কক্সবাজার প্রতিনিধি:
সরকারের মেগা প্রকল্পের মধ্যে মাতারবাড়ী কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্প অন্যতম। স্থানীয় সংসদ সদস্য, একজন কেন্দ্রীয় আওয়ামী নেতা সহ লোকাল আওয়ামী নেতাকর্মী সহ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের এমডি আবুল কালাম আজাদসহ ৬ শীর্ষ কর্মকর্তা এই মাতারবাড়ী কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্প বাস্তবায়নে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে দেড়শ কোটিও অধিক টাকা আত্মসাৎ ও লুটপাট করেছে। এ অনিয়ম ও দুর্নীতির সত্যতা পেয়েছে এমনটি তথ্য নিশ্চিত করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এর একটি সুত্রে। এ নিয়ে দুদক কক্সবাজার সমন্বয় অফিসের উপ-পরিচালক সুবেল আহমেদ’র নেতৃত্বে একটি দল মাতার বাড়ী ঘুরে এসেছেন সম্প্রতি। এতে দীর্ঘদিন ধরে মাতারবাড়ী কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্পে সিন্ডিকেট করে টেন্ডার ও কমিশন বাণিজ্যে ও বিভিন্ন কোম্পানির মালামাল পাস দেওয়ার নামে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। এ নিয়ে সুনির্দিষ্ট অভিযোগের তথ্যসহ সম্প্রতি সংস্থাটির একাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) চিঠি দিয়েছেন।
অভিযোগের অনুলিপি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়েও পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছে সুত্রটি। এর প্রেক্ষিতে দুদকের প্রধান কার্যালয় থেকে গত ৯ জুলাই কক্সবাজার সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে চিঠি পাঠানো হয় এবং ১৫ জুলাই কক্সবাজার জেলা কার্যালয়ের উপপরিচালক সুবেল আহমেদকে প্রধান করে দুই সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয় এবং তদন্ত শেষ করে সে অনুযায়ী প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এরই আলোকে গত ২১ আগস্ট উপ-পরিচালক সুবেল আহমেদ মাতারবাড়ী বিদ্যুৎ প্রকল্পে যান।
চিঠি ও দুদক সূত্রে জানা যায়, মাতারবাড়ী কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেডের (সিপিজিসিবিএল) এমডি আবদুল কালাম আজাদ, নির্বাহী পরিচালক (অর্থ) মোহাম্মদ শহীদ উল্লাহ, ভারপ্রাপ্ত প্রধান প্রকৌশলী মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান, নির্বাহী প্রকৌশলী (নকশা) মো. কামরুল ইসলাম, সহকারী নিরাপত্তা কর্মকর্তা আলফাজ উদ্দিন ও ডিজিএম (ডেপুটেশন) মতিউর রহমানের বিরুদ্ধে মাতারবাড়ী কয়লাভিত্তিক তাপবিদ্যুৎ প্রকল্পে তদন্তাধীন বিষয়গুলোর মধ্যে এ পর্যন্ত ১৪ কোটি ডলার মূল্যের ১৬টি কাজের বৈচিত্র্যের মধ্যে ১১টি কাজের বৈচিত্র্য অনুমোদন ছাড়াই অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এসব কাজের ভিন্নতা দেওয়ার আগে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন নিতে হয়।
এ ছাড়া বোর্ডের অনুমতি ছাড়াই প্রকল্পের টাউনশিপ এলাকায় বালু ভরাটের কাজে তারতম্য দেওয়া এবং চুক্তি অনুযায়ী বিটুমিন বা পিচের পরিবর্তে কংক্রিটের রাস্তা নির্মাণের নামে ৬৮ কোটি টাকা আত্মসাৎ করা, বোর্ডের অনুমতি ছাড়াই নিলাম ছাড়াই স্ক্র্যাপ বিক্রি করে ২১ দশমিক ৬ মিলিয়ন ডলার নেওয়া হয়েছে। ৫৩ কোটি টাকা লোকসান, প্রাতিষ্ঠানিক উন্নয়ন পরামর্শক নিয়োগে ৮ কোটি ১২ লাখ টাকার অপব্যবহার, যন্ত্রপাতি ক্রয়ের চুক্তিতে উল্লিখিত দেশের পরিবর্তে বিভিন্ন দেশ থেকে নিম্নমানের পণ্য কিনে কোটি কোটি টাকা অপচয় এবং ৪ কোটি টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে।
সবমিলে বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা ও রাস্তাঘাট নির্মাণ এবং যন্ত্রপাতি ক্রয়ে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে প্রায় দেড়শ কোটি টাকা অর্থ আত্মসাৎ ও লুটপাটের সন্ধান পাওয়া পরপরই এরইমধ্যে অনুসন্ধান শুরু করেছে দুদক। আর প্রকল্পে এ সুযোগ করে দিয়ে নিজ লোকদের প্রকল্পে ব্যবসা ও কমিশন বানিজ্য করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে স্থানীয় এমপি সহ রাজনৈতিক নেতারা এমনটি তথ্য উঠে এসেছে।
কক্সবাজার জেলা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক সুবেল আহমেদ অভিযোগ ও চিঠি পাওয়ার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, কমিশনের চিঠি পাওয়ার পর দুর্নীতির তদন্ত শুরু করেছি মাতারবাড়ী কয়লাভিত্তিক তাপবিদ্যুৎ প্রকল্পে অনিয়ম। কিন্তু তদন্তের স্বার্থে সবকিছু বলা সম্ভব নয়।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে সিপিজিসিবিএল এমডি আব্দুল কালাম আজাদের মুঠোফোনে একাধিকবার কল দেওয়া হলে ফোনটি রিসিভ হয়নি।
এ বিষয়ে জানতে মহেশখালী কুতুবদিয়ার সাবেক এমপি আশেক উল্লাহ রফিককে তার মুটোফোনে ফোন করলে তা বন্ধ পাওয়া যায়।