রবিবার, ১০ নভেম্বর ২০২৪, ০৫:২৪ পূর্বাহ্ন
শিরোনামঃ
সাইবার নিরাপত্তা আইন বাতিলের সঙ্গে মামলাও বাতিল হবে : আইন উপদেষ্টা ঢাকায় জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবসের র‌্যালিতে সাবেক কাউন্সিলর সাদরিলের নেতৃত্বে শোডাউন কিশোরগঞ্জে দলীয় প্রভাব বিস্তারকে কেন্দ্র করে আহত অন্তত-২০ জন সরকার জনগণের আস্থা অর্জন করতে শুরু করেছে যৌক্তিক সময়ের মধ্যে নির্বাচন হলে বিদ্যমান চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলা সম্ভব : মির্জা ফখরুল সাইবার নিরাপত্তা আইন বাতিলের নীতিগত সিদ্ধান্ত সিলেট মহানগর বিএনপির পূণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা সিলেটে বেড়েছে ব্যাটারি চালিত ইজিবাইকের দৌরাত্ম্যে কাঁঠালিয়াতে জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে লিফলেট বিতরণ ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয় সিলেটে চীনা নাগরিক হত্যায় ১০ বছরের কারাদন্ড

‘মাইলেজে’ ক্ষুব্ধ চালকরা ট্রেন না চালানোর হুমকি

রিপোর্টারের নাম
  • আপলোডের সময় : শনিবার, ১১ ডিসেম্বর, ২০২১
  • ৬০৫০ বার পঠিত
ফাইল ছবি
দেড়শ বছরেরও বেশি সময় ধরে রেলওয়ের কর্মচারীদের বেতন-ভাতার কাঠামো স্বতন্ত্র। কিন্তু নতুন বেতন-ভাতা কাঠামোয় ‘মাইলেজ’ সুবিধা বঞ্চিত হওয়ার শঙ্কায় ট্রেনের চালক ও গার্ডরা ক্ষুব্ধ হয়েছেন। মাইলেজের সুবিধা কমানোর প্রতিবাদে তারা ঐক্যবদ্ধ হয়েছেন।

রেল ভবনসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে প্রায় প্রতিদিনই তারা প্রতিবাদ-বিক্ষোভ করছেন। মাইলেজ (অতিরিক্ত হিসাবে মাইল প্রতি আর্থিক সুবিধা) সমস্যার দ্রুত সমাধান না হলে ট্রেন চালানো বন্ধসহ লাগাতার আন্দোলনের হুমকি দিচ্ছেন সংশ্লিষ্টরা।

সম্প্রতি সফটওয়্যার ‘আইবাস প্লাস প্লাস’র মাধ্যমে রেলের কর্মচারীদের বেতন-ভাতা দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এতে পরিবহণ বিভাগের (রানিং স্টাফ) ‘মাইলেজ’ সুবিধা বঞ্চিত হওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। এর প্রতিবাদে রেলভবন ঘেরাওসহ রেলের পূর্ব ও পশ্চিমাঞ্চলের কারখানায় বিক্ষোভ করা হচ্ছে। বৃহত্তর আন্দোলনের কর্মসূচি পালনের হুমকি দেওয়া হচ্ছে।

এ বিষয়ে রেলওয়ের রানিং স্টাফ (চালক-গার্ড) ও শ্রমিক-কর্মচারী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমান বলেন, আমাদের ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে যাচ্ছে। আমাদের বঞ্চিত করতে একটি চক্র দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। ১৯৯৮ সালে প্রধানমন্ত্রীর এক অনুশাসনে তাদের মাইলেজ (রেলের আইন অনুযায়ী) পাওয়ার কথা বলা রয়েছে। আমাদের পক্ষে আদালতের রায়ও আছে। কিন্তু, সম্প্রতি অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক প্রজ্ঞাপনে রেলের মাইলেজ সুবিধা নতুন করে নির্ধারিত করা হয়েছে। এটি রেলওয়ে আইনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।

এটি বাস্তবায়ন করা হলে মাইলেজ সুবিধা থেকে চালক-গার্ডরা বঞ্চিত হবেন। প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী বেসিকের সঙ্গে ৭৫ শতাংশ টাকা যোগ হবে না। মুজিবুর রহমান আরও বলেন, ১৬২ বছরের নিয়ম-নীতি ভঙ্গ হলে আমরা দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলব। ট্রেন চালানো বন্ধ করে দেওয়া হবে। অধিকার বাস্তবায়নে যা যা করা দরকার আমরা তাই করব।

রেলপথ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, রেলে চালক ও গার্ড সংকট চরমে উঠেছে। একনাগাড়ে একজন চালক ও গার্ড ১৭ থেকে ১৯ ঘণ্টা পর্যন্ত ট্রেন চালাচ্ছেন। ৮ ঘণ্টার বেশি চালানোর পর মাইলেজ (মাইল প্রতি) হিসাবে তারা টাকা পান। রেলে চালক সংকট থাকায় তারা এ সুবিধা পান। ১৯৬২ জন ট্রেন চালকের স্থলে বর্তমানে ১০১৮ জন রয়েছেন। ৯৮৮ চালকের অভাব রয়েছে। আর ট্রেনে অর্ধেকেরও কম গার্ড রয়েছেন।

