মঙ্গলবার, ০৭ মে ২০২৪, ০৫:৫২ অপরাহ্ন
শিরোনামঃ
ডিএসইসি’র নতুন সভাপতি ডিবিসি’র মুক্তাদির অনিক ডিএসইসি’র সাধারণ সম্পাদক বাংলাদেশের আলো’র জাওহার ইকবাল খান ডিএসইসি’র সাংগঠনিক সম্পাদক দৈনিক উত্তরদক্ষিণে’র শহীদ রানা ঢাকা মহানগর ছাত্রলীগের উপ-কর্মসূচি ও পরিকল্পনা সম্পাদক হলেন প্রিয়ন পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জে গাঁজাসহ ২ যুবক গ্রেফতার কিশোরগঞ্জে শিক্ষার্থীদের উদ্যোগে পথচারীদের মাঝে বিশুদ্ধ পানি ও খাবার স্যলাইন বিতরণ ডিএসইসি’র প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক রাইজিং বিডির আরিফ আহমেদ কিশোরগঞ্জে আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস উপলক্ষে ইসলামী শ্রমিক আন্দোলনের র‍্যালি অনুষ্ঠিত কিশোরগঞ্জের হাওরে কৃষকদের মাঝে ইসলামী ছাত্র আন্দোলনের শরবত ও ঠান্ডা পানি বিতরণ ডিএসইসি’র সভাপতি অনিক সম্পাদক জাওহার ইকবাল

গণপূর্তের নির্বার্হী প্রকৌশলী আমান উল্লাহ’র ডাবল বিলে দুই মন্ত্রণালয়ে (স্বাস্থ্য ও গনপূর্ত) তোলপাড়!

অনলাইন ডেস্ক:
  • আপলোডের সময় : শুক্রবার, ২৯ ডিসেম্বর, ২০২৩
  • ৫৭৯১ বার পঠিত
ছবি: গণপূর্ত অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মো: আমান উল্লাহ সরকার

একই কাজে দুই মন্ত্রণালয় থেকে পৃথক পৃথক বরাদ্দ এনে সমুদয় টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে গণপূর্ত অধিদপ্তরের মহাখালী বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো: আমান উল্লাহ সরকারের বিরুদ্ধে। বিষয়টি নিয়ে এখন তোলপাড় চলছে গণপূর্ত অধিদপ্তরসহ দুই মন্ত্রণালয়ে।

বিষয়টি দুদকের মাধ্যমে তদন্তের দাবী তুলেছেন সচেতন মহল। দিনে দুপুরে এতবড় ডাকাতির ঘটনা গণপূর্ত অধিদপ্তরে অতীতে আর একটিও ঘটেনি বলে মন্তব্য করেছেন সিনিয়র কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা।

এদিকে উন্নয়ন কাজ না করেই সরকারি বরাদ্দের কোটি কোটি টাকা তুলে নিয়ে ঠিকাদারের সাথে ভাগাভাগি করার অভিযোগও আছে গণপূর্ত অধিদপ্তরের মহাখালী বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী আমান উল্লাহ সরকারের বিরুদ্ধে। এছাড়া তিনি চাকরি জীবনে অনিয়মের মাধ্যমে অঢেল ধন সম্পদের মালিক হয়েছেন এবং বিদেশে প্রচুর টাকা পাচার করেছেন মর্মে তথ্য পাওয়া গেছে।

আমান উল্লাহ সরকারের দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার সাহস হারিয়ে ফেলেছেন সবাই। ইতিমধ্যে গনপূর্ত অধিদপ্তরে তিনি তার ক্ষমতার অসংখ্য নজির উপস্থাপন করেছেন। তার অবৈধ টাকার ক্ষমতার বলে যে কাউকে সহজেই ম্যানেজ করতে সক্ষম তিনি।

একাধিক সূত্র থেকে পাওয়া তথ্যে জানা গেছে, চাকরি জীবনের শুরু থেকেই তিনি ঢাকায় অবস্থান করছেন। প্রায় এক দশকের মধ্যে তিনি মাত্র ৩ মাসের জন্য ঢাকার বাইরে বদলি হয়েছিলেন। পরবর্তীতে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিবকে ম্যানেজ করে আবার ঢাকায় ফিরে আসেন।

