উৎসব ও উত্তেজনার মধ্য দিয়ে রোববার চতুর্থ ধাপের ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত এ ভোটগ্রহণ চলবে। পরে কেন্দ্রে কেন্দ্রে ভোটের ফলাফল গণনা শেষে সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং কর্মকর্তা বেসরকারি ফলাফল ঘোষণা করবেন।
ভোট উপলক্ষে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) পক্ষ থেকে সব ধরনের প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। শনিবার কেন্দ্রে কেন্দ্রে ভোটগ্রহণের সরঞ্জামও পৌঁছে গেছে। বিগত তিন ধাপের ইউপি নির্বাচনে সংঘাত-সহিংসতা ও প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। এখন পর্যন্ত অর্ধশতাধিক প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। ফলে, ভোটকে কেন্দ্র করে উৎসব যেমন বিরাজ করছে; ভোটারদের মধ্যে শঙ্কাও তেমন বিরাজমান। সবশেষ শনিবারও মাগুরার শালিখা উপজেলায় নির্বাচন-পরবর্তী সহিংসতায় একজনের প্রাণহানি ঘটেছে।
চতুর্থ ধাপে ৮৩৬ ইউপির মধ্যে ৩৮ ইউপিতে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোটগ্রহণ করা হবে। এ ভোটের আগেই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন ২৯৫ জন প্রার্থী। বিনা ভোটে নির্বাচিত প্রার্থীরা ছাড়া এ ধাপের ভোটের লড়াইয়ে আছেন ৪৩ হাজার ৪৩৩ জন প্রার্থী। একইসঙ্গে রোববার তিন পৌরসভায় ভোটগ্রহণ করবে ইসি। এ ধাপের ভোট সুষ্ঠু-শান্তিপূর্ণ করতে সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছে নির্বাচন কমিশন। মাঠে রয়েছে পুলিশ, র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) ও বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সদস্যরা। এ ছাড়া নির্বাচনের মাঠ সমান্তরাল রাখতে সংসদ সদস্যদের নির্বাচনি এলাকা ছাড়ার নির্দেশ দিয়েছে ইসি।
এর আগে ভোটের ৩২ ঘণ্টা আগে অর্থাৎ শুক্রবার মধ্যরাতে নিয়ম অনুযায়ী, এসব নির্বাচনি এলাকায় প্রচার শেষ হয়েছে। নির্বাচনি প্রচার শেষেও গভীর রাতে বিভিন্ন এলাকায় সংঘাত-সহিংসতা হয়েছে। নির্বাচনি পরিবেশ নিয়ন্ত্রণে ভোটের মাঠে যেমন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা রয়েছেন, তেমনি ভোটের পরেও তারা থাকবেন। সেই সঙ্গে মাঠে রয়েছেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটও।
ইসি সূত্রে জানা গেছে, চতুর্থ ধাপের ভোটের আগেই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন ২৯৫ জন। তাদের মধ্যে চেয়ারম্যান ৪৮ জন, সংরক্ষিত মহিলা সদস্য ১১২ জন ও সাধারণ সদস্য ১৩৫ জন। বিনা ভোটে নির্বাচিত প্রার্থীরা ছাড়া এ ধাপের ভোটের লড়াইয়ে আছেন ৪৩ হাজার ৪৩৩ জন প্রার্থী। এর মধ্যে চেয়ারম্যান পদে তিন হাজার ৮১৪ জন, সংরক্ষিত সদস্য নয় হাজার ৫১৩ জন ও সাধারণ সদস্য ৩০ হাজার ১০৬ জন প্রার্থী রয়েছেন।
এ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টিসহ বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দল অংশ নিচ্ছে। তবে বিএনপি আনুষ্ঠানিকভাবে ভোটে না থাকলেও স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে দলের নেতাকর্মীরা অংশ নিচ্ছেন। ইউপি ভোটকে কেন্দ্র করে বেশ কিছু নির্বাচনি এলাকায় আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠেছে। পরিস্থিতি সামলে রাখতে নির্বাচন কমিশন আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, প্রশাসন এবং নির্বাচন কর্মকর্তাদের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করেছে। পাশাপাশি সব পক্ষের প্রতি কঠোর হুঁশিয়ারি দিয়ে আসছে সাংবিধানিক সংস্থাটি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনার কবিতা খানম রাতে এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘আমরা এ ধাপের ভোটে সর্বোচ্চ সতর্ক। কোনো ধরনের অনিয়ম হলেই সংশ্লিষ্টরা ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। সেজন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। কোনো কোনো এলাকাকে ঝুঁকিপূর্ণ ধরে সেখানে বেশি বেশি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। এ ছাড়া প্রয়োজনে আরও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হবে। ভোটকেন্দ্রে সহিংসতা করলে, ভোট চুরির চেষ্টা করলে বা ভোটকেন্দ্র দখল করলে ওই ভোট বন্ধ করে দেওয়ার পক্ষে অবস্থান নেব আমরা।
করোনাভাইরাস মহামারি পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ায় ইউপি প্রথম ধাপে গত ২১ জুন ও ২০ সেপ্টেম্বর এবং দ্বিতীয় ধাপে ১১ নভেম্বর, তৃতীয় ধাপে ২৮ নভেম্বর ভোটগ্রহণ করা হয়।
চতুর্থ ধাপে রোববার ৮৩৬ ইউপিতে ভোটগ্রহণ হবে। পঞ্চম ধাপে ৭০৭ ইউপিতে ৫ জানুয়ারি এবং ষষ্ঠ ধাপে ৩১ জানুয়ারি ২১৯ ইউপিতে ভোট হওয়ার কথা রয়েছে।