কিশোরগঞ্জের তাড়াইল উপজেলার বিভিন্ন এলাকার ফসলের মাঠে সোনালী ধানের সমারোহ। রোদ আর হিমেল বাতাসে ফসলের মাঠে মাঠে দোল খাচ্ছে কৃষকের সোনালী স্বপ্ন। এখন ফসলের মাঠ সবুজ বর্ণ থেকে হলুদ বর্ণ ধারন করার অপেক্ষা। আর মাত্র ক’দিনের মধ্যেই কৃষকেরা তাদের নতুন ফসল ঘরে তুলবে। এবার বোরো ধানের বাম্পার ফলনের ধান কাটার আগমুহূর্তে ধানের শীষ পরিচর্যায় ব্যাস্ত সময় পার করছেন কৃষকরা।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, এ বছর উপজেলায় লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১০ হাজার ১০০ হেক্টর এবং অর্জন ১০ হাজার ২০০ শত ৭৫ হেক্টর। এছাড়া কৃষি অফিস থেকে বিভিন্ন কৃষককে বিনামূল্যে উন্নত মানের বীজ, সার, কীটনাশক সহায়তা, সুবিধা ও পরামর্শ দেয়া হয়েছে। উপজেলার ৭ টি ইউনিয়নের ফসলের মাঠে বোরো ধানের শীষ দোল খাচ্ছে। এবছর নতুন জাতের ধান ব্রি-৮৯, ব্রি-৯২, উফসি-২৯ জাতের ধান রোপন করা হয়েছে। এছাড়াও ব্রি-২৮, ২৯ জাতের ধানও মাঠে দেখা গেছে। অনেক জায়গায় ধান কাটা শুরু হয়ে গেছে। ধান কাটার জন্য শ্রমিকের পাশাপাশি রয়েছে প্রায় ২৪টি ধান কাটার মেশিন। মেশিনে খরচ অনেক কম হওয়ায় বেশিরভাগ কৃষক মেশিন দিয়েই ধান কাটাচ্ছে।
বোরগাও গ্রামের মহর উদ্দিন জানান, আমাদের মাঠে সব ধান ফুলে ঝারা দিয়েছে, আর মাত্র ক’দিন পরেই মাঠের অধিকাংশ ধান পাকতে শুরু করবে। এই ধানের শীষ দেখে মনে হয় এবার ফসলের বাম্পার ফলন হবে। একই গ্রামের আরেক কৃষক আঃ কদ্দুস বলেন, আমাদের মাঠে প্রচুর পরিমাণ ধান চাষ করা হয়েছে। অন্যান্য বছরের তুলনায় এবছর বড় বড় ধানের শীষ দেখা যায়। প্রাকৃতিক দুর্যোগে কোনো সমস্যা না হলে এবছর আশা করছি অন্যান্য বছরের তুলনায় অনেক বেশি ফলন হবে।
বেলংকা গ্রামের ইদ্রিস মিয়া জানান, আমি ৮ বিঘা জমিতে বোরো ধান চাষ করেছি। অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার প্রত্যেকটি খেতে আমার প্রচুর ধানের শীষ দেখা যাচ্ছে। এবছর বাম্পার ফলনের আশা করছি আমি। তহিদুল ইসলাম জানান, আমার ধান অনেক ভাল হয়েছে। কিন্তু আসছে সামনে কালবৈশাখী ঝড়, এই ঝড়ে যদি কোন ক্ষতি না হয় তাহলে আমি বিঘা প্রতি ৩৫ হতে ৩৬ মন ধান পওয়ার আশা করছি।
এছাড়া সরোজমিনে ঘুরে দেখা যায়, উপজেলার জাওয়ার, ধলা, দামিহা, দিগদাইড়, ঘোষপাড়া, দেওথান, মোল্লাপাড়া, খালপাড়, আড়াইউড়া, চিকনি, গাবতলি, দড়িজাহাঙ্গীরপুর, পাইকপাড়া, হিজলজানি বিল, পদ্মা বিল, আগারখাল বাগার বিল, সেকান্দরনগর, রাহেলা, হাছলা, রাউতি, মেছগাঁও, কাজলা, সিংধাসহ উপজেলার সব এলাকার মাঠ গুলোতে একি চিত্র দেখা গিয়েছে। বোরো ধানের আবাদ হচ্ছে আর ক’দিন পরেই কৃষক ধান কাটবে এবং বাম্পার ফলনের আশা করছেন স্থানীয় কৃষকরা।
তাড়াইল উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আশরাফুল আলম জানান, আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে চলতি বছর লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত ফসল উৎপাদন হবে। উপজেলার ১০ হাজার ১’শ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ করা হয়েছে। বড় ধরনের ঝড়, বৃষ্টি অথবা শিলাবৃষ্টি না হলে বোরো ধানের বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়া কৃষি অফিস থেকে নিয়মিত কৃষকদের সার্বক্ষণিক পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। কাজেই কৃষক সঠিক সময় ফসল কেটে ঘরে তুলতে পারবেন বলে আশা করছি।
তিনি আরো জানান, ইতিমধ্যেই প্রায় ২২% বোরো ধান কর্তন সম্পন্ন হয়েছে। তাছাড়াও এ উপজেলায় সরকারি ভর্তুকি ধান কাটার মেশিন বিতরণ করা হয়েছে তাদের প্রায় ২৪টি মেশিন বর্তমানে ধান কাটায় নিয়জিত আছে। একেকটি মেশিন ২ ঘন্টায় প্রায় ১ একর ধান কাটতে পারে। সে হিসেবে প্রতিদিন গড়ে ১০-১২ একর ধান কাটতে পারছে। যেখানে শ্রমিক লাগবে ৪-৫ হাজার ও সময় লাগবে ২-৩ দিন। মেশিনে ধান কাটার ফলে কৃষকেরা এক দিনেই ধান কেটে মাড়াই করে পরিস্কার অবস্থায় ঘরে তুলতে পারছে। তাছাড়াও শ্রমিক দিয়ে ১ একর ধান কাটতে যেখানে ৯০০০ টাকা লাগে সেখানে মেশিনে কাটলে ৩-৪ হাজার টাকার মধ্যেই সম্পন্ন করতে পারছে। এতে কৃষকের খরচের হার অনেক কমে যাচ্ছে। ১০-১৫ মে’র মধ্যেই উপজেলার সকল ধান কাটা শেষ হবে বলে আশা করেন তিনি।