ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম বলেছেন, আগামী ২৭ এপ্রিল থেকে কোনো বাসায় বা অফিসে এডিস মশার লার্ভা পাওয়া গেলে জেল ও জরিমানা করা হবে।
তিনি আরো বলেন, সরকারি অফিসেও যদি লার্ভা পাওয়া যায় সে অফিসের যিনি দায়িত্বে আছেন তার বিরুদ্ধে মামলা হবে, জরিমানা হবে। এমনকি আমার সিটি কর্পোরেশনের কোনো অফিসেও যদি লার্ভা পাওয়া যায় সেই অফিসের কর্মকর্তার বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়া হবে।
আজ সোমবার রাজধানীর মিরপুর রূপনগর এলাকায় ডেঙ্গু প্রতিরোধে একযোগে ডিএনসিসি’র ৫৪টি ওয়ার্ডে মাসব্যাপী জনসচেতনতামূলক প্রচার অভিযান উদ্বোধনকালে ডিএনসিসি মেয়র এসব কথা বলেন।
মেয়র বলেন, ‘ডেঙ্গু প্রতিরোধে একযোগে ডিএনসিসি’র সকল ওয়ার্ডে মাসব্যাপী সচেতনতামূলক প্রচার অভিযান শুরু করেছি। মানুষকে সচেতন করছি। লার্ভা পেলে মামলা হবে, জেল হবে, জরিমানা হবে এবং জরিমানার টাকার পরিমাণ আরও অনেক বেড়ে যাবে। আমাদেরকে আরো ম্যাজিস্ট্রেট দেয়ার জন্য ইতোমধ্যে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়কে জানিয়েছি।’
ডিএনসিসি মেয়র বলেন, পূর্বের ঘোষণা অনুযায়ী ঈদের পর থেকে ডেঙ্গু মৌসুম শুরুর আগেই ডেঙ্গু প্রতিরোধে একযোগে ৫৪টি ওয়ার্ডে সচেতনতামূলক কার্যক্রম শুরু হয়েছে। কীটতত্ত্ববিদরা বলেছেন যে, এখন থেকেই মাঠে নামতে হবে। সে অনুযায়ী পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, আপনারা সচেতন হলে জেল-জরিমানা, মামলার দরকার নেই। এডিস মশা জন্মাতে পারে এমন জায়গাগুলো পরিষ্কার করুন। এডিস মশা কামড় না দিলে ডেঙ্গু হবে না।
মেয়র বলেন, ‘বিশেষজ্ঞদের মতে খালের ও ড্রেনের ময়লা পানিতে এডিস মশা জন্মায় না। জমে থাকা স্বচ্ছ পানিতে এডিস মশা জন্মায়। যে সকল পরিত্যক্ত দ্রব্যাদিতে পানি জমে এডিসের লার্ভা জন্মাতে পারে সেসব দ্রব্যাদি সিটি কর্পোরেশন কিনে নিচ্ছে। ডাবের খোসা, পরিত্যক্ত পলিথিন, চিপসের প্যাকেট, আইসক্রিমের কাপ, দইয়ের কাপ এগুলো যত্রতত্র না ফেলে ডিএনসিসির কাউন্সিলরদের কাছে জমা দিন, নগদ টাকা গ্রহণ করুন। পুরোনো টায়ার, কমোড, রঙের কৌটা এগুলো ছাদে বা বারান্দায় না রেখে আমাদের কাউন্সিলরদের কাছে জমা দিয়ে টাকা নিন।
ডিএনসিসি’র সকল ওয়ার্ডে একযোগে সচেতনতা কার্যক্রম পরিচালনার জন্য প্রত্যেক কাউন্সিলরকে প্রতি মাসে ৫০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। কাউন্সিলররা নিজ নিজ এলাকার বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ, রাজনীতিবিদ, মসজিদের ইমাম, স্কুলের শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও সর্বস্তরের জনগণকে সম্পৃক্ত করে ডেঙ্গু প্রতিরোধে করনীয় বিষয়ে মতবিনিময় সভা ও র্যালি আয়োজন করবে।
ঢাকা-১৪ আসনের সংসদ সদস্য মো. মাইনুল হোসেন খান নিখিল বলেন, ‘সিটি কর্পোরেশনের পাশাপাশি ডেঙ্গু প্রতিরোধে রূপনগর এলাকার বাড়ি মালিক সমিতির সদস্যদের নিয়ে কাজ করছি। ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে জনসচেতনতা জরুরি, শুধু সিটি কর্পোরেশনের একার কাজ নয় এটি।
সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগনিয়ন্ত্রণ বিভাগের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ডা. বেনজির আহমেদ বলেন, ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হলে রোগীর বাসা ও আশেপাশের এলাকায় মশার ওষুধ ছিটানোর কার্যক্রম জোরদার করতে হবে। ডেঙ্গু রোগীকে মশা কামড় দেয়ার পরে অন্যকে কামড়ালে ডেঙ্গু হয়। তাই রোগী চিহ্নিত হলে তার আশপাশ পরিষ্কার রাখা ও সতর্ক থাকা জরুরি।
ডিএনসিসি মেয়রের উপদেষ্টা ও কীটতত্ত্ববিদ অধ্যাপক ড. কবিরুল বাসার বলেন, কোথায় এসব লার্ভার উৎস আছে খুঁজে বের করুন এবং ধ্বংস করুন।
ডিএনসিসির মাসব্যাপী জনসচেতনতামূলক প্রচার অভিযান উদ্বোধন শেষে ডিএনসিসি মেয়র এডিস মশার উৎসস্থল-গাড়ীর পরিত্যক্ত টায়ার, ডাবের খোসা, মাটির পাত্র, খাবারের প্যাকেট, অব্যবহৃত কমোড এগুলো দেখিয়ে জনগণকে সচেতন করেন এবং পরিত্যক্ত দ্রব্যাদি ক্রয়ের মাধ্যমে কার্যক্রমটি উদ্বোধন করেন।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যের সঙ্গে আরও উপস্থিত ছিলেন ডিএনসিসি’র প্রধান প্রকৌশলী ব্রিগে. জেনা. মো. মঈন উদ্দিন, প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগে. জেনা. ইমরুল কায়েস চৌধুরী, অঞ্চল-৪ এর আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আবেদ আলী, সংরক্ষিত আসনের কাউন্সিলর শিখা চক্রবর্তী ও অন্যান্য উর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ।