আসাদুজ্জামান সজীবঃ
ড. মুহিব আহমেদ শাহীন একজন বিশিষ্ট সমাজ সেবক, কাজ করেন সমাজের অবহেলিত জনগোষ্ঠীকে নিয়ে এর মধ্যে রয়েছে পথ শিশু এতিম ও অবহেলিত সকল ধরনের শিশু ও মানুষ। যারা বিভিন্ন পার্কে, বস্তিতে, রাস্তায় ও বিভিন্ন জায়গায় আশ্রয়হীন হয়ে জীবন যাপন করছেন। তিনি সবসময় ভাবেন তাদেরকে নিয়ে কিভাবে তাদের একটু সহযোগীতা করা যায়, কিভাবে তাদের দু-বেলা দু-মুঠো আহাড় করানো যায়, কিভাবে তাদের মধ্যে একটু শিক্ষার আলো পৌছে দেয়া যায়। বিডি পিপলস নিউজ ডট কম ও দ্য কান্ট্রি টুডের সাথে একান্ত সাক্ষাৎকারে উঠে এসেছে তার এসব সামাজিক কর্মকান্ড ও ভবিষ্যৎ চিন্তা-চেতনা।
ড. মুহিব ২০০৭ সালে হেপাটাইটিস বি রোগে আক্রান্ত হন এবং তার চিকিৎসক তাকে জানিয়ে দেন যে, সে আর বেশী দিন হয়তো এই পৃথিবীতে থাকবেন না! তারপরেও চিকিৎসাতো করতেই হবে যার কারনে তার চিকিৎসা বাবদ প্রতিদিন প্রায় ৬০০-১০০০ টাকার মেডিসিন গ্রহন করতে হতো। এভাবে কিছুদিন যাওয়ার পরে তিনি চিন্তা করলেন “আমিতো আর পৃথিবীতে বেশীদিন বেচেঁ থাকবো না! তাহলে প্রতিদিন এত টাকা খরচ করে লাভ কি! এমন চিন্তা থেকেই শুধুমাত্র একটি মেডিসিন গ্রহন করে বাকী মেডিসিনগুলোর খরচের টাকা দিয়েই প্রতিদিন মাত্র পাচঁশত টাকা বাজেট ধরে শুরু করেন পথ শিশুদের নিয়ে পরিকল্পনা। কয়েকমাস এভাবে চলার পরে ২০০৭ সালের শেষের দিকে ঢাকার পান্থপথে প্রথম পথশিশুদের জন্য একটি স্কুল প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে শুরু হয় ব্যাপক আকারে তার কাজ। তারই ধারাবাহিকতায় এ পর্যন্ত ৪২ টি স্কুল প্রতিষ্ঠা করেছেন। আর তার এ কার্যক্রম আজও চলমান, চলবে থাকবেন যতোদিন বেচেঁ।
এছাড়াও ড.মুহিব কাজ করেন বিভিন্ন ইসলামিক প্রতিষ্ঠানের একাডেমিক ভবন, মসজিদ, মাদ্রাসা, ওযু খানা ও গভীর নলকুপ স্থাপন নিয়ে, তিনি ইতিমধ্যে আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থা ইপিএস ফাউন্ডেশন ও বরিশাল সমাজ গ্রাম ও শহর উন্নয়ন সংস্থার মাধ্যমে এখন পর্যন্ত ৪২ টি স্কুল, ৪২ টি মসজিদ, প্রায় ১০০০ টি ওযু খানা ও প্রায় ৫০,০০০ গভীর নলকুপ স্থাপন করেছেন।
ড. মুহিব সমাজসেক হিসেবে স্বীকৃতি ছাড়াও তরুণ শিল্প উদ্যোক্তা হিসেবে ইতিমধ্যে দেশ ও দেশের গণ্ডি পেরিয়ে অর্জন করেছেন ব্যাপক সু-খ্যাতি।
তিনি একাধিক প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক। তার মধ্যে রয়েছে মানহা এন্টারপ্রাইজ, তানহা টেক্সটাইল, সাফওয়ান ফার্ম হাউস, মানহা ডেইরি এন্ড এগ্রো, গুজেল বিডি, ম্যান এন্ড ই কমার্স ফোরাম, আল বাইয়িক ইন্টারন্যাশনাল ও টিমাস ইন্টারন্যাশনাল, নিউনেস ল্যাবরেটরি স্কুল অ্যান্ড কলেজ, বরিশাল স্বপ্নীল ল্যাবরেটরি স্কুল, লায়ন শিমলা টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ, বগুড়া পথকলি স্কুল, ঢাকা তানহা মহিলা হিফজ মাদ্রাসা, বরগুনা দারুল কুরআন