এছাড়া এক যুগে ট্রেনের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় ৩৫০০ চালক এবং ২৫০০ গার্ড প্রয়োজন। চলতি বছরে প্রায় ১০ শতাংশ চালক ও গার্ড অবসরে যাবেন। কয়েক বছরে তাদের সংখ্যা অর্ধেকে গিয়ে দাঁড়াবে। ফলে ট্রেন পরিচালনায় চরম সংকট দেখা দেবে বলে মনে করেন রেলওয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

রেলওয়ে আইনের ১৬৮৫/১০৮৫ বিধিতে বলা হয়েছে-ট্রেনচালক, গার্ড ও ট্রেন টিকিট পরীক্ষকরা (টিটিই) হলেন রানিং স্টাফ। তারা নির্ধারিত ডিউটির পাশাপাশি কর্মরত অবস্থায় যত দূরত্ব পর্যন্ত ট্রেন চালাবেন- সে হিসাবে মাইল গুনে বাড়তি ভাতা পাবেন। রেলওয়ে আইনে সাপ্তাহিক বা সরকারি বন্ধের দিনে ডিউটি করলে হলিডে মাইলেজ প্রাপ্তির বিধানও রয়েছে তাদের।

রেলওয়ে স্টাবলিশমেন্ট কোড ভলিউম-১-এর চ্যাপ্টার-৫ এবং লোকোমোটিভ অ্যান্ড রানিং শেড ম্যানুয়াল জিআই চ্যাপ্টার-১২ অনুযায়ী-১০০ মাইল কিংবা ৮ ঘণ্টার বেশি ট্রেন চালালে একজন রানিং স্টাফ মাইলেজ (রানিং ভাতা) প্রাপ্য হবেন। অতিরিক্ত ট্রেন চালালে প্রতি ঘণ্টা ও মাইল অনুযায়ী একদিনের মূল বেতনের সমপরিমাণ অর্থ মাইলেজ হিসাবে তিনি পাবেন।

রেলওয়ে আইন অনুযায়ী-রানিং স্টাফদের ছুটি, পাশ, চিত্তবিনোদন ও অবসরোত্তর সুবিধা তাদের মূল বেতনের ৭৫ শতাংশ যোগ করার বিধান রয়েছে। ১৬২ বছর আগে থেকে এ বিধান চলে আসছে। কিন্তু নতুন নিয়মে রেলওয়ে রানিং স্টাফদের এসব সুবিধা থাকছে না। এতে তারা ক্ষুব্ধ হয়ে উঠছেন। যে কোনো সময় ট্রেন চালানো বিঘ্নিত হতে পারে।

রেলওয়ের সংশ্লিষ্টরা বলছেন, লোকবলের অভাব থাকায় চালক, গার্ড ও টিটিইদের বাধ্য হয়ে ৮ ঘণ্টার স্থলে ১৭ থেকে ১৯ ঘণ্টা পর্যন্ত ট্রেন পরিচালনা করতে হচ্ছে। অসুস্থ অথবা পারিবারিক সমস্যা থাকলেও তাদের ট্রেন পরিচালনায় যুক্ত থাকতে হয়। পারিবারিক ও সামাজিক বন্ধন থেকেও অনেককে জীবনের অধিকাংশ সময় ট্রেনে পার করতে হয়।

আন্দোলনকারী রানিং স্টাফদের বক্তব্য-নির্ধারিত সময়ের চেয়ে তাদের ১২ থেকে ১৩ ঘণ্টা অতিরিক্ত ডিউটি করতে হচ্ছে। সে হিসাবে একজন রানিং স্টাফ মাসে ১০ থেকে ১১ হাজার মাইল পর্যন্ত ট্রেন চালাচ্ছেন। এসব পদে বেতন কম। তবে মাইলেজ সুবিধা থাকায় তাদের পুষিয়ে যাচ্ছে।

তারা বলেন, একই যোগ্যতায় অনেকে ট্রাফিক ও পরিবহণ বিভাগে ১৪নং স্কেলে চাকরি করছেন। অথচ তাদের ১৭নং স্কেলে চাকরি করতে হচ্ছে। পরিবহণ স্টাফদের চেয়ে রানিং স্টাফরা প্রায় ২৫ শতাংশ কম বেতন পাচ্ছেন।

সংশ্লিষ্টরা জানান, প্রতি মাসে যেখানে রানিং স্টাফরা ১১ হাজার মাইল পেতেন সেখানে সম্প্রতি অর্থ মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপনে ‘আইবাস প্লাস প্লাস সিস্টেমে’ তাদের মাইলেজ নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। এ ক্ষেত্রে তিন হাজার মাইলের বেশি দেওয়া যাবে না বলে উল্লেখ করা হয়েছে। তিন হাজার মাইলের বেশি ট্রেন চালালেও তারা বেশি মাইলের জন্য কোনো ভাতা পাবেন না।

