আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
ইউক্রেনে রাশিয়ার সর্বাত্মক অভিযান শুরু হয়েছে প্রায় দুই সপ্তাহ হতে চলল। পূর্ব ইউরোপের এই দেশটিতে রুশ আক্রমণের প্রায় প্রথম থেকে মস্কোর বিরুদ্ধে একের পর এক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র-যুক্তরাজ্যসহ পশ্চিমা দেশগুলো। অবশ্য আক্রমণ থেকে রাশিয়া যে পিছু হটেছে তা বলা যাবে না।
এই পরিস্থিতিতে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে পরাজিত করতে ছয় দফা পরিকল্পনা ঘোষণা করেছেন যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন। একইসঙ্গে ইউক্রেনে রাশিয়ার পরাজয় নিশ্চিত করতে নতুন উদ্যমে ঝাঁপিয়ে পড়তে বিশ্বনেতাদের প্রতি আহ্বানও জানিয়েছেন তিনি। রোববার (৬ মার্চ) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইউক্রেনে রাশিয়ার ‘ভয়াবহ আক্রমণ’ ব্যর্থ করার জন্য প্রেসিডেন্ট পুতিনের ওপর চাপ বাড়াতেই এই ছয় দফা পরিকল্পনা তৈরি করেছেন বরিস জনসন। এই ছয় দফা পরিকল্পনার মধ্যে রয়েছে-
এক. বিশ্ব নেতাদের ইউক্রেনের জন্য একটি ‘আন্তর্জাতিক মানবিক জোট’ গঠন করতে হবে।
দুই. ‘নিজেদের আত্মরক্ষার জন্যই’ তাদের (দেশগুলোর) উচিত ইউক্রেনকে সমর্থন করা।
তিন. রাশিয়ার ওপর অর্থনৈতিক চাপ বাড়াতে হবে।
চার. আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে অবশ্যই ইউক্রেনে রাশিয়ার চলমান কর্মকাণ্ডকে প্রতিরোধ করতে হবে।
পাঁচ. যুদ্ধ বন্ধে কূটনৈতিক সমাধানের পথ অবশ্যই অনুসরণ করতে হবে। এবং সেটি হতে হবে কেবল ইউক্রেনের বৈধ সরকারের পূর্ণ অংশগ্রহণের মাধ্যমই।
ছয়. সামরিক জোট ন্যাটোর অন্তর্ভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে ‘নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা’ আরও জোরদার করার জন্য একটি দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া উচিত।
বিবিসি বলছে, ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন ডাউনিং স্ট্রিটে সোমবার (৭ মার্চ) কানাডার প্রধানমন্ত্রী জান্টিন ট্রুডো এবং ডাচ প্রধানমন্ত্রী মার্ক রুটের সঙ্গে বৈঠক করবেন বরিস জনসন। বিশ্ব রাজনীতির উত্তেজনাকর পরিস্থিতির মধ্যে অনুষ্ঠিতব্য এই বৈঠকে কানাডীয় ও ডাচ প্রধানমন্ত্রীর কাছে বরিস জনসন তার বার্তা পৌঁছে দেবেন বলে মনে করা হচ্ছে।
উল্লেখ্য, গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ভোরে ইউক্রেনে ঢুকে হামলা শুরু করে রাশিয়ান সৈন্যরা। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপের প্রথম দেশ হিসেবে রাশিয়ার সশস্ত্র বাহিনী স্থল, আকাশ ও সমুদ্রপথে ইউক্রেনে এই হামলা শুরু করে। একসঙ্গে তিন দিক দিয়ে হওয়া এই হামলায় ইউক্রেনের বিভিন্ন শহরে রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র পড়েছে বৃষ্টির মতো।
সর্বাত্মক হামলা শুরুর পর এই এক সপ্তাহেই পূর্ব ইউরোপের এই দেশটির বহু শহর কার্যত ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়েছে। সামরিক অবকাঠামোর বাইরে রাশিয়ার হামলার লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়েছে আবাসিক ভবন, স্কুল ও হাসপাতাল। আর তাই জীবন বাঁচাতে দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন ১০ লাখেরও বেশি ইউক্রেনীয়।
ইউক্রেনে রুশ এই সামরিক উপস্থিতিকে মস্কো হামলা বা যুদ্ধ না বলে শুরু থেকে ‘বিশেষ অভিযান’ বলে দাবি করে আসছে। যদিও রুশ সেনারা ইউক্রেনের সামরিক-বেসামরিক স্থাপনাগুলোতে হামলা করছে বলে অভিযোগ রয়েছে। জবাবে রাশিয়ার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞার খড়গ আরোপ অব্যাহত রেখেছে পশ্চিমা দেশগুলো।