মঙ্গলবার, ২২ অক্টোবর ২০২৪, ০৫:৩০ অপরাহ্ন

জয় বাংলা স্লোগান দেওয়ায় মুক্তিকামী মানুষকে হত্যা করে হানাদাররা: প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক:
  • আপলোডের সময় : মঙ্গলবার, ১৫ মার্চ, ২০২২
  • ৫৯২৯ বার পঠিত
ফাইল ছবি

নিজস্ব প্রতিবেদক:

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, জয় বাংলা স্লোগান দেওয়ায় ১৯৭১ সালে অনেক মুক্তিকামী মানুষকে পাকিস্তানি হানাদাররা হত্যা করেছে। তবে সে মানুষগুলো জয় বাংলা স্লোগান দিয়েই বুকের তাজা রক্ত ঢেলে বাংলাদেশের স্বাধীনতার পথ সুগম করে গেছেন।

সোমবার সন্ধ্যায় বনানীর হোটেল শেরাটনে আয়োজিত ‘জয় বাংলা’ শীর্ষক এক অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। জয় বাংলাকে জাতীয় স্লোগান ঘোষণা করার বিষয়টি উদযাপন করতে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকস এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। প্রধানমন্ত্রী তাঁর সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি অনুষ্ঠানে যুক্ত হন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে শেখ হাসিনা বলেন, ‘জয় বাংলা’ স্লোগান আমাদের মুক্তির স্লোগান, আমাদের সংগ্রামের স্লোগান। জয় বাংলা স্লোগান মুক্তিযুদ্ধের স্লোগান। জয় বাংলা স্লোগানের মধ্য দিয়ে আমরা বিজয় অর্জন করেছি।

এ স্লোগান আমাদের মুক্তিযোদ্ধাদের বুকে এত শক্তি দিয়েছিল যে তারা শত্রু মোকাবিলা করতে এক সেকেন্ডও দ্বিধা করেনি। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী যখন এখানে গণহত্যা চালাচ্ছে, নির্যাতন চালাচ্ছে, যখন মুক্তিযোদ্ধারা ধরা পড়েছে, আমাদের মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের কেউ ধরা পড়েছে তাদের উপরে নির্যাতন করা হয়েছে এ জয় বাংলা স্লোগান যেন না দেয়। কিন্তু তারা জয়বাংলা স্লোগান দিয়ে, বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিয়ে আমাদের বিজয়ের পথ সৃষ্টি করে দিয়ে গেছেন। কিন্তু দুর্ভাগ্য আমাদের, আমরা বিজয় অর্জন করার পর সেই স্লোগানটিই আর কারো কাছে থাকল না। এটা কোন কথা হলো? সেটাই আমরা দেখেছি ১৯৭৫ সালের পর।

বঙ্গবন্ধু কন্যা বলেন, ৭ই মার্চের ভাষণে বঙ্গবন্ধু সম্পূর্ণ দিকনির্দেশনা দিয়ে গেছেন। তার ভাষণে গেরিলা যুদ্ধ করার দিকনির্দেশনা যেমন ছিল, তেমনি স্বাধীনতার কথা বলে গেছেন। অপরদিকে অর্থনৈতিক মুক্তি অর্জনের কথা বলে গেছেন। এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম আমাদের স্বাধীনতার সংগ্রাম। ‘জয় বাংলা’ বলে তিনি ভাষণ শেষ করেছিলেন। বাঙালির যে জয় হবে সে বিষয়ে তিনি নিশ্চিত ছিলেন। তার এই দূরদর্শিতা ছিল আমাদের সকল অর্জনের মূল শক্তি এবং তিনি সেটাই করে গেছেন। বারবার বাধা পেয়েছেন, বারবার কারাবরণ করেছেন, তাকে ফাঁসি দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছিল। পাকিস্তানিরা রাষ্ট্রদ্রোহী মামলা দিয়ে ফাঁসির আদেশ পর্যন্ত দিয়েছিল।

শেখ হাসিনা বলেন, আমি জানি না পৃথিবীর কোনো দেশে এমন আছে কি না। স্বাধীনতার মাত্র তিন বছরের মধ্যে একটি যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশ গড়ে তুলে সেটিকে তিনি স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে উন্নীত করে রেখে যান। দুর্ভাগ্যের বিষয় হলো, আমাদের মুক্তি সংগ্রামের সময় যেমন অপপ্রচার চলছিল, স্বাধীনতা অর্জনের পরেও সেটা থেমে থাকেনি। স্বাধীনতা বিরোধীদের চক্রান্ত সবসময়ই ছিল। অনেক ষড়যন্ত্র করেও তারা মানুষের হৃদয় থেকে বঙ্গবন্ধু নাম মুছতে পারেনি। তখনই কিন্তু চরম আঘাত এলো। ১৫ই আগস্ট, সেদিন শুধু জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে হত্যা করেনি। সারাটা জীবন পাশে থেকে সহযোগিতা করেছিলেন আমার মা, তাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। আমার ছোট ভাই কামাল মুক্তিযোদ্ধা, মুক্তিযোদ্ধা আরেক ছোট ভাই শেখ জামাল, তাদের দুই স্ত্রী, আমার চাচা- কাউকে রেহাই দেয়নি। আমাদের পরিবারের ১৮ জন সদস্য এবং কাজের লোকজনসহ সবাইকে হত্যা করে। এই হত্যার পর থেকেই এ স্লোগান (জয় বাংলা) নিষিদ্ধ হয়ে গেল।

সরকারপ্রধান বলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতায় যারা বিশ্বাস করে, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় যারা বিশ্বাসী, তারা এটাকে ধরে রেখেছিল। একটা সময় নানা ধরনের সমালোচনা শুনতে হয়েছে। আমরা সত্যটা ধরে রাখতে পেরেছিলাম বলেই আজ এটি জাতীয়ভাবে স্বীকৃতি পেয়েছে। আপনাদের ধন্যবাদ জানাই, আপনাদের মধ্য দিয়ে আমরা এটাই মানুষের কাছে পৌঁছাতে চাই যে আমরা বিজয়ী জাতি, আমরা বিজয় অর্জন করেছি। মাথা নত করে আমরা চলি না। মাথা নত করে চলব না।

জয় বাংলাকে জাতীয় স্লোগান হিসেবে ঘোষণা করার প্রস্তাব করেছিলেন প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক উপদেষ্টা ও ঢাকা-১ আসনের সংসদ সদস্য সালমান এফ রহমান।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়ে তিনি বলেন, ২০১৯ সালের ৯ মার্চ জাতীয় সংসদে আমার প্রথম বক্তৃতায় প্রস্তাব করেছিলাম, জয় বাংলাকে জাতীয় স্লোগান করার। প্রধানমন্ত্রী, আমি আপনাকে ধন্যবাদ জানাই, ইতোমধ্যে এটি মন্ত্রিসভায় অনুমোদন হয়েছে এবং গেজেটও হয়ে গেছে।

দয়া করে শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরীর আরো খবর..