কর্তৃপক্ষ চাইলেও তাকে ঢাকার বাইরে বদলি করতে পারে না। কারণ, ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ চেয়ারে দায়িত্বে থাকার কারণে কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তির সঙ্গে তার সখ্য গড়ে উঠেছে। ফলে ইচ্ছে করলেই সংস্থাপ্রধান বা মন্ত্রণালয় তাকে ঢাকার বাইরে বদলি করতে পারে না। আবার আর্থিক সক্ষমতা বৃদ্ধির সুবাদে শীর্ষ পর্যায়ের ব্যক্তিদের আশীর্বাদও পান তিনি।

ইতিপূর্বে তিনি গণপূর্ত অধিদপ্তরের প্রধান কার্যালয়ে রক্ষণাবেক্ষণ উপ-বিভাগের এসডি ছিলেন। এরপর সিটি ডিভিশনের এসডি ছিলেন। পরে মিরপুর ডিভিশনের দায়িত্বে ছিলেন। বর্তমানে তিনি গণপূর্ত মহাখালী বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলীর দায়িত্বে রয়েছেন।

সূত্রগুলো আরও জানায়, ব্রাম্মনবাড়ীয়া জেলার নবীনগর উপজেলার দক্ষিণ লক্ষীপুর গ্রামে তার বাড়ী। বাবা মিজানুর রহমান সরকার, মা আছিয়া বেগম। তার পরিবারের সবাই জামায়াত ও বিএনপির রাজনীতিতে সম্পৃক্ত। বুয়েটে পড়াকালীন তিনি ছাত্রদলের সক্রিয় নেতা ছিলেন। এখনো বিএনপির শীর্ষ নেতাদের সাথে তার ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রয়েছে বলে অধিদপ্তরে গুঞ্জন রয়েছে।

কিছুদিন আগে তার বিরুদ্ধে যে গুরুতর অভিযোগটি উঠে তা হলো- তিনি মহাখালী নার্সিং কলেজের সামনের রাস্তার উন্নয়ন কাজ নামমাত্র সম্পন্ন করেই বরাদ্দের ৭ কোটি টাকা তুলে ঠিকাদারের সাথে ভাগাভাগি করে নিয়েছেন।

এলাকাবাসীর অভিযোগ, এই রাস্তাটি উন্নয়নের নামে শুভংকরের ফাঁকি দিয়েছে গণপূর্ত বিভাগ। রাস্তাটির জন্য ৭ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হলেও কাজ করা হয়েছে ৬০-৭০ লাখ টাকার। বাকি টাকা তুলে ভাগাভাগি করা হয়েছে। এই রাস্তা ছাড়াও মহাখালী গণপূর্ত বিভাগে গত অর্থবছর ও চলতি অর্থবছরে যে সব উন্নয়ন কাজ করা হয়েছে তার সিংহভাগই নামেমাত্র সম্পাদনা করেই বিল তুলে নেওয়া হয়েছে।

নিরপেক্ষ কোনো সরকারি অডিট সংস্থা দিয়ে ফাইলপত্র নিরীক্ষা করলেই কোটি কোটি টাকা লুটপাটের প্রমাণ মিলবে। অবৈধ পথে অর্থ রোজগার করে তিনি ঢাকা শহরে কমপক্ষে ৫টি প্লট ও ফ্ল্যাটের মালিক হয়েছেন। দুদকের মাধ্যমে তদন্ত করলে তার এ সব সম্পদের অস্তিত্বের প্রমাণ পাওয়া যাবে এমন দাবি করেছেন সংশ্লিষ্ট অনেকে।

সম্প্রতি তার বিরুদ্ধে যে গুরুতর দুর্নীতির অভিযোগটি উঠেছে সেটা হলো: তিনি গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দকৃত অর্থে বেশ কয়েকটি প্রকল্পের কাজ করে আবার ওই একই প্রকল্প বাস্তবায়ন দেখিয়ে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় থেকেও অর্থ বরাদ্দ এনে বরাদ্দকৃত টাকা আত্মসাত করেছেন। ঘটনাটি জানাজানি হতেই গণপূর্ত মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে।

