রাজধানী তেজগাঁও শিল্পাঞ্চলের ঢাকা রেজিস্ট্রেশন কমপ্লেক্স পরিনত হয়েছে ঘুষ দুর্নীতির আখড়ায়। এ কমপ্লেক্সরই জমি রেজিস্ট্রেশন, দলিল সম্পাদন, নকল উঠানো, রেকর্ড তলাশি, সংশোধন এমকি জমির শ্রেণী পরিবর্তনের নামে ঘুষ গ্রহণসহ বিস্তর দুর্নীতি এবং নানাভীবে সেফ এতাশীদের যার পর নাই হয়রানির অসংখ্য অভিযোগ রয়েছে বাবু হাওলাদারে বিরুদ্ধে, এহেন অপকর্মে পিছিয়ে নেই দৈনিক ৬০ টাকা হাজিরার কাজ করা রেজিস্ট্রেশন কমপ্লেক্স উমেদারদের গডফাদার বাবু হাওলাদার। কর্মকর্তাদের ব্যক্তিগতভাবে নিয়োগ দেওয়া এই উমেদার বাবু হাওলাদার। মূলতঃ তার নিয়েন্ত্রনে রয়েছে রেজিস্ট্রেশন অফিসের ভূমি সংক্রান্ত কার্যক্রমসহ ঘুষের নেটওয়ার্ক, জাল-জালিয়াতি কখনো অস্তিত্বহীন ব্যক্তিকে মালিক সাজিয়ে কখনো বা ভ‚য়া কমিশনে দলিল সম্পাদনের সাধারন মানুষের জমি প্রভাবশালীদের লিখে দেওয়া, আর এসব অপকর্ম করে প্রতিদিন হাতিয়ে নিচ্ছে লক্ষ লক্ষ টাকা দিনে বেলা অফিসের কর্ম ঘটাতেই শুধু নয়, রাতেও এ দপ্তরে চলে তার সিডিকেটের অপতৎপরতা।
জানা গেছে একসময়ে তিনি রেজিস্ট্রেশন কমপ্লেক্স গেটে সামনে দাড়িয়ে বাদাম বিক্রিয় করতেন। পরে এক উমেদারের চা পানি দেওয়া সহ নানা ফুটফরমায়েশ খাটার কাজ নেন। নিয়োগপত্র ছাড়াই কর্তপক্ষে মৌখিক অনুমতিতে কাজ শুরু করেন বাবু হাওলাদার কিন্তু বাবু হাওলাদারের ভাগ্যর চাকা ঘুরতে সময় লাগে না বেশিদিন ২০০৭ সালে তত্ত¡াবধায়ক সরকার ক্ষমতাসীন হয়ে আসলে দেশের অবস্থা কঠিন হয়ে যায়। সে সময় সাব-রেজিস্ট্রার কার্যালয়ের সরকারি কর্মকর্তা কর্মচারীরা প্রশাসনের ভয়ে ঘুষ নেওয়া থেকে বিরত থাকেন। তখন ঘুস নেওয়ার দায়িত্ব দেওয়া হয় উমেদারদের গডফাদার বাবু হাওলাদারকে। কেননা, বাবুর তখন নিয়োগ হয়নি। গ্রেফতার হলে কর্মকর্তারা বলতে পারেন তিনি (বাবু) তাদের কেউ না। এই সুযোগটাই কাজে লাগান বাবু। সব ঘুষের টাকা লেনদেন করতেন তিনি। সাব-রেজিস্ট্রারদের নাম দলিল ভেদে লক্ষ লক্ষ টাকা ঘুষ নিতেন তিনি এর নাম মাত্র টাকা দিতেন সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের। বাকি টাকা আত্মসাৎ করেন তিনি। তত্ত¡াবধায়ক সরকারের দুই বছরে আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ বুনে যায় বাবু হাওলাদার।
এর পরই রেজিস্ট্রি কমপ্লেক্সে উমেদারদের গডফাদার হয়ে উঠেন বাবু হাওলাদার। এই অফিসের সব কর্মকর্তা-কর্মচারী তার ভয়ে তটস্থ থাকেন সবই তাকে সমীহ করে চলেন। তার বিস্তারিত জানার জন্য অনুসন্ধানে গেলে নাম না বলভ তার এক নিকটস্থর কাছ থেকে জানা যায়, তিনি সাব-রেজিস্ট্রারদের অবৈধ টাকা হুন্ডির মাধ্যমে মালয়েশিয়ায় তার এক আত্মীয়র কাছে পাঠিয়ে কালো টাকা সাদা করে থাকেন। শুধু তাই নয় ঢাকা শহরে বাড্ডায় তার মোট ৩টি বাড়ি ও বেশ কয়টি ফ্ল্যাট রয়েছে এবং তার গ্রামের বাড়ি পটুয়াখালীর দুমকি উপজেলায় পাঙ্গাসিয়া গ্রামে রয়েছে বিপুল সম্পত্তি। চড়েন দামি ব্যক্তিগত বিলাসবহুল গাড়ীতে। যা সম্পূর্নরুপে দুদক চোখের আড়ালে।
