দেশের শীর্ষ দুর্নীতিবাজ ঠাকুরগাঁওয়ের জেলা রেজিস্ট্রার মোঃ হেলাল উদ্দিনের বিরুদ্ধে অসংখ্য ঘুষ-দুর্নীতি অনিয়ম ও অনৈতিক কার্য্যকলাপের বিরুদ্ধে ভুক্তভূগী জনগণ দুদক চেয়ারম্যান, আইন সচিব ও নিবন্ধন অধিদপ্তরের মহাপরিদর্শক বরাবর লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। বাংলাদেশ ভূমি অধিকার বাস্তবায়ন সংস্থার পক্ষ থেকে হেলাল উদ্দিনের বিরুদ্ধে দায়ের করা অভিযোগটি আইন মন্ত্রণালয় তদন্ত করছে।
ঐ সকল অভিযোগে উল্লেখ রয়েছে হেলাল উদ্দিন ঘুষ দুর্র্নীতির মাধ্যমে দেশে-বিদেশে ব্যবসা সহ সরকারের অনুমতি ব্যতিত বিদেশ ভ্রমণ, বিধি বহির্ভূতভাবে একাধিক পাসপোর্ট ব্যবহার, সরকারের অনুমতি ছাড়া সরকারী কর্মকর্তা হয়েও ব্যবসা বাণিজ্য করা। ঘুষ-দুর্নীতির অবৈধ টাকায় বাড়ী-গাড়ী ও একাধিক ফ্ল্যাটের মালিক বনে যাওয়া। তার বিরুদ্ধে গুলশানের কড়াইল বস্তি কোটি কোটি টাকা ঘুষ নিয়ে দলিল রেজিস্ট্রির অভিযোগ প্রমাণিত বলে দুদক আদালতে চার্জশীট দাখিল করলে মামলাটি ঢাকার জজ আদালতে চলমান থাকাবস্থায় তিনি ব্যাপক দুনীতি অব্যাহত রেখেছেন। শেরপুর জেলার জেলা রেজিস্ট্রার থাকাকালীন অফিসটিকে ঘুষ-দুর্নীতি, অনিয়ম ও অসামাজিক কার্যকলাপের আস্তানায় পরিণত করছিলেন জেলা রেজিস্ট্রার হেলাল উদ্দিন। শুধু তাই নয়, শেরপুর জেলার একজন নারী সাব রেজিস্ট্রারকে আপত্তিকর কথা বলার অভিযোগে মন্ত্রণালয় তাকে ঠাকুরগাঁও জেলায় বদলী করেন।
জেলা রেজিস্ট্রার হেলাল উদ্দিন ৭৯ জন নকল নবীশ ভূয়া নিয়োগ অনুমোদনের মাধ্যমে শেরপুর সাব রেজিস্ট্রি অফিস চাকুরী করছেন এমন অভিযোগের তদন্তে যেয়ে বিভিন্ন অসহায় নারী নকল নবীশদের বিভিন্ন কৌশলে ব্যবহার করেছেন হেলাল উদ্দিন। শুধু তাই নয়, ৭৯ জন নকল নবীশের কাছ থেকে চাকুরীচ্যুত করে জেল হাজতে পাঠানোর ভয় দেখিয়ে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন সুচতুর জেলা রেজিস্ট্রার হেলাল উদ্দিন। ভূয়া অনুমোদনে কাজী রেজিস্ট্রার নিয়োগ। মোহরার, সহকারী মোহরার, পিওন, নকলনবীশদের বদলীতে মোটা অংকের টাকা নিয়েছেন তিনি। কখনো কখনো নিজেই অধঃস্তনদের বিরুদ্ধে ভূয়া অভিযোগ তৈরী করেও টাকা আদায় করে হয়রানী করেছেন জেলা রেজিস্ট্রার হেলাল উদ্দিন।
ঠাকুরগাঁও যোগদান করেই তিনি বিভিন্ন কারনে অকারনে, নানা অজুহাতে জেলার ৬টি সাব রেজিস্ট্রি অফিসের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের জিম্মি করে ঘুষ দুর্নীতির মাধ্যমে প্রতিদিন লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন হেলাল উদ্দিন। আর তার এসব ঘুষ দুর্নীতির নেপথ্যে সহযোগীতা করছেন ঠাকুরগাঁও সদর সাব রেজিস্ট্রি অফিসের সহকারী রবিউল কবির।
