক দলগুলোর রাজপথে আন্দলনের প্রয়োজন হবে না।
১৮. হরতাল নৈরাজ্যের মত কর্মকান্ড কমবে।
১৯. অযোগ্য ব্যক্তিদের রাজনীতিতে প্রবেশের সুযোগ কম থাকবে।
২০. দেশে স্থিতিশীলতা আসবে।
লেখক: মজিবুর রহমান, কনসালটেন্ট (এসএই ও এসওই ইপ্লিমেন্টেশান) এসপিএফএমএস, অর্থ মন্ত্রণালয়