বরগুনা প্রতিনিধি:
শোক দিবসে এমপির সামনেই ছাত্রলীগকে লাঠিপেটার বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করেছে বরগুনা জেলা আওয়ামী লীগ। একই সময়ে জেলার উপজেলাগুলোতেও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (এএসপি) মহররম আলীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবিতে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালিত হয়।
মঙ্গলবার (১৬ আগস্ট) রাত ৮টার দিকে জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয় থেকে এক বিক্ষোভ মিছিল বের হয়। মিছিলটি শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে পৌর মার্কেটের সামনে এসে শেষ হয়। এখানেই পথসভা করে জেলা আওয়ামী লীগ। এরপর এএসপি মহররম আলীর কুশপুত্তলিকা দাহ করা হয়।
বিক্ষোভ ও পথসভায় উপস্থিত ছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির, সাংগাঠনিক সম্পাদক গোলাম সারোয়ার টুকু, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আব্বাস হোসেন মন্টু, পৌর মেয়র কামরুল আহসান মহারাজ, সদস্য মশিউর রহমান শিহাব, যুবলীগের সভাপতি রেজাউল কবির এ্যাটম, সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি জুবায়ের আদনান অনিকসহ আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের একাংশের নেতারা। এ সময় এএসপির বরখাস্ত ও তার বিচারের দাবি জানান বক্তারা।
পথসভায় বক্তব্যে বরগুনা-১ আসনের সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু বলেন, এই মহররম ছাত্রদলের কর্মী ছিলেন। তার বাবা-চাচা বিএনপির নেতা ছিলেন। তিনি উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে আমাদের ছাত্রলীগকে পিটিয়েছে। শুধু প্রত্যাহার করলেই আমরা সব ভুলে যাব না। আমরা ওই মহররমের বরখাস্ত ও বিচার চাই।
এমপি শম্ভু বলেন, কালকের ঘটনা অত্যন্ত বেদনাদায়ক। আমাদের ছেলেদের কোনো দোষ ছিল না। তবু নির্বিচারে পেটানো হয়েছে তাদের। মহররম আলীর নেতৃত্বে পুলিশ এমন জঘন্য কাণ্ড ঘটিয়েছে। আমরা এ ঘটনায় জড়িতদের বিচার চাই। এ ঘটনায় যারা আহত হয়েছে, তাদের চিকিৎসার সব ভার বহন করবে জেলা আওয়ামী লীগ। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশকে নিজ হাতে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। তার এই অগ্রযাত্রায় বাধা দিতে কুচক্রীরা এখনো সক্রিয়।
এ সময় অন্য বক্তারা বলেন, বরগুনার ইতিহাসে সবচেয়ে নোংরা কমিটি হয়েছে এবার। জেলা আওয়ামী লীগের সঙ্গে কাউন্সেলিং না করে অযোগ্যদের দিয়ে কমিটি করা হয়েছে। আজ যোগ্যরা কমিটিতে থাকলে এত কিছু হতো না। আজ থেকে এই কমিটি বরগুনায় অবাঞ্ছিত করা হলো। এই কমিটি স্থগিত করে ছাত্রলীগের নতুন কমিটি দেওয়ার দাবি জানান তারা।
প্রসঙ্গত, ১৫ আগস্ট দুপুর ১২টার দিকে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৭তম শাহাদাতবার্ষিকী উপলক্ষে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি কমপ্লেক্সে ফুল দিতে যান জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি রেজাউল কবির রেজা ও সাধারণ সম্পাদক তৌশিকুর রহমান ইমরান। বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ শেষে ফেরার সময় শিল্পকলা একাডেমির সামনে পৌঁছালে ছাত্রলীগের পদবঞ্চিত গ্রুপের সদস্যরা তাদের ওপর হামলা চালায়।
এতে দুই গ্রুপের নেতা-কর্মীরা সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। এ সময় পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে লাঠিচার্জ করে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এতে আহত হন শতাধিক।
এ ঘটনায় আজ মঙ্গলবার আলোচিত এএসপি মহররম আলীকে প্রত্যাহার করে বরিশাল ডিআইজির কার্যালয়ে নেওয়া হয়। এরপর বিকেলে বিষয়টি খতিয়ে দেখতে দুই সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সংসদ।
এর আগে আট বছর পর গত ১৭ জুলাই বরগুনা শহরের সিরাজ উদ্দীন টাউন হল মিলনায়তনে বরগুনা জেলা ছাত্রলীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। ২৪ জুলাই রাতে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক জেলা ছাত্রলীগের নতুন কমিটির অনুমোদন দেন। এতে জেলা কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ ৩৩ সদস্যের নাম প্রকাশ করা হয়। এরপর থেকেই সদ্য ঘোষিত এ কমিটি প্রত্যাখ্যান করে বরগুনা শহরে পদবঞ্চিতরা প্রতিবাদ জানাতে থাকে।