শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪, ০৪:৫১ অপরাহ্ন
শিরোনামঃ
শিক্ষার্থীদের মেধা বিকাশে মুখস্ত শিক্ষার ওপর নির্ভরতা কমাতে পাঠ্যক্রমে পরিবর্তন আনা হচ্ছে : প্রধানমন্ত্রী কিশোরগঞ্জে তীব্র দাবদাহে ইসলামী যুব আন্দোলনের হাতপাখা বিতরণ দেশের উন্নয়ন ত্বরান্বিত করতে টেকসই কৌশল উদ্ভাবনের আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর হলুদ সাংবাদিকতা প্রতিরোধে সকলকে দায়িত্বশীল হতে হবে : বিচারপতি নিজামুল হক গলাচিপা ও দশমিনায় প্রকাশ্যে নিধন হচ্ছে রেনু পোনা,কথা বলতে নারাজ কর্তৃপক্ষ ডিএসইসির নবনির্বাচিত কমিটির দায়িত্ব গ্রহণ বেলা অবেলা : স্বপ্না রহমান ডিএসইসি’র নতুন সভাপতি ডিবিসি’র মুক্তাদির অনিক ডিএসইসি’র সাধারণ সম্পাদক বাংলাদেশের আলো’র জাওহার ইকবাল খান ডিএসইসি’র সাংগঠনিক সম্পাদক দৈনিক উত্তরদক্ষিণে’র শহীদ রানা

বগুড়ায় গরীবের ডাক্তার মিশু ভাই

এনামুল হক রাঙ্গা (বগুড়া প্রতিনিধি):
  • আপলোডের সময় : সোমবার, ২৭ ফেব্রুয়ারী, ২০২৩
  • ৫৮৭০ বার পঠিত

সাজানো গোছানো এসি রুম, রুমের বাইরে অনবরত চেঁচামেচি করতে থাকা এসিস্ট্যান্ট, লাইনে অপেক্ষমাণরত রোগীদের তাগাদা, ফিটফাট মেডিকেল রিপ্রেজেন্টিটিভদের আনাগোণা, কেউ রিপোর্ট দেখাতে এসেছে, কেউ ২ মাসের পুরাতন রোগী তাই ২০০ টাকা ভিজিট কম, দেখানো শেষে পাঁচশ হাজার টাকা ভিজিট দিয়েও আক্ষেপ ডাক্তার সাহেব কথা শোনেননি গুরুত্ব দিয়ে। ডাক্তারের চেম্বার বলতে চোখের সামনে এই চিরচেনা দৃশ্য ভেসে উঠে। এবং সেখানে রিকশাওয়ালা, গার্মেন্টস ফেরত কিশোরী, মজুর কিংবা একে বারেই খেটে খাওয়া মানুষের যাওয়ার সুযোগ বা সামর্থ্য ও নেই।
বর্তমানে এমনটিই দেশের বেশিরভাগ সরকারি -বেসরকারি চিকিৎসাসেবার প্রতিষ্ঠানের ভিতরের দৃশ্য!

কিন্তু ঠিক এর ব্যতিক্রম ও আছে দেশের আনাচে-কানাচে,তেমনি  একজন চিকিৎসক গত ২ যুগেরও বেশি সময় ধরে ধনী-গরীব নির্বিশেষে সবার জন্য বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা দিয়ে  যাচ্ছেন বগুড়ার গরীবের ডাক্তারখ্যাত সামির হোসেন মিশু।

সরকারি চাকরি আর ব্যক্তিগত চেম্বার করে হাঁপিয়ে উঠা ডাঃ সামির হোসেন মিশু  বগুড়ার প্রাণকেন্দ্র সাতমাথায় সময় কাঁটান। আড্ডার ফাঁকে বন্ধু বান্ধব থেকে শুরু করে চা দোকানি, রিকশা চালক, নিম্ন আয়ের মানুষ তাঁর কাছে বিভিন্ন শারীরিক সমস্যা নিয়ে আসলে তিনি খুশিমনে হাতের কাছে যা পান টুকরো কাগজে তৎক্ষনাৎ  ব্যবস্থাপত্র দেন। বগুড়ার টাউন ক্লাবের সামনের রাস্তা এভাবেই হয়ে উঠে ডাঃ মিশুর মধ্য রাতের চেম্বার। মধ্য রাতঃ কারণ দৈনন্দিন ব্যস্ততার পর রাত ১১টার পরেই সুযোগ মেলে আড্ডা দেবার। সেই আড্ডা উপকারভোগীদের মুখে এত সুনাম পায় যে আগে থেকে দরিদ্র রোগীরা এসে অপেক্ষা করে ডাঃ মিশুর জন্য। শুভাকাঙ্ক্ষীরা তাঁদের বসার জন্য কিছু প্ল্যাস্টিকের চেয়ারের ব্যবস্থা করে, চিকিৎসকের টেবিল এবং ছাপানো প্যাডেরও যোগাড় করে স্থানীয়রাই। বিনামূল্যে শুধু চিকিৎসা সেবাই না, প্রয়োজনে ওষুধের ব্যবস্থা, সমাজসেবা বিভাগের সহায়তা পেতে সাহায্য করা, এমনকি অনেক গরীব রোগীকে স্বল্প মূল্যে অস্ত্রপ্রচারের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন ডাঃ মিশু।