নিয়োগ ছাড়া ১০ বছর উমেদার হিসেবে কাজ করলেও ২০১৭ সালে এসে মোটা অঙ্কের ঘুষ দিয়ে উমেদার হিসেবে নিয়োগ নেন বাবু হাওলাদার এর পরই তার অপকর্মের মাত্রার পারদ বাড়তে থাকে দ্রæতগতিতে এই রেজিস্ট্রেশন কমপ্লেক্স তার সিন্ডিকেটের সদস্যদের ঘুষ না দিলে এই অফিসে একটি দলিলও নিবন্ধন হয় না। তার আঙ্গুর হেলনে চলেন সিন্ডিকেটের সদস্যরা। কিন্তু মাটি খুড়ে কেঁচু বেড় না হলেও বেড়িয়ে আসে সাপ, ২০২০ সালে ১১ মার্চ রাতে রাজধানীর বনানীতে হোটেল সুইট ড্রিমের বারে প্রায় সময় মদ্যপান এবং নৃত্য দেখতেন উমেদার বাবু হাওলাদার।
সেখানে শেহজাদ খান ওরফে খায়রুল হাসানের (পিতাঃ নজরুল ইসলাম, মাতাঃ আয়েশা আক্তার, গ্রামঃ মধ্য ভাগলপুর, থানা ঃ বাজিতপুর, কিশোরগঞ্জ) সাথে তার পরিচয় হয়, এক সাথে তারা মদ্যপান, নৃত্য উপভোগ ও খাবার খান, হোটেলের বিল হয় ৮ হাজার টাকা। এই বিল পরিশোধ নিয়ে তাদের মধ্যে বাকবিতন্ডা হয়। এক পর্যায়ে তারা মারামারিতে লিপ্ত হন। বিলের ৮ হাজার টাকা পরিশোধ করেন বাবু। রাত সোয়া ৪ টার দিকে হোটেলের নিচে এলে তারা ফের মারামারিতে লিপ্ত হন। এতে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন খায়রুল হাসান। উত্তরার ক্রিসেন্ট হাসপাতালে নেওয়া হলে ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষনা করেন। তার এ ঘটনায় তখন বনানী থানায় একটি মামলা করা হয়। সিসিটিভির ফুটেজ দেখে ডিবি পুলিশ বাবুকে গ্রেফতার করে রিমান্ডে নেয়।
আদালতে সে সময় তিনি ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন, পুলিশ তার বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দিয়েছে এতে বলা হয়েছিল, বাবুর মারধরে খায়ুরুলের মৃত্যু হয়েছে বলে ধারনা করা হয়। এ হামলায় বাবু দীর্ঘদিন কারাগারে থাকেন পরে তিনি জামিনে মুক্ত হন, এতো কিছু হওয়ার পরেও তার বিরুদ্ধে আইজিয়ার অফিস ও রেজিস্ট্রেশন কমপ্লেক্স কোন ব্যবস্থা নেননি তখনকার সময়। বাবু হাওলাদার তার টাকা আর ক্ষমতা দিয়ে তার এই অপকর্মের ফাইল আজও পর্যন্ত আলোর মুখ দেখে দেননি। মোহাম্মদপুর সাব-রেজিস্ট্রার কার্যালয়ে উমেদার বাবু হাওলাদার কর্মরত থাকার কারনে তাকে ঘুষ না দিলে এই অফিসে কোন দলিল নিবন্ধন হয় না বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। আর এই সব দলিলের টাকা তিনি নিয়ে থাকেন দলিল লেখকদের মাধ্যমে। তার বিরুদ্ধে আইজিআর, সংসদ আইন বিষয়ক মন্ত্রণালয় ও দুদকের রয়েছে ব্যাপক পরিমান অভিযোগের পাহাড়। আর এসব বিষয় ঢাকা জেলা রেজিস্ট্রার অহিদুল ইসলামকে তার মুঠো ফোনে ফোন করলে তার ফোনটি রিসিভ হয়নি। তার সাথে এ প্রতিবেদক মোহাম্মদপুর সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের উমেদার বাবু হাওলাদারকে কয়েকবার তার মুঠো ফোনে কল করলে কলটি তিনি কেটে দেন।