কুয়াশায় ঘেরা জনপদ ভোলা। কনকনে শীতে কাতর মানুষ। এ শীতকে শত্রু নয় বরং কিভাবে উপভোগ করা যায়, সে চেষ্টা করে গ্রামের মানুষজন। খেজুর রসের সেমাই রান্না করে খাওয়া বা রস দিয়ে পিঠার সঙ্গে খাওয়া, কিংবা রাতের আঁধারে কাঁচা রস খেয়ে শীতের মজা নিতে দেখা যায় অনেককেই। কেউ শীতের পিঠা তৈরিতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। কেউ রসুয়া-জিলাপি আর বাদাম খানার আড্ডা জমান। কিন্তু যত কিছুরই আয়োজন করা হোক না কেন, শীতে হাঁস না খেতে পারলে যেন আসল খাবার মিস।
তাই গ্রামাঞ্চলে হাঁসের মাংসের আয়োজন যেন চোখে পড়ার মতোই। পারিবারিক ভাবে হাঁস রান্না করে খেলেও হাঁস খেতে ভিন্ন আয়োজনের আসর জমান এসব অঞ্চলের তরুণরা। বিশেষ করে বন্ধুমহলের বন্ধুরা শীত এলেই হাঁস খেতে বেশ আগ্রহী হয়ে ওঠেন। হাঁস পার্টি নামে হাঁস খাওয়ার দারুণ আড্ডা জমান তারা। এতে বন্ধুবান্ধবের মাঝে একদিকে যেমন সুসম্পর্ক সৃষ্টি হয়, অন্যদিকে শীতকালে হাঁস খাওয়ার মাধ্যমে শরীরে যেন ভিন্ন শক্তি সঞ্চারিত হয়। শুধু বন্ধুদের পার্টিতেই নয় অতিথি আপ্যায়নেও হাঁসের মাংশ চাহিদা ব্যাপক।
শীতে হাঁস খাওয়া মানে শরীর-স্বাস্থ্যকে চাঙা ও সতেজ করে তোলা। এমন ধারার প্রচলনের দেখা মিলে উপকূল অঞ্চলের অন্যতম জেলা ভোলায়। শীতের আগমনের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত এখানে বেশ জমজমাট ভাবে হাঁস খাওয়া হয়।
হাঁস রান্নার জন্য সুন্দর রেসিপি তৈরি করতে বাজার থেকে ভালো মসলাও কেনেন মানুষজন। এমন রেওয়াজ এ অঞ্চলের সর্বত্রই দেখা যায়। শীতকাল এলেই হাঁসের স্বাদ যেন দ্বিগুণ হয়ে ওঠে। শীতে মানুষের শরীরটা যখন খুব নিস্তেজ হয়ে পড়ে, ঠিক তখনি হাঁসের মাংসের দারুণ স্বাদে শরীর গরম হয়। গ্রাম থেকে কোথাও মানুষ দীর্ঘমেয়াদী কোনো কাজ করতে গেলে হাঁস খেয়ে যান। যেমন ইটভাটার শ্রমিকরা। ছয় মাস তারা বাড়িতে থাকেন না। এ সময় কঠোর পরিশ্রম করতে হয় এ শ্রমিকদের। তাই কাজ যেন ঠিকমতো করতে পারে, সেজন্য হাঁস খেতে বেশ তৎপর থাকেন তারা। শীতে হাঁস খাবার দারুণ হাঁস পার্টি যে চলে, তার চমৎকার সব দৃশ্য দেখা যায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। প্রতিনিয়ত কেউ না কেউ হাঁস খাওয়ার ছবি এতে পোস্ট করছেন।
অভিজ্ঞদের মতে, হাঁসের মাংস খাওয়ার উপকারিতা অনেক আর শীতকাল হচ্ছে এর জন্য উপযুক্ত সময়। হাঁস পালনকারী মানুষ এবং হাঁস বিক্রেতাদের এ নিয়ে পরিকল্পনা থাকে বহু আগ থেকে। পরিপুষ্ট প্রতিটি হাঁসের মূল্য ৫শ থেকে ৬শ টাকা। গ্রামের মেঠোপথ গুলোতে চোখ ফেরালে হাঁস বিক্রেতাদের দেখা মিলে। যারা মাথায় হাঁস বহন করে বিক্রি করেন। গ্রামাঞ্চলে ফসল উৎপাদন করা হয় বলে হাঁস চাষে বেশ লাভবান হচ্ছেন মানুষ। নিজেদের চাহিদা মিটিয়ে কেউ কেউ তা বেশ ভালো দামেই বিক্রি করেন।
হাঁসের মাংস খাওয়া নিয়ে গল্প হচ্ছিল স্থানীয় চিকিৎসক খুরশীদ আলম চৌধুরীর সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘শীতকালে হাঁসে বেশি চর্বি জমা হয়। আর শীতকালে হাঁস খাওয়া এজন্যই যে, শীতে হাঁস খাওয়ার মজাই আলাদা। শীতকালের হাঁসের মাংস বেশ উপভোগ্য হয়।’