বৃহস্পতিবার, ০২ মে ২০২৪, ০২:৩৩ পূর্বাহ্ন
শিরোনামঃ
ডিএসইসি’র প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক রাইজিং বিডির আরিফ আহমেদ কিশোরগঞ্জে আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস উপলক্ষে ইসলামী শ্রমিক আন্দোলনের র‍্যালি অনুষ্ঠিত কিশোরগঞ্জের হাওরে কৃষকদের মাঝে ইসলামী ছাত্র আন্দোলনের শরবত ও ঠান্ডা পানি বিতরণ ডিএসইসি’র সভাপতি অনিক সম্পাদক জাওহার ইকবাল মির্জাগঞ্জে কৃষি জমিতে সেচ দিতে গিয়ে যুবক ফিরলো লাশ হয়ে আকাশ: কবি মাহফুজ রকি মির্জাগঞ্জে প্রাইমারি ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি নির্বাচিত শান্তা মনি দেশ ও জনগণের জন্য কাজ করতে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের প্রতি প্রধানমন্ত্রীর আহ্বান উপজেলা নির্বাচন: হরিরামপুরে জনপ্রিয়তার শীর্ষে দেওয়ান সাইদুর মির্জাগঞ্জে পুলিশ কর্মকর্তার বিচারের দাবিতে মানববন্ধন

বাঙালির চেতনা ও আধুনিক স্থাপত্যের নিদর্শন ভোলার স্বাধীনতা জাদুঘর

সাব্বির আলম বাবু (ভোলা ব্যুরো চিফ):
  • আপলোডের সময় : মঙ্গলবার, ১৩ ডিসেম্বর, ২০২২
  • ৫৮৪৬ বার পঠিত

বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনের সাক্ষী হয়ে উঠেছে ভোলার স্বাধীনতা জাদুঘর। নতুন প্রজন্মের কাছে জ্ঞানার্জনের তথ্য-ভাণ্ডার এটি। তিনতলা বিশিষ্ট আধুনিক স্থাপত্যশৈলীর নিদর্শন ও দৃষ্টিনন্দন এই জাদুঘর বাঙালির ঐতিহ্য আর চেতনার প্রতীক বলে মনে করছেন দর্শনার্থীরা।

দৃষ্টিনন্দন এই স্বাধীনতা জাদুঘর গড়ে তোলেছেন মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ও ৬৯ এর গণ-অভ্যুত্থানের মহানায়ক বঙ্গবন্ধুর স্নেহধন্য সাবেক মন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ।

২০১৮ সালে ২৫ জানুয়ারি মহামান্য রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। সেই থেকে এখানে দর্শনার্থীদের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা পর্যটকসহ যেকেউ ভোলায় এলেই একবার ছুটে যান ওই জাদুঘরে।
জেলা শহরের উপশহর খ্যাত মুক্তিযুদ্ধের কালের সাক্ষী ( যেখানে পাক সেনাদের আক্রমণ ও সম্মুখ যুদ্ধে মারা যান তিন শতাধিক মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিকামী মানুষ) ওই বাংলাবাজারেই জাদুঘরটি স্থাপন করা হয়। জাতীয় নেতা তোফায়েল আহমেদ এমন একটি জাদুঘর তৈরির স্বপ্ন দেখছিলেন বহুকাল আগে থেকে। প্রখ্যাত ইতিহাসবিদ ড. মুনতাসীর মামুনসহ বেশ কয়েকজন গবেষকদের সহায়তায় টানা তিন বছরের পরিকল্পনায় এর বিন্যাস গড়ে ওঠে।

বর্তমানে নিরলস পরিশ্রমে জাদুঘরটি অন্যতম সংগ্রহশালায় পরিণত হয়েছে। নতুন প্রজন্মের কাছে ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন, দেশ বিভক্ত, ভাষা আন্দোলন, স্বাধীনতাযুদ্ধ, বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন সবটাই স্থান পেয়েছে এ জাদুঘরে।

এতে তিনটি গ্যালারি রয়েছে। প্রথম তলার গ্যালারিতে এক পাশে ইতিহাস ঐতিহ্য, প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন, ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন, ৪৭ এ দেশ ভাগ ও ভাষা আন্দোলনের দুর্লভ ছবি, তথ্য রয়েছে। অপর পাশে রয়েছে লাইব্রেরি ও গবেষণাগার। এছাড়া ওই একই তলায় রয়েছে মাল্টিমিডিয়া ডিসপ্লে হল রুম। দ্বিতীয় তলায় রয়েছে ভাষা আন্দোলন থেকে মুক্তিযুদ্ধের আগ পর্যন্ত ইতিহাসের মুহূর্তগুলোর চিত্রকল্প। তৃতীয় তলায় রয়েছে যুক্তফ্রন্ট, ৫৮’র আন্দোলন, পাকিস্তানের সামরিক শাসন, ৬৬টির আন্দোলন, ৬৯’র গণ-আন্দোলন, ৭০ এর নির্বাচন, ৭ মার্চের ভাষণ , ৭১ এর যুদ্ধ, বঙ্গবন্ধুর আত্মত্যাগের দুর্লভ আলোকচিত্র।