অনুসন্ধানে জানা যায়, ২০২২/২৩ অর্থবছরে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের মেরামত শাখা কর্তৃক অনুমোদিত ১৮৪ টি প্রকল্পে ৪৪ কোটি ৯৯ লক্ষ টাকা বরাদ্দ দান করে। গণপূর্ত অধিদপ্তরের মাধ্যমে বাস্তবায়ণাধীন সে সব প্রকল্পের মধ্যে ৪৫টি প্রকল্পে তিনি শুভংকরের ফাঁকি দিয়েছেন।

এই সব প্রকল্প গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দকৃত অর্থে বাস্তবায়িত হলেও তিনি সুকৌশলে পুনরায় সেগুলো স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের মেরামত শাখা কর্তৃক অনুমোদিত ১৮৪টি প্রকল্পের মধ্যে ঢুকিয়ে দিয়ে অর্থ বরাদ্দ করে নিয়েছেন। এখন কাজ না করেই প্রকল্প বাস্তবায়ন দেখিয়ে বরাদ্দকৃত টাকা পকেটস্থ করছেন।

আলোচিত প্রকল্পগুলো হলো:-

ঢাকার মহাখালীস্থ জাতীয় বক্ষব্যাধি ইনষ্টিটিউট ও হাসপাতালের ডাক্তার হোস্টেল তত্ত্বাবধায়ক এর রুমের ফ্লোরে ও দেয়ালে টাইলসসহ টয়লেট নির্মাণকরণ কাজ।

ঢাকার মহাখালীস্থ জাতীয় বক্ষব্যাধি ইনষ্টিটিউট ও হাসপাতালের দক্ষিণ পশ্চিম কর্ণারে সড়ক দূর্ঘটনা রোধকল্পে বাঁক নির্মাণ কাজ।

ঢাকার মহাখালীস্থ জাতীয় বক্ষব্যাধি ইনষ্টিটিউট ও হাসপাতালের হিস্টোপ্যাথলজী ও ব্লাড-ট্রান্সফিউশন মেডিসিন বিভাগের পিছনের বারান্দায় থাই গ্লাস স্থাপন, ছাদ দিয়ে পানি পড়া রোধকল্পে প্যাটেন্ট স্টোন ঢালাই এবং ডাক্তার টয়লেটের স্যানিটারী ফিটিংস নবায়নসহ অন্যান্য আনুষঙ্গিক কাজ।

ঢাকার মহাখালীস্থ জাতীয় বক্ষব্যাধি ইনষ্টিটিউট ও হাসপাতালের বহিঃ বিভাগের বর্ধিত অংশে টিকেট কাউন্টারে অপেক্ষারাত রুগীদের জন্য সেড নির্মাণ ।

ঢাকার মহাখালীস্ব জাতীয় বক্ষব্যাধি ইনষ্টিটিউট ও হাসপাতালের নিরাপত্তায় নিয়োজিত আনসার সদস্যদের অস্ত্রাগার ও বসবাসের জন্য সেমিপাকা বাসস্থান নির্মান কাজ।

ঢাকার মহাখালীস্থ জাতীয় বক্ষব্যাধি ইনষ্টিটিউট ও হাসপাতালের মুক্তিযোদ্ধা ওয়ার্ডের বাহিরে বিশুদ্ধ খাবার পানির জন্য নতুন করে পানির লাইন ও প্লাটফর্ম নির্মানসহ টাইলস করণ কাজ।

ঢাকার মহাখালীস্থ জাতীয় বক্ষব্যাধি ইনষ্টিটিউট ও হাসপাতালের জেনারেল স্টোরের পার্শ্বে টয়লেটসহ নতুন করে একটি কক্ষ নির্মান ও অন্যান্য আনুষাঙ্গিক কাজ।

ঢাকার মহাখালীস্থ জাতীয় ক্যান্সার গবেষনা ইনষ্টিটিউট ও হাসপাতালের বি ব্লকে ল্যাবরেটরি ও নতুন টয়লটে সমূহের টাইলসকরণ, স্যানিটারী ফিটিংস নবায়নসহ পানি সরবরাহ লাইনের কাজ।

