পুলিশের ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টেবল পদে সাধারণ নারী কোটায় মেধা তালিকায় প্রথম হয়েও চাকরি পাচ্ছেন না খুলনার মীম আক্তার। গতকাল শনিবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে খুলনা পুলিশ সুপার কার্যালয় থেকে তাকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, খুলনায় ‘স্থায়ী ঠিকানা’ না থাকায় চাকরিটি দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। তবে কেন চাকরি হচ্ছে না তা নিয়ে রয়েছে ধোঁয়াশা।
এ বিষয়ে পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মাহবুব হাসান বলেন, ‘মীম স্থায়ী ঠিকানা দিয়েছে খুলনার। কিন্তু সেখানে তার কোনো জায়গা-জমি নেই। তার আসল ঠিকানা বাগেরহাটে। সে ক্ষেত্রে সে তথ্য গোপন করেছে। অপরদিকে মীমের চোখের সমস্যা রয়েছে।’
জানতে চাইলে মীমের বাবা রবিউল ইসলাম বলেন, ‘এখানে আমাদের কোনো জমি নেই। পৈতৃক বাড়ি বাগেরহাট জেলার চিতলমারি থানার বড়বাড়িয়া গ্রামে। আমার বাবা আব্দুল লতিফ শেখ জীবিত আছেন। ভিটে বাড়ির জমি তার নামে। আমার নামে কোনো জমি নেই। এ কারণে আমার মেয়েটার চাকরি হচ্ছে না।’
রবিউল ইসলাম বয়রা ক্রস রোডে বেডিং হাউস নামে লেপ-তোশকের দোকান রয়েছে। তারা থাকেন- সোনাডাঙ্গা থানার তিন নম্বর আবাসিক এলাকার একটি ভাড়া বাসায়।
মীম জানান, পুলিশে কনস্টেবল পদে সাধারণ নারী কোটায় আবেদন করেন। গত ২৫ অক্টোবর থেকে তিনদিন খুলনা শিরোমনি পুলিশ লাইন্সে শারীরিক যোগ্যতা যাচাই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন তিনি। এরপর ২৮ ডিসেম্বর খুলনা সরকারি মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে হওয়া লিখিত পরীক্ষায়ও উত্তীর্ণ হন মীম। মনস্তাত্ত্বিক ও মৌখিক পরীক্ষাতেও উত্তীর্ণ হন। ফল প্রকাশের পর জানতে পারেন, তিনি মেধা তালিকায় প্রথম হয়েছেন। এরপর খুলনা জেলা পুলিশ লাইন্সে সাধারণ মেডিক্যাল পরীক্ষায়ও উত্তীর্ণ হন।
গত ১২ নভেম্বর রাতে তাকে নেওয়া হয় ঢাকার রাজারবাগ পুলিশ লাইন্স হাসপাতালে। সেখানে ১৩ নভেম্বর সকালে মেডিক্যাল পরীক্ষা করা হয়। তারপর খুলনায় ফিরে আসেন তিনি। এরপর পুলিশ ভেরিফিকেশন শুরু হয়। সোনাডাঙ্গা থানা, পুলিশ ফাঁড়ি ও সিটিএসবি থেকে তাদের বাসায় তদন্তে আসে।
মীম বলেন, ‘তাদের কাছে ভূমিহীন সার্টিফিকেট জমা দিয়েছি। ৭ ডিসেম্বর জেলা পুলিশ লাইন্সে ফিঙ্গার প্রিন্ট নেওয়া হয়। এরপর আর কিছুই জানায়নি। ১০ ডিসেম্বর জেলা পুলিশ লাইন্সে খোঁজ নিয়ে কিছু জানতে পারিনি। ১১ ডিসেম্বর খুলনা পুলিশ সুপার কার্যালয়ে যাই। ২-৩ ঘণ্টা অপেক্ষার পর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তানভির আহম্মেদ জানান, আমার সব ঠিক আছে। তবে স্থায়ী ঠিকানা না থাকায় চাকরিটা দিতে পারছেন না।’
এর আগে জমি না থাকায় পুলিশ কনস্টেবল পদে চাকরি পেতে জটিলতা তৈরি হয় বরিশালের হিজলা উপজেলার আসপিয়া ইসলামের। মেধা ও শারীরিক যোগ্যতার সব পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছিলেন। ছিলেন শুধু নিয়োগের অপেক্ষায়। তবে শেষ সময়ে বাধে বিপত্তি। আসপিয়া ও তার পরিবারের কেউ ভূমির মালিক না হওয়ায় ‘পুলিশে তার চাকরি হবে না’ বলে জানানো হয়। পরে প্রশাসনের তৎপরতায় আলোর মুখ দেখার পথে আসপিয়ার পুলিশ হওয়ার স্বপ্ন।