বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ০৭:৫৩ পূর্বাহ্ন
শিরোনামঃ
পটুয়াখালী পৌর কৃষকলীগ নেতার আপত্তিকর ভিডিও ভাইরাল! নাগেশ্বরীতে প্রাণী সম্পদ অফিসে টেকনিসিয়ান নিয়োগে অনিয়ম এডিসের লার্ভা পেলে জেল ও জরিমানা করা হবে: ডিএনসিসি মেয়র জলবায়ু অভিযোজনে সফলতার জন্য বিশ্বের ঐক্যবদ্ধ প্রয়াস জরুরি : পরিবেশমন্ত্রী কারিগরি বোর্ডের চেয়ারম্যানকে জিজ্ঞাসাবাদ করবে ডিবি আওয়ামী লীগের শান্তি ও উন্নয়ন সমাবেশ স্থগিত প্রধানমন্ত্রীর থাইল্যান্ড সফরকালে ৫টি দলিল স্বাক্ষর ও বহুমুখী সহযোগিতার সম্ভাবনা : পররাষ্ট্রমন্ত্রী জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় বাংলাদেশ জলবায়ু উন্নয়ন অংশীদারিত্ব গঠন: প্রধানমন্ত্রী যুদ্ধ ব্যয়ের অর্থ জলবায়ুর প্রভাব মোকাবেলায় ব্যবহার হলে বিশ্ব রক্ষা পেত: প্রধানমন্ত্রী কাতারের আমীরকে লাল গালিচা অভ্যর্থনা দেয়া হয় ঢাকা বিমানবন্দরে

এবার ছাইড়া দেন স্যার, মইরা গেলেও আর গাঙ্গে যাইতে দিমু না

সাব্বির আলম বাবু (ভোলা, ব্যুরো চিফ):
  • আপলোডের সময় : রবিবার, ৬ মার্চ, ২০২২
  • ৬০৪২ বার পঠিত

সাব্বির আলম বাবু (ভোলা, ব্যুরো চিফ):

