শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:৪৮ পূর্বাহ্ন
শিরোনামঃ
তাড়াইলে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের দাওয়াতি মজলিস ও মতবিনিময় সভা মুরাদনগরে মাটিখেকোদের বিরুদ্ধে রাতের আঁধারে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান বরিশাইল্লা বউ : লুৎফুন্নেসা রহমান মোঃ রায়হান চৌধুরী, মুরাদনগর (কুমিল্লা) প্রতিনিধিঃ মুরাদনগরে প্রান্তিক কৃষকদের মাঝে বীজ ও সার বিতরণ বেতাগীতে প্রেমের প্রস্তাবে ব্যর্থ হয়ে কুপিয়ে জখম : যুবক গ্রেফতার শেখ হাসিনাকে ভারত থেকে ফেরত চাইব : অধ্যাপক ইউনূস সংস্কারের সিদ্ধান্ত হয়ে গেলে খুব দ্রুত নির্বাচনী রোডম্যাপ : অধ্যাপক ইউনূস তাড়াইলে অনৈসলামিক কর্মকান্ড বন্ধের দাবিতে ইমাম-উলামা পরিষদের প্রতিবাদ তাড়াইলে আলেম-উলামা ও তাওহীদি জনতার ব্যনারে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত

শুদ্ধাচার ভাবনা: এস.এম.আক্তারুজ্জামান, ডিআইজি বরিশাল রেঞ্জ

এস.এম আক্তারুজ্জামান: ডেপুটি ইন্সপেক্টর জেনারেল অব পুলিশ (ডিআইজি)
  • আপলোডের সময় : বুধবার, ২১ ডিসেম্বর, ২০২২
  • ৫৯২৯ বার পঠিত
এস.এম আক্তারুজ্জামান: ডেপুটি ইন্সপেক্টর জেনারেল অব পুলিশ (ডিআইজি)
গত ৩০/১১/২০২২ তারিখে বরিশালে এসেছেন সন্মানিত কেবিনেট সচিব মহোদয় সরকারি সফরে: বরিশাল বিভাগের সরকারি কর্মকর্তা/কর্মচারিদেরকে সুশাসন এবং শুদ্ধাচার শিখাতে এবং এতে উজ্জীবিত করতে।
তিনি বিমানে বরিশালের মাটিতে অবতরণ করেছেন বিকাল ৫:০০ ঘটিকায় এবং ৫:০১ থেকেই কাজ শুরু করেন।কেবিনেটের আওতাধীন প্রায় সকল দফতরের প্রধানগন ফুলের তোড়া নিয়ে হাজির ছিলেন বিমানবন্দরে। তিনি মাত্র একটি ফুল নিলেন, দ্রুত গাড়িতে উঠে সার্কিট হাউজের দিকে রওয়ানা হলেন। উনার সফর-যুক্ত ছিলেন আরোও ৫/৬ জন সচিব এবং সমমানের কর্মকর্তা।
আজ বিদায় নিলেন তিনি একই রুটে। এই দুই দিন বরিশাল এবং ঝালকাঠিতে তিনটি বড় আলোচনা সভা বা প্রশিক্ষন কর্মসূচী সম্পন্ন করেন। প্রতিটি অনুষ্ঠানে তিনি ২/৩ ঘন্টা ক্লাশ নিয়েছেন সরকারের তথা বাংলাদেশের উন্নয়নের লক্ষ্য, কর্মসূচি এবং পরিকল্পনা নিয়ে। উনার ক্লাশে এই প্রথম এটেন্ড করার সুযোগ পাই।
উনার মুল বক্তব্য ছিল সরকারের সবাই একসাথে একযোগে সরকার এবং জনগনের কল্যাণে সততা এবং আন্তরিকতা নিয়ে কাজ করা।এর জন্য উনি জোড় দিয়েছেন শুদ্ধাচার’এর উপর।
শুদ্ধাচার বিষয়টি আমার কাছে ভাল লেগেছে।এটা নিয়ে সরকারের আলাদা কর্মসূচি আছে। সবাই এটাকে একপ্রকার আনুষ্ঠানিকতা হিসেবেই ট্রীট করে, দূর থেকে অনুধাবণ করা হয়। শুদ্ধাচার বলতে স্যার বুঝিয়েছেন নিজের প্রতি নিজের জবাবদিহিতা। মানে কেউ দেখলেও, না বললেও নিজের উপর অর্পিত কাজ বা দায়িত্ব নিয়মানুযায়ী সম্পাদন করা।
এই সেল্ফ-কনসাসনেস এবং সেল্ফ-জবাবদিহিতা বাড়ানোর জন্য তিনি জোড় দিয়েছেন নীতিনৈতিকতার উপর। তিনি একজন রিক্সাচালকের উদাহরন দিয়েছিলেন যে একটি মানিব্যাগ খুজে পেয়ে তার মালিককে ফোন করে ফেরত দিয়েছিলেন। মানিব্যাগে ছিল নগদ ১০,০০০ টাকা, আইডি কার্ড। গ্রহিতা খুশি হয়ে তাকে নগদ ৫০০০ টাকা দিতে চাইলেও সে নেয়নি।
সেই মহান রিক্সাচালকের নাম ছিল আবু বকর। যে গ্রহিতাকে একটি হাদিস শুনিয়েছিল, যার মর্মকথা ছিল, একজন মানুষের কষ্ট/অস্থিরতা দূর করাই হল শ্রেষ্ট কর্ম, উত্তম ধর্ম। মানুষকে কষ্ঠ দিয়ে, জুলুম করে, অধিকার হরন করে ধর্ম বা শাসন হয়না। আমাদেরকে এই চেতনায় উজ্জীবিত হতে তিনি আমাদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন, অনুরোধ করেছেন। আমি শুদ্ধাচার বিষয়টিকে অন্যভাবে উপস্থাপন করতে চাই।