সমসাময়িক চিকিৎসকদের তুলনায় ডাঃ মিশু আর্থিক, পেশাগত দিক থেকে খুব বেশি এগিয়ে না হলেও শুধুমাত্র মানুষের জন্য কিছু করার তাড়না থেকে এ সেবা দিয়ে আসছেন, এতগুলো মানুষের ভালোবাসা বাড়তি পাওয়া বলে তিনি মনে করেন। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের সাবেক ছাত্র বর্তমানে বগুড়া সদর উপজেলার উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত আছেন।

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যে বড় হওয়া ডাঃ মিশু সেই ধারা এখনো ধরে রেখেছেন তার নিজের কাছে। শহরের যে কোনো আড্ডায় খালি গলায় একের পর এক গান গাওয়াচ্ছেন, নিজে গাইছেন, বগুড়া শহরে পহেলা বৈশাখ ঈদ পার্বণ যে কোন উৎসবের প্রস্তুতি ও পরিকল্পনায় ডাঃ মিশুর সরব উপস্থিতি বিদ্যমান ।

চিকিৎসকদের পেশাজীবী সংগঠন বগুড়া বিএমএর যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক   এবং স্বাচিপের সভাপতি হিসেবে কাজ করছেন। ডাঃ মিশুর বাবা ডাঃ সাফদার হোসেন ১৯৯৬ সালে মারা যাবার পর তিনি বাবার স্মৃতিকে ধরে রাখতে স্বেচ্ছাসেবামূলক কার্যক্রম শুরু করেন।

ডাঃ সামির হোসেন মিশু বগুড়ার ঐতিহ্যবাহী, সোনালী অতীত ফুটবল ক্লাবের সভাপতি হিসাবে ও ক্রীড়া জগতে সমান জনপ্রিয় হয়ে আছেন বগুড়ার ক্রীড়ামোদিদের কাছে।

সভ্য সমাজের মানুষ হিসেবে সবাই যখন দুহাতে নিতে ব্যস্ত  তখন ডাঃ মিশুর মত কয়েকজন মানুষ আজও নিঃস্বার্থ ভাবে দিয়ে যাচ্ছে বলে, দেনা পাওনার হিসেবে এ সমাজ সংসার টিকে আছে।
গরীবের কাছ থেকে ভিজিট নেন না, এটা হয়ত টাকার অংকে খুব বড় কিছু নয়, কিন্তু বগুড়ার শহরের খেঁটে খাওয়া মানুষের কাছে ডাঃ মিশু একটি স্বস্তির নাম, ভরসার নাম যিনি হাসিমুখে এই মানুষগুলোর সুখ দুঃখের কথা শুনেন এবং  দ্বিতীয়বার দেখা হলে নিজ থেকেই তাদের খোঁজখবর নেন।

বগুড়ায় ডাঃ মিশু চিকিৎসার পাশাপাশি সাংস্কৃতিক ও সমাজসেবামূলক কাজে নিজেকে নিয়োজিত রাখতে বেশি স্বাচ্ছন্দবোধ করেন বলে জানান তিনি। ডাঃ মিশু বগুড়ার একজন ক্রীড়াব্যক্তিত্ব ও বটে। বগুড়ার অগ্রগামী উন্নয়নে সকল সামাজিক কর্মকান্ডে মিশুকে ডাকলেই পাওয়া যায় এমনটি জানান, বগুড়ার সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব সাদেকুর রহমান সুজন। এসময় সুজন ডাঃ মিশু সম্পর্কে বলেন তার মতো চিকিসৎক আজকের সমাজে বিরল, এমন উদার ও মহত্ত্ব মনের মানুষ যদি দেশের সকল পেশায় থাকতো তাহলে সত্যি ই দেশটা অনেক সুখী ও সমৃদ্ধির হতো।

ব্যক্তিগত জীবনে  ভালোবেসে ঘর বাঁধা সহযাত্রী স্ত্রী এক ছেলে ও এক মেয়ে কে রেখে মানুষের সেবায় সময় পার করে দেয়া ডাঃ মিশু নিজেকে ভাগ্যবান মনে করেন। তিনি বলেন, সবাইতো মানবসেবা করতে পারেনা, এটা একটি মহৎসেবা।

দয়া করে শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরীর আরো খবর..