মডেল মাদ্রাসা, বরগুনা মাদরাসাতুল হাসানা, বরিশাল তানহা মহিলা কওমি মাদ্রাসা, বরগুনা মাওঃ বজলুর রহমান ফাউন্ডেশন, বরগুনা প্রসপেক্ট ওয়েল ফেয়ার ট্রাষ্ট, বরিশাল সমাজ গ্রাম ও শহর উন্নয়ন সংস্থা, ঢাকা সার্ফ দ্যা ফিউচার সোসাইটি, ঢাকা মাওঃ বজলুর রহমান ফাউন্ডেশন, বরগুনা উন্নয়ন ফোরাম, আন নাহদা মডেল মাদ্রাসা, ঢাকা আন নাহদা ফাউন্ডেশনসহ ঢাকা তানহা হেল্থ কেয়ার পয়েন্টের চেয়ারম্যান, ইপিএস ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক হিসেবে ও ঢাকা অটিজম সাপোর্ট এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়ে দায়িত্ব পালন করছেন।
বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি, বাংলাদেশ হিউম্যান রাইটস কমিশন, বাংলাদেশ ডায়েবিটিস সমিতি, উম্মাহ ফাউন্ডেশন, কাতার গ্লোবাল ট্যাম্পেল ফাউন্ডেশন, ভারত বাংলাদেশ লায়ন্স ফাউন্ডেশন, বিএসটিএমপিআই, লায়ন্স ক্লাব অব ঢাকা মেট্রোপলিটনের আজীবন সদস্য হিসেবে নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন ড. মুহিব।
ড. মুহিব ১৯৮৮ সালের ১ জানুয়ারি বরগুনা জেলার বেতাগী উপজেলার মোকামিয়া গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করে। তার বাবা প্রয়াত হযরত মাওলানা বজলুর রহমান ছিলেন একজন প্রখ্যাত আলেম ও দক্ষিণবঙ্গের অন্যতম ইসলামী চিন্তাবিদ ও ওয়াজ মাহফিলের মাধ্যমে ইসলাম ধর্ম প্রচারে ছিলো তার ব্যাপক সু-খ্যাতি।
আদর্শিক পিতার যোগ্য সন্তান ড. মুহিব প্রাথমিক শিক্ষা লাভ করেন দক্ষিনবঙ্গের ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠান করুনা মোকামিয়া কামিল মাদ্রাসা থেকে এবং একই প্রতিষ্ঠান থেকে মাধ্যমিকে জেলা পর্যায়ে ১ম গ্রেডে বৃত্তি লাভ করেন। দাখিল ও আলিমেও ছিল দেশ সেরাদের মধ্যে অন্যতম । এরপরে ঐতিহ্যবাহী ঢাকা কলেজ থেকে সমাজবিজ্ঞানে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। পাশাপাশি বামনা উপজেলার বামনা সদর অর রশিদ ফাজিল মাদ্রাসা থেকে স্নাতক সমমান (ফাজিল) ও ঢাকা সরকারী আলিয়া মাদ্রাসা থেকে স্নাতকোত্তর সমমান (কামিল) সম্পন্ন করেন কৃতিত্বের সাথে ।
পরবর্তীতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর ও এমফিল ডিগ্রি অর্জন করেন। পাশাপাশি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিনে এল এলবি ও এল এল এম ডিগ্রি অর্জন করেন। সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিশেষ অবদান রাখায় ড. মুহিব আহমেদ শাহিনকে ন্যাশনাল ভার্চুয়াল ইউনিভার্সিটি ফর পিস এন্ড এডুকেশন সম্মান সূচক ডক্টরেট ডিগ্রি প্রদান করেন। লিঙ্কন ইউনিভার্সিটি অব মালয়েশিয়া থেকে চাইল্ড এন্ড উইম্যান সাইকোলজিতে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন ড. মুহিব আহমেদ শাহিন।
ব্যক্তি জীবনে ড. মুহিব আহমেদ শাহিন এক ছেলে ও এক কন্যা সন্তানের পিতা।