বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে প্রায় ২০০ কোটি টাকার সন্দেহজনক লেনদেনের উৎস ও ব্যাখ্যা চাইতে জাতীয় পার্টির (জাপা) কো-চেয়ারম্যান এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার এবং তার স্ত্রী সংসদ সদস্য নাসরিন রত্নাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলব করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
সম্প্রতি দুদকের প্রধান কার্যালয়ের উপ-পরিচালক ও অনুসন্ধান কর্মকর্তা মো. মাসুদুর রহমানের দেওয়া এক তলবি নোটিশে তাদের আগামী ১০ জানুয়ারি দুদকে হাজির হওয়ার জন্য বলা হয়েছে। দুদকের ঊর্ধ্বতন একটি সূত্র ঢাকা পোস্টকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তলবি চিঠিতে বলা হয়, গত ১০ নভেম্বর রুহুল আমিন হাওলাদারের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে অভিযোগ সংশ্লিষ্ট বক্তব্য প্রদানের জন্য দুই মাস সময় দেওয়া হয়। দুই মাস সময় দেওয়ার পর কমিশনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আগামী ১০ জানুয়ারি কমিশনে উপস্থিত হয়ে অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তার নিকট বক্তব্য প্রদানের জন্য অনুরোধ করা হলো।
দুদক সূত্রে জানা যায়, বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জাতীয় পার্টির সাবেক মহাসচিব ও কো-চেয়ারম্যান এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার এবং বরিশাল-৬ আসনের সংসদ সদস্য ও রুহুল আমিন হাওলাদারের স্ত্রী নাসরিন রত্নার নামে থাকা বিভিন্ন অ্যাকাউন্টে প্রায় ২০০ কোটি টাকার সন্দেহজনক লেনদেনের তথ্য পাওয়া যায়। বাংলাদেশ ব্যাংকের নজরদারিতে সন্দেহজনক লেনদের তথ্য ধরা পড়লে, বিষয়টি খতিয়ে দেখতে দুদককে অনুরোধ করা হয়।
এরই পরিপ্রেক্ষিতে অনুসন্ধান পর্যায়ের প্রথম ধাপে গত বছরের আগস্টে প্রথমবার তলব করা হলে তখন হাজির হননি জাপা নেতা ও তার স্ত্রী। তারা সময় চেয়ে আবেদন করেন। তাদের আবেদন আমলে নিয়ে দুই মাস সময় দেওয়ার পর দ্বিতীয়বারের মতো তলব করা হলো।
দুদকে তলবের বিষয়ে জানতে জাতীয় পার্টির নেতা রুহুল আমিন হাওলাদারের ফোনে কয়েকবার চেষ্টা করেও সাড়া পাওয়া যায়নি। এমনকি তাকে ক্ষুদে বার্তা দেওয়া হলেও তার জবাব দেননি তিনি।
এর আগেও দুদকের তরফ থেকে কয়েকদফা তলব করা হয়েছিল রুহুল আমিন হাওলাদারকে, কিন্তু কখনই তিনি হাজির হননি। ২০১৯ সালের ২০ মে এমন একটি তারিখে ওমরাহ হজে যাওয়ার প্রস্তুতির কারণ দেখিয়ে এড়িয়ে যান তিনি।
সরকারি সম্পদ আত্মসাতের মাধ্যমে শত কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ অনুসন্ধানে ২০১৮ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর রুহুল আমিন হাওলাদারকে প্রথম দফায় তলব করে দুদক। কিন্তু সে সময় নির্বাচনের প্রস্তুতির কারণ দেখিয়ে দুদকে হাজির না হয়ে তিনি হাজিরা থেকে অব্যাহতির আবেদন করেন।
২০১৯ সালের ২৮ মার্চ রুহুল আমিন হাওলাদারকে সেগুনবাগিচায় দুদকের প্রধান কার্যালয়ে হাজির হতে বলা হয়। ওই নোটিশের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাওলাদার রিট আবেদন করলে আদালত প্রাথমিক শুনানি নিয়ে চার সপ্তাহের জন্য দুদকের তলব স্থগিত করে দিয়েছিলেন।
এরপর সে স্থগিতাদেশটি ২০১৯ সালের ২৮ এপ্রিল স্থগিত করে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। এর ফলে হাওলাদারকে দুদকের জিজ্ঞাসাবাদে আর কোনো আইনি বাধা না থাকায় তলব করে ফের নোটিশ দেওয়া হয়।