কুমিল্লায় পরকীয়া প্রেমের জের ধরে পরিবহন নেতা রেজাউল করিম প্রকাশ্যে রাজা মিয়াকে হত্যার দায়ে তিনজনের মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে কুমিল্লার আদালত।
বুধবার (১২ এপ্রিল) দুপুরে কুমিল্লার বিজ্ঞ অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ পঞ্চম আদালতের বিচারক জাহাঙ্গীর হোসেন এ রায় দেন।
মামলার বিবরণে জানা যায়- মুন্সিগঞ্জ জেলার গজারিয়া উপজেলার পুরাতন চরচাষি ছায়েদ আলী মুন্সী বাড়ীর মৃত ছোয়াব আলী বেপারীর ছেলে মৃত মোঃ রেজাউল করিম @ রাজা মিয়া তার স্ত্রী ও দুই সন্তান নিয়ে তাহার শ্বশুর সাবেক কাউন্সিলর আঃ আউয়াল মিয়ার ঘরের উত্তর পাশে জমি ক্রয় করে বাড়ী নির্মাণ করে বসবাস করাকালীন সময়ে দাউদকান্দি বাসষ্ট্যান্ডে গজারিয়া পরিবহন মালিক সমিতির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদে কর্মরত থাকিয়া নিজ মালিকানাধীন ০২টি বাস এর মালিক হইয়া ব্যবসা পরিচালনা করিয়া আসাবস্থায় মৃত মোঃ রেজাউল করিম @ রাজা মিয়ার চাচা আঃ রউফ দাউদকান্দি উপজেলাধীন দোনারচর গ্রামে বসবাসরত অবস্থায় ২০১৪ সালের ১২ জুন রাত সাড়ে ১০টায় আঃ রউফ মৃত্যুর সংবাদ পেয়ে মৃত রাজা মিয়াকে জানাতে মোবাইলে ফোন করে না পেয়ে এজাহারকারী ঐ রাতে দোনারচর চলে যান। এর পরদিন ১৩ জুন এজহারকারীর ছেলে সোহাগ মিয়া (১৮) ফোন করে জানায় মৃত রাজা মিয়াকে আঃ আউয়াল কমিশনারের বসত ঘরের পশ্চিম পাশে উঠানে কে বা কাহারা মারিয়া ফেলিয়া রাখিয়াছে। সংবাদ পেয়ে এজহারকারী খাজা মিয়া ঘটনাস্থলে এসে দেখেন উঠানের পূর্বদিকে মাথা, পশ্চিম দিকে পা চিৎ অবস্থায় মৃত দেহ মাটিতে পড়ে আছে এবং ক্ষত স্থান হইতে রক্ত ক্ষরণ হয়ে মাটির অনেকাংশ ভিজিয়া গেছে। তৎপর মৃত্যর বিষয়ে খোঁজখবর নিয়ে ২০১৪ সালের ১৪ জুন ভিকটিম রেজাউল করিম @ রাজা মিয়ার বড়ভাই মুন্সিগঞ্জ জেলার গজারিয়া উপজেলার পুরাতন চরচাষি ছায়েদ আলী মুন্সী বাড়ীর মৃত ছোয়াব আলী বেপারীর ছেলে মোঃ খাজা মিয়া (৪৮) বাদী হয়ে ২০১৪ সালের ১২ জুন রাত সাড়ে ১০টা হতে ১৩ জুন ভোর ৫টা পর্যন্ত যেকোন সময়ে পরকীয়া প্রেমের জেরধরে রাজা মিয়াকে হত্যার অভিযোগ এনে অজ্ঞাতনামা আসামি করে দঃ বিঃ ৩০২/৩৪ ধারার বিধান মতে দাউদকান্দি থানায় একটি হত্যা মামলা রুজু করেন। পুলিশ সন্ধেহজনভাবে মৃত রাজা মিয়ার স্ত্রী আলো আক্তারকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদে ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে অপর দুই আসামী তাপস চন্দ্র শীল ও রাসেদ এর নাম বলেন। এরপর পুলিশ অপর দুই আসামিকে গ্রেফতার করিলে সকল আসামিই বিজ্ঞ আদালতে ফৌঃ কাঃ বিঃ আইনের১৬৪ ধারার বিধানমতে স্বীকারোক্তিমুলক জবানবন্দি প্রদান করিলে দাউদকান্দি থানার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই রঞ্জন কুমার ঘোষ মামলার ঘটনার তদন্ত শেষে ২০১৪ সালের ৩ নভেম্বর বিজ্ঞ আদালতে আসামীগণের বিরুদ্ধে চার্জশীট দাখিল করেন। তৎপর বিজ্ঞ আদালত ২০১৫ সালের ২৭ মে আসামীদের বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করিলে রাষ্ট্রপক্ষে মানীত ২১জন সাক্ষীর মধ্যে ১৩জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ শেষে যুক্তিতর্ক শুনানী অন্তে এবং স্বীকারোক্তিমুলক জবানবন্দি পর্যালোচনাক্রমে পলাতক আসামী তাপস চন্দ্র শীল, পলাতক আসামি মোসাঃ আলো আক্তার এবং আসামি মোঃ রাসেদকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ প্রদান করেন আদালত। রায় ঘোষনাকালে আসামি রাসেদ ডকে উপস্থিত ছিলেন এবং অপর আসামি মোসাঃ আলো আক্তার ও তাপস চন্দ্র শীল পলাতক রয়েছেন।
দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন- কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলার দক্ষিণ সতানন্দি গ্রামের শান্তি রঞ্জন শীলের ছেলে তাপস চন্দ্র শীল (২৫), একই দক্ষিণ সতানন্দি গ্রামের আউয়াল কমিশনারের বাড়ীর মৃত রেজাউল করিম প্রকাশ রাজা মিয়া স্ত্রী মোসাঃ আলো আক্তার (৩০) এবং একই জেলার চান্দিনা উপজেলার বশিকপুর গ্রামের দক্ষিণ পাড়া জয়নাল মেম্বার বাড়ীর আঃ সামাদ প্রকাশ্যে সামাদ সরকার এর ছেলে মোঃ রাসেদ (২৮)।
রাষ্ট্র পক্ষে মামলা পরিচালনা করেন এপিপি এড. মোঃ নজরুল ইসলাম এবং আসামী পক্ষে মামলা পরিচালনা করেন এড. নোমান ও এড. মাসুদ সালাউদ্দিন।
এদিকে, রায়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করে এপিপি নজরুল বলেন- এরফলে ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। মামলার এজাহারকারী এবং রাষ্ট্রপক্ষ শীঘ্রই রায় কার্যকর করার জন্য জোর দাবী জানান।
অপরদিকে, আসামী পক্ষের বিজ্ঞ কৌশলী বিজ্ঞ এডভোকেট মোঃ মাসুদ সালাউদ্দিন বলেন- এ রায়ে আসামী পক্ষ ক্ষুদ্ধ। রায়ের কপি হাতে পেয়ে উচ্চ আদালতে আপীল করা হবে।