পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জ উপজেলার ৩ নং আমড়াগাছিয়া ইউনিয়ন পরিষদের উপ- নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে আগামী ২ নভেম্বর। এ উপ-নির্বাচনকে কেন্দ্র করে এলাকায় চরম উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা ও আতঙ্ক বিরাজ করছে । তারই ধারাবাহিকতায় স্বতন্ত্র প্রার্থী এ্যড. মোস্তাফিজ সুষ্ঠু ভোট হবে কি না তা নিয়ে শংশয় প্রকাশ করেছেন। অভিযোগের তীর বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ মনোনীত ও নৌকা প্রতীক পাওয়া প্রার্থী শাহেদুল ইসলাম সোহেল আহমেদের বিরুদ্ধে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে জানা গেছে, গত ১১ সেপ্টেম্বর মির্জাগঞ্জ উপজেলার আমড়াগাছিয়া ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান সুলতান আহম্মেদের মৃত্যুর পর ওই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান পদটি শূন্য থাকায় গত ২৫ সেপ্টেম্বর উপজেলার ৩ নং আমড়াগাছিয়া ইউনিয়ন পরিষদের শুধুমাত্র চেয়ারম্যান পদের জন্য উপ-নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেন নির্বাচন কমিশন।
গত ১৭ অক্টোবর প্রতীক বরাদ্দের পরপরই প্রার্থীদের প্রচার-প্রচারণা শুরু হয়। তবে প্রচারণার শুরুতেই নৌকা মার্কার প্রার্থী সোহেলের বিরদ্ধে নানা অভিযোগ তোলেন বিদ্রোহী প্রার্থী মোস্তাফিজ, রয়েছে একে অপরের বিরুদ্ধে পাল্টাপাল্টি অভিযোগও।
স্বতন্ত্র প্রার্থী এটিএম মোস্তাফিজুর রহমানের কর্মী জহীরুল ইসলাম খন্দকার বলেন আমি রবিবার (২৩ অক্টোবর) উত্তর সুবিধখালী ক্যাম্পিনে গেলে নৌকার সমর্থকরা আমাকে ধমকাইছে আর বলছে আমি কেন মোটর সাইকেল প্রতিকে ভোট চাই বলে আমাকে অনেক ধমকা-ধমকী করছে।
তার আরেক কর্মী কাওছার ভূইয়া বলেন রবিবার (২৩ অক্টোবর) বিকেলে ময়দা বাজারে বসে নৌকার সমর্থকরা আমি মোস্তাফিজ ভাইর পক্ষে কাজ করি এ জন্য আমাকে অকথ্য ভাষায় গালা-গালি করছে আর বলছে শালার ভাই শালা সেন্টারে যাবি না সেন্টারে গেলে খবর আছে।
স্বতন্ত্র প্রার্থীর মাইকিং এর দায়িত্বে থাকা আসলাম মাতুব্বর বলেন রবিবার (২৩ অক্টোবর) সাদে মুন্সির বাড়ীর স্কুলের সামনে দিয়ে মাইকিং করতে করতে যাইতেছিলাম কিন্তু সেখানে থাকা প্রায় ১৫-২০ জন নৌকার সমর্থকরা আমাদের অটোর সামনে এসে বলে যে গাড়ি আর ওদিকে যাবে না মাইকিং বন্ধ কর, সামনে আর যাইতে পারবি না। একপর্যায়ে বাধ্য হয়ে আমরা মাইকিং বন্ধ করে চলে আসি।
স্বতন্ত্র প্রার্থী এটিএম মোস্তাফিজুর রহমান জানান, এই ইউনিয়নে আমার ব্যাপক জনসমর্থন থাকায় ঈর্ষাণীত হয়ে বৃহস্পতিবার (২০.১০.২২) সকাল ১০টার দিকে নৌকা মার্কার প্রার্থী সোহেল নিজেই কতিপয় বহিরাগত লোকজন নিয়ে আমার বাসায় হঠাৎ ঢুকে আকস্মিক হামলা চালায়।
বাসার সামনে আমার সমর্থকদের বসার জন্য রাখা চেয়ার টেবিলসহ বাসার আসবাসপত্র ভাঙচুর করে। এ সময় আমার স্ত্রী বাধা দিলে তাকেও শ্লীলতাহানি করে। আমার সন্তানদের বাসা থেকে বের করে দিয়ে আমার স্ত্রীকে সোহেল বলেন, আধা ঘণ্টার মধ্যে তোর স্বামী মোস্তাফিজকে (আমাকে) এলাকা ছেড়ে যেতে বলবি।