রবিউল কবির দুর্নীতিবাজ জেলা রেজিস্ট্রার হেলাল উদ্দিনের নামে প্রতিমাসে দলিল প্রতি ২০০/- টাকা নকল প্রতি ৩০০/- টাকা কমিশন ফি বাবদ দলিল প্রতি সর্বনি¤œ ৭ হাজার থেকে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত আদায় করেন তিনি। এভাবে ঠাকুরগাঁও জেলা থেকেই হেলাল উদ্দিনের মাসিক আয় প্রায় ২০ লক্ষ টাকা। ওদিকে ঠাকুরগাঁওয়ের জেলা রেজিস্ট্রার হেলাল উদ্দিন তদবীর করে দিনাজপুর জেলার জেলা রেজিস্ট্রারের অতিরিক্ত দায়িত্ব নেন। সপ্তাহে রবি ও সোম দুই দিন দিনাজপুর অফিস করেন। সেখানে যোগদান করেই সকল অফিসারদের প্রতি তার নামে দলিল ও নকল প্রতি ঘুষের টাকা বাড়িয়ে দেন। তখন হেলাল উদ্দিনের ঘুষের টাকার যোগান দিতে যেয়ে বীরগঞ্জের সাব রেজিস্ট্রার রিপন মন্ডল এখন দুদকের হাতে ধরাশায়ী।
বীরগঞ্জের সাব রেজিস্ট্রার রিপন মন্ডল গত ৩ মে ঠাকুরগাঁও জেলার উত্তর গড়েয়া গামের নুরু মিয়ার পুত্র মোঃ মিজানুর রহমান দুদকের জরুরী হেল্পলাইন ১০৬ নাম্বারে কল করে অভিযোগ করেন। অভিযোগের ভিত্তিতে দিনাজপুর জেলা দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এর সহকারী পরিচালক মোঃ ইসমাইল হোসেনের নেতত্বে উপ-সহকারী পরিচালক কামরুন্নাহার সরকার, সহকারী পরিদর্শক মোঃ মিজানুর রহমান ও উচ্চমান সহকারী মোঃ শাহজাহান আলীর সমন্বয়ে একটি তদন্ত দল সাবরেজিস্ট্রি অফিসে এলে তাদের উপস্থিতি টের পেয়ে দুর্নীতির সাথে জড়িত নকলনবীশ সুমন, রশিদসহ আরও কয়েকজন প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ও তথ্য প্রমাণগুলো নিয়ে ঘুষখোর সাব রেজিস্ট্রারের খাস কামরায় তালা ঝুলিয়ে আত্মগোপন করে।
পরে দুদকের তদন্ত টিম উক্ত রুমের তালা ভেঙ্গে প্রবেশ করে ঘুষ দুনীতির সাথে জড়িত রিপন মন্ডলকে দীর্ঘসময় ধরে জিজ্ঞাসাবাদ করেন।
প্রাথমিক তদন্তে রিপন মন্ডলের বিরুদ্ধে আনিত ঘুষ-দুর্নীতির অভিযোগ সত্য মর্মে স্বীকার করে জেলা দুর্নীতি দমন কমিশনের উপ-পরিচালক ইসমাইল হোসেন। তিনি বলেন দলিল করতে মাঠ পর্চা ও নামজারী থাকার পরও বাটোয়ারা দলিলের অজুহাতে ৭ হাজার টাকা ঘুষ নিয়ে দলিল রেজিস্ট্রি করার তথ্য পাওয়া গেছে। রিপন মন্ডলের বিরুদ্ধে আরো অসংখ্য মৌখিক অভিযোগ পাওয়া গেছে, সেগুলোও তদন্তের আশ্বাস দেন তিনি। তদন্ত শেষে দুদক টিম স্থান ত্যাগ করতে চাইলে স্থানীয় উত্তেজিত জনতা রিপন মন্ডলের গ্রেফতারের দাবীতে বিক্ষোভ মিছিল বের করে।
এক পর্যায়ে বীরগঞ্জ থানার পুলিশ ফোর্স ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। সাব রেজিস্ট্রার রিপন মন্ডলের বিরুদ্ধে আনিত সীমাহীন ঘুষ দুর্নীতির অভিযোগকারী মিজানুর রহমান জানান। আমি সীমাহীন হয়রানীর স্বীকার হয়ে দুদকে অভিযোগ করতে বাধ্য হয়েছি। জেলা রেজিস্ট্রার হেলাল উদ্দিনের ঘটনাস্থল পরিদর্শনের পূর্বে বীরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ ফজলে এলাহী ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) রাজকুমার বিশ্বাস ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।