মানুষ হিসেবে আমাদের কাজ করতে হয়। নিজের চাহিদা মিটিয়ে অন্যের চাহিদা মিটাইতে হয়। আমরা কাজ করি এককভাবে বা সম্মিলিতভাবে। নিজের কাজ করি অথবা অন্যের কাজ করে জীবিকা অর্জন করি। এই সামাজিক এবং অর্থনৈতিক কর্মব্যাবস্থাপনার কয়েকটি পদ্ধতি বা ফিলোসোফি আছে।
প্রথমটি হল একক-জবাবদিহিতাবাদ। এর মানে হল প্রতিটি মানুষ তার উপর অর্পিত বা ধার্য কাজগুলি সে নিজেই অনুপ্রাণিত হয়ে বা অভ্যাসের দাসের মত করে ফেলবে। এটা একরকম মেশিনের মত। অন্যকেউ করল কি করলনা, দেখল বা দেখলনা তা সে চিন্তাই করবেনা। সে মনে করবে তার কাজটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং এই কাজটি না করলে তার এবং সমাজের বা দেশের অপুরনীয় ক্ষতি হয়ে যাবে। এই রকম মানুষগুলি হল পরিবার, সমাজ, দেশের এবং পৃথিবীর মূল সম্পদ। এই জমানা এখনো আছে কিছু কিছু দেশে যেমন জাপান, জার্মান এবং টাইটানিকের বাশিওয়ালা।
এর পরেই এসেছিল অদৃশ্য-ভয়বাদ। অদৃশ্য শ্রষ্টা মানুষকে কাজ বা দায়িত্ব ধরিয়ে দিল এবং বলল যে উনি সব দেখেন, লিখে রাখেন। উনার কথামত কাজ না করলে তিনি অভিশাপ বা শাস্তি দিবেন এই জীবনে অথবা পরকালে। যাকে আমরা ধর্মীয় অনুশাসন বা ব্যাবস্থাপনা বলি। এই জমানা আরব অথবা মধ্যপ্রাচ্যে এসে আবার চলে গিয়েছে।
৩য় ধাপে আসে আধুনিক ব্যাবস্থাপনা: সুপারভিশন বা মনিটরিং সমৃদ্ধ ব্যাবস্থাপনা। এটা আবার দুই প্রকার: সিস্টেমিক এবং কৌশলগত। এই পদ্ধতিতে উচ্চ পদের কর্মকর্তারা নীচের কর্মকর্তাকে কাজ শিখাবে, কাজ করার পরিবেশ করে দিবে এবং কাজ আদায় করে নিবেঃ টপ ডাউন। এই ফিলোসোফির মুল চালিকা হল টপমোষ্ট ব্যাক্তি বা নেতা। কালক্রমে মাথা পচতে শুরু করলে আসে নুতন পদ্ধতি। এরাই এক পর্যায়ে প্রচার শুরু করল ডাউনের অংশগ্রহন ছাড়া কাজ সম্পাদন সম্ভব নয়।
চেক এন্ড ব্যালেন্স: অর্থ্যাৎ দায়িত্ব এবং খমতা আলাদা করার প্রক্রিয়াঃ একজনের হাতে বন্দুক, আরেক জনের হাতে গুলির আদেশ দেয়া বা গুলি জাস্টিফাই করার ক্ষমতা। রাষ্ট, সমাজ, প্রতিষ্ঠান একক সত্তা থেকে বহু অংশে বিভক্ত হল। একজন আইনকানুন তৈরি করবে, আরেকজন প্রয়োগ করবে, আরেকজন জবাবদিহিতা নিশ্চিত করবে। এক পর্যায়ে সবাই ভুলে গেল তাদের কর্ম।
তারপর আসল, এক্সটারনাল ওয়াচডগ। জন্ম হল গোয়ন্দা সংস্থার, কর্ম এবং অকর্ম কমিশন। যারা কাজ শিখাবে এবং আকাজ ধরবে এবং শাস্তি দিবে। কালের বিবর্তনে উনারাও ব্যার্থ হল।
এরপর আসল প্রতিযোগিতা, বাজার পদ্ধতি। সরকার তার আয়তন কমিয়ে বাজারে চলে আসবে। সরকার প্রতিযোগিতা করবে বাজারের সাথে। অথবা এক কাজ করবে দুই ব্যাক্তি বা প্রতিষ্ঠান, যে ভাল করবে সে টিকে থাকবে। কিন্তু দেখা গেল, দুই জন বা দুই প্রতিষ্ঠানই তার নিজের বাজার তৈরি করল, রাষ্ট্র বা সমাজের কথা চিন্তা করল না। এখন আর কি করা? ব্যাক টু দি ব্যাসিক।
নিজের কাজ নিজে না করলে নিজের বা সমাজের অস্তিত্ব থাকবেনা। সুতরাং শুদ্ধাচারে ব্রত হতে হবে আমাদেরকে। এরসাথে যোগ হতে পারে অদৃশ্য সত্তার প্রতি বিশ্বাস। তবে অদৃশ্য সত্তার অভিশাপ বা হস্তক্ষেপ যেহেতু সবাই দেখতে পায়না, তাই উনাকে ফাকি দিয়ে চলে অশুদ্ধাচার। অনেকে বলেন আমরা গডলেস পৃথিবীতে বাস করি।
তবে, মনে রাখবেন প্রতিটি ক্রিয়ারই তার সমান এবং বিপরীত প্রতিক্রিয়া আছে। সো, নাথিং উইল গো আনপেইড অর আনপানিশড।

দয়া করে শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরীর আরো খবর..