ঢাকার মহাখালীস্থ জাতীয় ক্যান্সার গবষেণা ইনষ্টিটিউট ও হাসপাতালের ট্রান্সফিউশন মেডিসিন বিভাগ বর্তমান স্থান থেকে ডি ব্লকে স্থানান্তরিত করার লক্ষ্যে করিডোরের কলাপসিবল গেট স্থাপন ও বিভিন্ন রুমে টাইলস, থাই এলুমিনিয়াম পার্টিশন সহ অন্যান্য সংস্কার ও সংযোজন কাজ।

ঢাকার মহাখালীস্থ জাতীয় ক্যান্সার গবষেণা ইনষ্টিটিউট ও হাসপাতালের বি ব্লকের ৪র্থ তলায় হেমোটোলজি ও মলিকুলার বায়োলজি বিভাগে দুইটি নতুন টয়লেট নির্মান সহ টাইলস নবায়ন, পয়ঃ প্রণালী এবং পানি সরবরাহ লাইনের কাজ।

ঢাকার মহাখালীস্থ জাতীয় ক্যান্সার গবষেণা ইনষ্টিটিউট ও হাসপাতালের এ ব্লকের নীচ তলায় ‘Blood Irradiation’ এর কক্ষে ইটের দেয়াল, থাই এ্যালুমনিয়িাম পার্টিশন দিয়ে কক্ষ নির্মানসহ অন্যান্য সংস্কার কাজ।

ঢাকার মহাখালীস্থ জাতীয় ক্যান্সার গবষেণা ইনষ্টিটিউট ও হাসপাতালের বি ব্লকের ৭ম তলায় দুইটি করে নতুন টয়লেট নির্মানসহ টাইলস নবায়ন, পয়ঃ প্রণালী এবং পানি সরবরাহ লাইনের কাজ।

ঢাকার মহাখালীস্থ জাতীয় ক্যান্সার গবষেণা ইনষ্টিটিউট ও হাসপাতালের বি ব্লকের নীচ তলায় সিড়ির পিছনের মসজিদের পাশে অক্সিজেন সরবরাহের ম্যনিফোল্ড কক্ষ নির্মান কাজ।

ঢাকার মহাখালীস্থ জাতীয় ক্যান্সার গবষেণা ইনষ্টিটিউট ও হাসপাতালের বি-ব্লক এবং ডি-ব্লকের মাঝে বৃক্ষ লিপির স্থাপনা গেইট, মাটি ভরাট করা ও রাস্তা নির্মান সহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় সংস্কার ও আধুনিকায়ন কাজ।

ঢাকার মহাখালীস্থ জাতীয় ক্যান্সার গবষেনা ইনষ্টিটিউট ও হাসপাতালের সি-ব্লকের ৫-৬ নং অপারশেন থিয়েটারের ড্যাম্প দেয়ালে আস্তর নবায়ন, ভাঙ্গা টাইলস নবায়ন, দরজার চৌকাঠ, পাল্লা ও জানালায় থাই এলুমিনিয়াম এবং স্যানিটারী ফিটিংস নবায়নসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় সংস্কার ও আধুনিকায়ন কাজ।

এছাড়াও স্বাস্থ্য শিক্ষার বরাদ্দ আনার ক্ষেত্রে নির্বাহী প্রকৌশলী আমান উল্লাহ সরকার মন্ত্রণালয়ে নিজে দালালি করে প্রয়োজনের মাত্রাতিরিক্ত বরাদ্দ আনেন এবং তা আত্মসাৎ করেন।

স্বাস্থ্য শিক্ষার সকল কাজ তার নিজস্ব ৩-৪ জন ঠিকাদারদেরকে দেয়া হয় এবং সকল কাজের চেক তার বাসায় পৌছে দেয়া হয়।

উল্লেখ্য, এসব ঠিকাদারের মাধ্যমে নির্বাহী প্রকৌশলী আমান উল্লাহ সরকার নিজে ঠিকাদারী করেন বলেও তথ্য প্রমান পাওয়া গেছে। তার এহেন কর্মকান্ডে মহাখালী গণপূর্ত বিভাগের সকল ঠিকাদারবৃন্দ তার উপর সংক্ষুব্ধ।

(তথ্য সূত্র: https://www.thefinancetoday.net/)

দয়া করে শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরীর আরো খবর..