বরগুনার বেতাগীতে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের দেয়া প্রধানমন্ত্রীর উপহার ‘বীর নিবাস’ নির্মাণে অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে।
মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে সারাদেশের মুক্তিযোদ্ধাদের ঘর উপহার দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বীর মুক্তিযোদ্ধাদের এ উপহার দেয়ায় নামকরণ করা হয় ‘বীর নিবাস’। প্রধানমন্ত্রীর দেয়া এই উপহার বেতাগী উপজেলায় প্রথমধাপে ৯টি ঘর বরাদ্দ দেওয়া হয়, এতে প্রতিটি ঘরে নির্মাণ ব্যয় বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ১৪ লাখ ১০ হাজার ৩৮২ টাকা। দরপত্রের প্রাক্কলন অনুযায়ী গত ৪ নভেম্বর নির্মাণ কাজের উদ্ধোধন করেন বেতাগী উপজেলা প্রশাসন, উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় রাজনৈতিক নের্তৃবৃন্দসহ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাও ।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে বেতাগী পৌরসভার ৮ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. রেজাউল করিম ফারুক শিকদারের বরাদ্দকৃত ঘর নির্মাণে নিম্নমানের ইট, বালু, খোয়া,সিমেন্ট ও নিম্নমানের রড ব্যবহার করা হচ্ছে। নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহার করে তৈরী হচ্ছে প্রধানমন্ত্রীর এ উপহার বীর নিবাস! ইতিমধ্যে তৈরিকৃত দেয়াল অনেকাংশ নির্মাণের পরপরই ভেংগে পড়েছে এবং ভেংগে পড়ার ছবি ও ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইড়ালও হয়েছে। এতে বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. রেজাউল করিম ফারুক শিকদার প্রধানমন্ত্রীর উপহার যেয়ে যতোটা না খুশী হয়েছিলেন কোন দুর্ঘটনা ঘটে কিনা সে চিন্তায় তার থেকে বেশী রয়েছেন এখন দুশ্চিন্তায়! অনিয়মের অভিযোগ দায়ীত্বপ্রাপ্ত স্থানীয় ঠিকাদারের বিরুদ্ধে।
মুক্তিযোদ্ধা রেজাউল করিম ফারুক সিকদার অভিযোগ করে বলেন, ঘর নির্মাণে নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহার হচ্ছে। শেষ বয়সে এসে প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া উপহার ভোগ করতে পারব কি না সন্দেহ আছে!
এ বিষয় মুক্তিযোদ্ধার বড় ছেলে সুজন শিকদার জানান, ঘর নির্মাণ কাজে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করতে দেখে ঠিকাদার নাসিরকে পরিবর্তন করার জন্য অনেক অনুরোধ করা হলেও ঠিকাদার নাসির আমাদের কোন কথা কর্নপাত না করে সে গুলোই ব্যবহার করেছেন।
মুক্তিযোদ্ধার ছোট ছেলে পারভেজ শিকদার বলেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দেয়া একটি উপহার তাতে যদি এমন অনিয়ম হয় তাহলে আমরা কোথায় যাব! আর এ ঘরটি আমাদের কাছে হস্তান্তর করা হলে আমরাতো সকল সদস্যরাই এ ঘরে বসবাস করবো তখন যদি কোন দুর্ঘটনা ঘটে তাহলে তার দায় কে নেবে? আমি এর সুষ্ঠ সমাধান চাই।
বরাদ্দকৃত ‘বীর নিবাস’ প্রকল্পের কাজ পটুয়াখালী জেলার মির্জাগঞ্জ উপজেলার নাসির আহমেদ পাওয়ায় তার কাছ থেকে ওই দরপত্রের প্রাক্কলনটি কিনে নেন বেতাগী উপজেলার নাসির এন্টারপ্রাইজ’ নামের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের স্বত্ত্বাধিকারী তরিকুল ইসলাম নাসির।
এই বিষয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ‘নাসির এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী ঠিকাদার তরিকুল ইসলাম নাসিরের সাথে মুঠোফোনে কথা বলে অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার কাজ প্রায় শেষ পর্যায় এবং দরপত্রের প্রাক্কলন অনুযায়ী কাজ করা হয়েছে তাছাড়া তিনি আরো বলেন গত ১৫ই ফেব্রুয়ারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মহোদয়ও পরিদর্শন করে কাজের প্রশংসা করেছেন, আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ উঠেছে তা ভিত্তিহীন।
ঘর নির্মাণ কাজ তদারকির দায়িত্বে থাকা উপ-সহকারি প্রকৌশলী আব্দুর রহমান জানান, মুজিব শতবর্ষে প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের উপহারের ঘর নির্মাণে কোনো অনিয়ম হলে ঠিকাদারের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুহৃদ সালেহীন বলেন, আমার কাছে একটি অভিযোগ এসেছে এবং সংশ্লিষ্ঠ ঠিকাদারকে তলব করা হয়েছে, অভিযোগের সত্যতা প্রমাণ পেলে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।