এ ছাড়াও আমিসহ আমার সর্মথকদের গুম করে ফেলার হুমকিও দেন আ’লীগ প্রার্থী সোহেল। তাছাড়া তিনি এখনো বিভিন্ন মাধ্যমে আমাকে ও আমার সমর্থকদেরকে বিভিন্ন ধরনের হুমকী-দামকী অব্যাহত রেখেছেন। আমার নেতা কর্মীরা ক্যাম্পিনে গেলে তাদের থ্রেট দেয়, ভয় দেখায়, ধাক্কা দেয়াসহ বিভিন্ন ধরনের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছেন। বর্তমানে আমি, আমার পরিবার ও আমার সমর্থকরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। তবে যাই হোক না কেন আমি আমার স্থান থেকে একপাও নড়বো না এবং সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে আমি ব্যাপক ভোটের ব্যবধানে বিজয়ী হবো ইনশা-আল্লাহ।
মোস্তাফিজ আরও বলেন, এ ঘটনায় আমি রিটার্নিং অফিসার, উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা (নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট)-সহ নির্বাচন পরিচালনাকারী সকল কর্মকর্তা ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে জানানো হয়েছে। আমি পটুয়াখালী জেলা প্রশাসন ও উপজেলা প্রশাসনের কাছে সবিনয়ে অনুরোধ জানাবো তারা যাতে আমড়াগাছিয়া ইউনিয়েনের জনগনকে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন উপহার দেন।
এ বিষয়ে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শাহেদুল ইসলাম সোহেল অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন এগুলা আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা গুজব ছড়াচ্ছে, নির্বাচনী মাঠে বিভিন্ন আইন প্রয়োগকারী সংস্থা রয়েছে তারা সব কিছু দেখছেন। আমার নির্বাচনকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য ঐ প্রার্থী এসব মিথ্যা অভিযোগ করছেন।
মির্জাগঞ্জ উপজেলা রিটার্নিং অফিসার মো. শাহাদাৎ হোসেন বলেন, একজন স্বতন্ত্র প্রার্থীর নিকট থেকে একটি লিখিত অভিযোগ পেয়ে তদন্ত করার পরে কিছুটা সত্যতা পেয়ে অভিযুক্ত প্রার্থীকে শোকজ করা হয়েছে এবং সে মর্মে সেই প্রার্থী আবার লিখিত জবাব দিয়ে গেছেন। আমরা চেষ্টা করছি যাতে সুন্দর একটি নির্বাচন উপহার দেয়া যায়।
মির্জাগঞ্জ থানার ওসি আনোয়ার হোসেন তালুকদার বলেন দুপক্ষ থেকেই পাল্টা-পাল্টি অভিযোগ দিয়েছে। এখানে কে হবে না হবে সেটা নিয়ে আমাদের কোন মাথা ব্যাথা নেই। পুরো ইউনিয়ন আমাদের পুলিশ সদস্য দিয়ে ঘেরাও করা রয়েছে এবং নির্বাচনে যাতে কোন ধরনের আইন-শৃঙ্খলার অবনতি না হয় সে বিষয়ে মির্জাগঞ্জ থানা পুলিশ সর্বদা প্রস্তুত রয়েছ।
মির্জাগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান খান মোঃ আবু বকর সিদ্দিকী বলেন কয়েকদিন আগের একটি ঘটনা জানি পরবর্তীতে কিছু হয়ে থাকলে সেটা জানিনা, নির্বাচন নিয়ে কোন অভিযোগ থাকলে সেটা উপজেলা নির্বাচন অফিসার দেখবেন।
পটুয়াখালী জেলা নির্বাচন অফিসার খান আবি শাহানুর খান বলেন হ্যা আমি শুনেছি এবং উপজেলা রিটার্নিং অফিসার ব্যবস্থা নিয়েছে, নৌকার প্রার্থীর কাছে ব্যাখ্যা চেয়ে চিঠিও দেয়া হয়েছে। তাছাড়া উক্ত ঘটনা তদন্তের জন্য উপজেলা রিটার্নিং অফিসারের পক্ষ থেকে মির্জাগঞ্জ থানার ওসি সাহেবকেও চিঠি দেয়া হয়েছে।
মির্জাগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মোসাঃ তানিয়া ফেরদৌস বলেন আমার কাছে একটি অভিযোগ আসছিলো আমি সেটা উপজেলা রিটার্নিং অফিসারের কাছে পাঠিয়েছি সে এটার ব্যবস্থা নিবে।
পটুয়াখালী জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ কামাল হোসেন বলেন নির্বাচন যাতে অবাধ ও সুষ্ঠু হয় এবং কোন ধরনের সমস্যা যাতে না হয় সে জন্য আমরা কাজ করছি।