এছাড়া রয়েছে বঙ্গবন্ধুর সব ভাষণের অডিও ও ভিডিও ডিজিটাল প্রদর্শনী। এখানে আছে দেশের সব গণতান্ত্রিক আন্দোলন ও অর্জনের সাক্ষী জাতির পিতার ঘনিষ্ঠ সহচর তোফায়েল আহমেদের সংগ্রামী জীবনের আলোকচিত্র। রয়েছে বীরশ্রেষ্ঠ মোস্তফা কামালের আলোকচিত্র।দর্শনার্থীরা ডিজিটাল টাচস্কিন ব্যবহার করে যেকোনো গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জানতে পারবেন মুহূর্তেই। তথ্য প্রযুক্তির ব্যবস্থাপনায় জাদুঘরের প্রদর্শন দর্শনার্থীদেরও আকৃষ্ট করে। মুক্তিযুদ্ধ এবং দেশের ইতিহাস এবং ঐতিহ্যকে আলোকচিত্রীর মাধ্যমে তুলে ধরা হয়েছে ‘স্বাধীনতা জাদুঘরে’।

বৃহস্পতিবার ছাড়া অন্যান্য দিন বেলা ১১টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত দর্শনার্থীদের জন্য খোলা থাকে এই জাদুঘর। সাবেক মন্ত্রী তোফায়েল আহমেদে নিরলস চেষ্টায় জাদুঘরের পাশাপাশি এই উপ-শহর বাংলাবাজার এলাকায় ৬২ বিঘা জমির উপর স্থাপিত হয়েছে ফাতেমা খানম কমপ্লেক্স। এখানেই রয়েছে দৃষ্টিনন্দন ফাতেমা খানম মসজিদ, ‘ফাতেমা খানম বৃদ্ধাশ্রম, ‘বাংলাবাজার ফাতেমা খানম ডিগ্রি কলেজ’, ‘ফাতেমা খানম মাধমিক বালিকা বিদ্যালয়’, ‘ফাতেমা খানম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়’, ‘ফাতেমা খানম শিশু পরিবার’ ফাতেমা খানম মা ও শিশু কল্যাণ হাসপাতালসহ বেশ কিছু সেবামূলক প্রতিষ্ঠান। বর্তমানে নির্মিত হচ্ছে আজাহার-ফাতেমা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল। ‘ফাতেমা খানম’ কমপ্লেক্স তোফায়েল আহমেদের একটি স্বপ্ন। বাংলাবাজার স্বাধীনতা জাদুঘরের দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপক মো. নকিব জানান, স্বাধীনতা জাদুঘর দেখতে এখানে প্রতিদিন দর্শনার্থী আসেন। আগে ৫০০/৬০০ দর্শনার্থী এলেও বর্তমানে করোনার কারণে দর্শনার্থীরা কিছুটা কম। এ মাসে সংখ্যা আবার বেড়েছে। এখানে কোনো প্রবেশ মূল্য নেই।

স্বাধীনতা জাদুঘরের প্রতিষ্ঠাতা ও ভোলা-১ আসনের সংসদ সদস্য সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেন, আমি একদিন থাকবো না, ইতিহাস থাকবে। এ জাদুঘরের মাধ্যমে তরুণ প্রজম্ম দেশের মুক্তিযুদ্ধ এবং ইতিহাস ঐতিহ্য সম্পর্কে জানতে পারবেন। এখানে এলেই মানুষের প্রাণ জুড়িয়ে যাবে।

যেভাবে স্বাধীনতা জাদুঘরে যাওয়া যাবে: ঢাকা-ভোলা রুটে আধুনিক মানের লঞ্চ চড়ে সরারসরি ভোলা খেয়াঘাটে বা ইলিশাঘাটে নামতে হবে। এখন রাতে ও দিনে লঞ্চ যোগযোগ রয়েছে। এরপর রিকশা বা ইজিবাইক অথবা সিএনজিযোগে বীরশ্রেষ্ট মোস্তফা কামাল বাস টার্মিনাল হয়ে বাংলাবাজার গেলেই চোখে পড়বে স্বাধীনতা জাদুঘরসহ নানা স্থাপনা বাসেও যাওয়া সহজ। জেলা শহর থেকে ১০ কিলোমিটার দূরে ভোলা-চরফ্যাশন সড়কে পাশে এটি গড়ে ওঠায় সহজ যোগযোগ ব্যবস্থার জন্য জাদুঘরে পৌঁছাতে সময় লাগছে মাত্র ২০ মিনিট।

দয়া করে শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরীর আরো খবর..