আনোয়ার হোসাইন জুয়েল, তাড়াইল (কিশোরগঞ্জ) প্রতিনিধি:
কিশোরগঞ্জের তাড়াইল উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) ও উপজেলা সার-বীজ মনিটরিং কমিটির সভাপতি তৌফিকুর রহমানের কাছে বিসিআইসি সার ডিলার আবদুস সালামের বিরুদ্ধে ০৮ অক্টোবর (মঙ্গলবার) লিখিত অভিযোগ দেয়া হয়েছে।
উপজেলা সার-বীজ মনিটরিং কমিটির সভাপতি বরাবর লিখিত অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, উপজেলার ৫নং দামিহা ইউনিয়নের বিসিআইসি সার ডিলার মেসার্স আবদুস সালাম ট্রেডার্স (আবদুস সালাম) ১৫ বছর ধরে ইউনিয়ন পরিষদ কমপ্লেক্স ভবনকে গুদাম ও দোকান বানিয়ে রেখেছেন। তিনি সাব ডিলার ও কৃষকের স্বাক্ষর জালিয়াতি করে অন্যত্র সার বিক্রি করার অভিযোগ রয়েছে।
আবদুস সালাম নিজের লাইসেন্সের বরাদ্দকৃত সার নির্ধারিত জায়গায় না এনে অন্যত্র বিক্রি করে দেওয়া, ভুয়া কৃষকদের নাম ব্যবহার করে স্বাক্ষর-টিপসই দিয়ে রেজিস্ট্রার খাতা তৈরি করে রাখার অভিযোগ রয়েছে। আবদুস সালাম দামিহা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের দাপট দেখিয়ে সাবেক দামিহা ইউনিয়ন পরিষদ কমপ্লেক্স ভবনকে তার দোকান ও গুদাম বানিয়ে দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে রমরমা ব্যবসার নামে কৃষকদের সাথে প্রতারণা করে আসছেন। প্রকাশ্যে সরকারি নিয়মনীতিকে বৃদ্ধাঙ্গুগুলি দেখালেও রহস্যজনক কারণে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না ডিলার আবদুস সালামের বিরুদ্ধে। তার নিজস্ব অথবা ভাড়া করা কোনো গুদাম নেই। যা সার ও বীজ আইন ২০০৯ এর সমন্বিত নীতিমালা ৩ এর ২ ধারার পরিপন্থি। তাড়াইল কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, উপজেলার দামিহা ইউনিয়নে ৪ হাজার ৭৭৩ জন কৃষক পরিবারের জন্য একজন বিসিআইসি সার ডিলার রয়েছে। অন্যদিকে তার অধীনে খুচরা ডিলারের সংখ্যা ৯ জন।
দামিহা ১নং ওয়ার্ডের সাব ডিলার রাসেল ট্রেডার্স জুলাই, আগস্ট ও সেপ্টেম্বর মাসে ২ বস্তা সার নিয়েছে। কিন্তু ডিলারের খাতায় তার নামে ইউরিয়া ৪০ বস্তা সার লেখা রয়েছে। দামিহা ৬নং ওয়ার্ডের সাব ডিলার শারজাহান ডিলার জুলাই, আগস্ট ও সেপ্টেম্বর মাসে ৪০ বস্তা ইউরিয়া সার নিয়েছে। কিন্তু ডিলারের খাতায় তার নাম ও দোকানদারের নামে ১৯০ বস্তা ইউরিয়া সার লিখা রয়েছে। উল্লেখ্য যে, জুলাই, আগস্ট ও সেপ্টেম্বর মাসে উক্ত এলাকা বর্ষার পানিতে ফসলি জমি তলিয়ে থাকে। তাছাড়া আরও ৭ জন সাব ডিলারের সাথে কথা হলে তারা বলেন, আবদুস সালামের মাধ্যমে খুচরা বিক্রেতা হিসাবে প্রতি মাসের বরাদ্দকৃত সার আমরা পাইনা। যার ফলে আমরা কৃষকদের চাহিদা মোতাবেক সার দিতে ব্যর্থ হই। কৃষক তাদের চাহিদা মোতাবেক সার না পাওয়াতে কৃষি ফসলের ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হচ্ছে এবং কৃষকদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হচ্ছে। উক্ত ডিলারের নিকট আমরা সার চাইলে না দেওয়ার জন্য উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান রিপনের মাধ্যমে বিভিন্ন অজুহাত দেখায় ও চাহিদা মোতাবেক সার চাইলে দেয় না। এমতাবস্থায় অন্য স্থান থেকে সার বেশী মূল্যে এনে এলাকার কৃষকদের চাহিদা মেটাতে হয় (সকল সাব ডিলারের ভিডিও রেকর্ড সংরক্ষিত আছে)।
অভিযোগে আরও উল্লেখ রয়েছে, সে কৃষকদের নাম ব্যবহার করে ও স্বাক্ষর-টিপসই জালিয়াতি করে খাতা তৈরি করে রাখে। সিন্ডিকেট করে ইউরিয়া ৩২, টিএসপি ৩০, এমওপি ২৪ ও ডিএপি ২৫ টাকা বা এর চেয়েও বেশি দামে বিক্রি করেন। সার বিক্রির পর ক্যাশ মেমো দেন না (কৃষকদের ভিডিও রেকর্ড সংরক্ষিত আছে)।
তাছাড়া ডিলারের খাতায় নামে বে-নামে কৃষকের নাম লিখে রাখলেও ২/৪জন কৃষক ছাড়া অন্য কৃষকদের কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি। এমনকি এলাকার লোকজনও তাদের চিনতে পারে না। কৃষি উপসহকারীগণ মাঠ পর্যায়ে তদারকি না করায় বৈধ কোনো কাগজপত্র ছাড়াই ডিলার আবদুস সালাম এক উপজেলা থেকে অন্য উপজেলা, এক ইউনিয়ন থেকে অন্য ইউনিয়নে সার বিক্রি করছেন। কোনো কোনো সাব ডিলারের ব্যবসা পরিচালনা করছেন অন্যরা। মূল ডিলার সহ সাব ডিলারদের দোকানে সার বিক্রির নেই কোনো মূল্য তালিকা, কৃষি উপসহকারী মোস্তাফিজুর রহমান রিপন সাব ডিলারদের খাতা দেখেন না এবং তাদেরকে কোনো তদারকিও করেন না।
সার ও বীজ আইন ২০০৯ এর সমন্বিত নীতিমালা ৬ এর ৩ ধারায় উল্লেখ আছে যে, ডিলারশীপ প্রদানের পরবর্তী পর্যায়ে সংশ্লিষ্ট ডিলার কর্তৃক পেশকৃত কাগজপত্রে কোনো প্রকার অসত্যতা প্রমানিত হলে ডিলারশীপ বাতিল ও সংশ্লিষ্ট ডিলার কর্তৃক সমূদয় জামানত বাজেয়াপ্ত করা হবে। তদুপরি কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনবোধে তার বিরুদ্ধে ফৌজদারী মামলা দায়ের করতে পারবে। উল্লেখ্য যে, উক্ত ডিলার কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার টিসিবি’র ডিলার। তার বড় ভাই আবদুল হেকিম ইটনা উপজেলার চৌগাংগা ইউনিয়নের বিসিআইসি সার ডিলার ও টিসিবি ডিলার এবং কিশোরগঞ্জ সদরের এমওসি ডিলার। আবদুল হেকিমের ছেলে সাইফুল ইসলাম অপু কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার মহিনন্দন ইউনিয়নের বিসিআইসি সার ডিলার।
তাড়াইল উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) ও উপজেলা সার ও বীজ মনিটরিং কমিটির সভাপতিতৌফিকুর রহমান বলেন, দামিহা ইউনিয়নের বিসিআইসি সার ডিলার আবদুস সালামের বিষয়ে লিখিত একটি অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত সাপেক্ষে আইনানুগ ব্যবস্হা নেয়া হবে।