রানিং স্টাফরা জানান, ব্রিটিশ আমল থেকে চলে আসা সুবিধা থেকে বঞ্চিত হওয়ার শঙ্কায় পড়েছেন তারা। সম্প্রতি এ বিষয়ে রেলপথমন্ত্রীসহ রেলওয়ে মহাপরিচালক এবং সংশ্লিষ্টদের কাছে তারা স্মারকলিপি দিয়েছেন।

কিন্তু, এখন পর্যন্ত কার্যকর কোনো ঘোষণা আসেনি। এজন্য রোববার-সোমবারও রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপককে কয়েক ঘণ্টা অবরুদ্ধ করে রাখে রানিং স্টাফদের বেশ কয়েকটি সংগঠন। অপরদিকে পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ে কারখানায় বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা মানববন্ধন করেছেন।

এ বিষয়ে রেলওয়ের দুই অঞ্চলের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা জানান, এ সমস্যার দ্রুত সমাধান না হলে ট্রেন চলাচল বিঘ্নিত হতে পারে। লোকবল স্বল্পতা চরমে। জোর করে রানিং স্টাফদের নির্ধারিত সময়ের বেশি সময় কাজ করাতে হচ্ছে। এ অবস্থায় নতুন নিয়মে বেতন-ভাতা থেকে তারা সুবিধাবঞ্চিত হলে নির্ধারিত সময়ের পর তাদের দিয়ে কাজ করানো সম্ভব হবে না। এতে ট্রেন চালানো কঠিন হয়ে পড়বে।

রেলপথ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, রেল সংস্থাপন কোডের পরিপ্রেক্ষিতে ট্রাফিক রানিং স্টাফ এবং লোকোমোটিভ রানিং স্টাফদের ১৯৯৭ সালের ১ জুলাই থেকে মূল বেতনের ভিত্তিতে রানিং অ্যালাউন্স দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়। ১৯৯৮ সালের ২২ জানুয়ারি তৎকালীন অর্থমন্ত্রী সে প্রস্তাবে স্বাক্ষর করেন। এরই ধারাবাহিকতায় তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রানিং স্টাফদের বিশেষ এ ভাতা প্রদানের প্রস্তাব ১৯৯৮ সালের ২৮ জানুয়ারি অনুমোদন করেন।

কিন্তু সম্প্রতি ইলেকট্রনিক ফান্ড ট্রান্সফারের (ইএফটি) মাধ্যমে বেতন-ভাতা প্রদান প্রক্রিয়ার অন্তর্ভুক্তিতে বিশেষ ভাতা সীমিত করা হয়েছে। যা কোনো অবস্থাতেই মেনে নিচ্ছেন না রানিং স্টাফরা।

ক্ষোভ প্রকাশ করে একাধিক রানিং স্টাফ বলেন, যে কোনো সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী ডিউটি শেষে পরবর্তী ১৬ ঘণ্টা বিশ্রামে যেতে পারেন কিংবা পারিবারিক-সামাজিক কাজে সম্পৃক্ত হতে পারেন। কিন্তু রানিং স্টাফদের কেউই তা পারেন না। স্বাভাবিক সময়ে ট্রেন চালানোর পরও মানবসৃষ্ট ও প্রাকৃতিক, ঈদ-পূজার ছুটির সময় রানিং স্টাফদের ট্রেন নিয়ে ছুটতে হয়। তাদের কোনো ছুটি নেই। সেই বিবেচনায় ব্রিটিশ আমল থেকে রানিং স্টাফরা মাইলেজ পান।

এ বিষয়ে রেলওয়ে মহাপরিচালক ডিএন মজুমদার বলেন, রেলে মাইলেজ প্রথা প্রায় দেড়শ বছর পুরোনো। রানিং স্টাফদের দিয়ে অতিরিক্ত সময় ট্রেন পরিচালনা না করা হলে ট্রেন চলাচল বিঘ্নিত হতে পারে। এ খাতে লোকবল স্বল্পতা সবচেয়ে বেশি। বাধ্য হয়েই তাদের দিয়ে ট্রেন পরিচালনা করতে হচ্ছে। এখন মাইলেজ না দেওয়া হলে স্বাভাবিকভাবেই তারা নির্ধারিত ৮ ঘণ্টা কাজ করবেন। পরবর্তী সময়ে কে ট্রেন চালাবেন? আমরা বিষয়টি নিয়ে বারবার বৈঠক করছি। আশা করছি দ্রুততম সময়ের মধ্যে এর একটা সমাধান হবে। এ সমস্যার সমাধান না হলে ট্রেন পরিচালনায় মারাত্মক বিঘ্ন ঘটবে। তবে আমরা অর্থ মন্ত্রণালয়ের চিঠির বিপরীতে বাস্তব সমস্যাগুলো তুলে ধরে রেলপথ মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছি।

দয়া করে শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরীর আরো খবর..