সরকারি নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে মাছ ধরতে মেঘনা ও তেঁতুলিয়া নদীতে নামায় সিদ্দিক মাঝি, নুরুল হক মাঝিসহ ৩৪ জেলেকে আটক করে মৎস্য বিভাগ। ধনিয়া তুলাতুলী মাছঘাট এলাকায় ভ্রাম্যমাণ আদালতে বিচার চলাকালে তাদের সন্তানরা কেঁদে কেঁদে পরিবারের অসহায়ত্বের কথা জানায়। ‘আমরা চাইরডা মানুষ প্রতিবন্ধী। মায় বিছানায় পইড়া রইছে। কয়ডা দিন খাইয়া না খাইয়া রইছি। আব্বায় আমাগো দিকে চাইয়া গাঙ্গে নামছে। আইজগা ছাইড়া দ্যান স্যার। আমরা মইরা গেলেও আর কোনো দিন আব্বারে গাঙ্গে যাইতে দিমু না। নইলে আমাগোরেও লইয়া যান স্যার, আমরাও যামু।’
ভ্রাম্যমাণ আদালতে কাঁদতে কাঁদতে কথাগুলো বলছিল সিদ্দিক মাঝির চার প্রতিবন্ধী সন্তান। ভোলা সদর উপজেলার কাঁচিয়া ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ড বেড়িবাঁধ এলাকার বাসিন্দা তারা।
মেঘনার পাড়ে এমন আকুতি কেবল সিদ্দিক মাঝির সন্তানদের নয়। একইভাবে কান্নায় ভেঙে পড়ে ইলিশা ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের ভাংতিরখাল এলাকার নুরুল হক মাঝির পাঁচ মেয়ে। সবার বড় মেয়েটি কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘স্যার, বাড়ির ছোড ছোড বইন গুলা ভাতের লাইগা কান্দে। আইজ দুই দিন ঘরে ভাত নাই। খিদার জ্বালায় আমরা চুপ থাকতে পারলেও ছোড বইনেরা তো থাকতে পারে না। তাগো মুহের দিকে চাইয়া বাবায় নদীত নামছে। আমাগোরে কোনো ভাই নাই। আইজ মাইয়া না অইয়া যদি পোলা অইতাম তয় কামাই কইরা সংসার চালাইতাম।’ সরকারি নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে শনিবার ভোরে মাছ ধরতে মেঘনা নদীতে নামায় সিদ্দিক মাঝি, নুরুল হক মাঝিসহ ৩৪ জেলেকে আটক করে মৎস্য বিভাগ। ধনিয়া তুলাতুলী মাছঘাট এলাকায় ভ্রাম্যমাণ আদালতে বিচার চলাকালে তাদের সন্তানরা কেঁদে কেঁদে পরিবারের অসহায়ত্বের কথা জানায়। আটক সিদ্দিক মাঝি বলেন, ‘বাড়িত দুই মাইয়া, এক পোলা আর মাইয়ার জামাইডা প্রতিবন্ধী। বউডা প্যারালাইসিস হইয়া বিছানায় পইড়া রইছে। ছয়জনের সংসার চলে আমার এই ছোড জাল সাবারে। বউডার পিছে প্রতিদিন প্রায় ৫০০ টাকার ওষুধ লাগে। এনজিও থেকে লোন নিয়া জাল সাবার করছি। প্রতি সপ্তাহে এনজিওর স্যারেরা আইয়া টাকা চায়। প্রতিবন্ধী পোলাইনডি না খাইয়া থাহে। এনজিও লোনের টাকা ও পোলাইনের দিকে চাইয়া কোনো কূলকিনারা না পাইয়া গাঙ্গে নামছি।’
একইভাবে নুরুল হক মাঝি বলেন, ‘পাঁচ মাইয়ার মইধ্যে বড়ডারে মহাজনের তোনে টাকা ধার লইয়া যৌতুক দিয়া বিয়া দিছি। এহন ওই টাকার লাইগা মহাজন তাগাদা দিতাছে। নদীত গেলে আমাগো পেট চলে। নদীত যদি না যাইতে পারি তাইলে পেট চালামু কেমনে। আমার ঘরে কামাই করার মতো আর কেউ নাই। অন্য কোনো কাম জানি না। বড় ঠ্যাকা ঠেইকা নদীত নামছি। এখন স্যারেরা ধইরা লইয়া আইছে।’
জেলা মৎস্য বিভাগ সূত্রে জানা যায়, মৎস্য বিভাগ অভিযান চালিয়ে মেঘনা ও তেঁতুলিয়া নদীর বিভিন্ন পয়েন্ট থেকে ৩৪ জনকে আটক করে। তাদের মধ্যে ভোলা সদরে ২৯ জন ও চরফ্যাশনে পাঁচজন রয়েছেন। জব্দ করা হয়েছে ২০ কেজি ইলিশ ও ১০ হাজার মিটার কারেন্ট জাল। পরে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সালেহ আহমেদ ১৬ জেলেকে ২০ দিন করে জেল ও ১৩ জেলেকে ৫ হাজার টাকা করে জরিমানা করেন। পাশাপাশি জব্দকৃত জাল পুড়িয়ে দেয়া হয়। আর মাছ স্থানীয় মাদ্রাসা ও এতিমখানায় বিতরণ করা হয়। মৎস্য বিভাগ জানায়, এ নিয়ে পাঁচ দিনে জেলায় মোট ৯৫ জেলেকে আটক করা হয়েছে। পাশাপাশি লক্ষাধিক মিটার অবৈধ কারেন্ট জাল, ৩৫টি অবৈধ বিহুন্দি জাল ও ৩০০ কেজি মাছ জব্দ করা হয়েছে। জেলা মৎস্য কর্মকর্তা এস এম আজহারুল ইসলাম জানান, উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে ভোলার মেঘনা ও তেঁতুলিয়া নদীর ১৯০ কিলোমিটার এলাকায় ইলিশের অভয়াশ্রমে মার্চ-এপ্রিল দুই মাস ইলিশসহ সব ধরনের মাছ ধরা নিষিদ্ধ করেছে সরকার। এর অংশ হিসেবে ভোলা জেলা মৎস্য বিভাগের অভিযান চলছে।
মৎস্য বিভাগের নিয়মিত অভিযানের অংশ হিসেবে পৃথক দুটি টিম মেঘনা ও তেঁতুলিয়া নদীতে অভিযান চালায়। এ সময় মেঘনার কাঠির মাথা, ইলিশা ও তুলাতলী থেকে ২৯ জন এবং চরফ্যাশনের তেঁতুলিয়া থেকে পাঁচজনকে আটক করা হয়।

দয়া করে শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরীর আরো খবর..