রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৪:৫৬ পূর্বাহ্ন
শিরোনামঃ
মাছের প্রজননে সময় না দিয়ে মানুষ দায়িত্বহীনতার পরিচয় দিচ্ছে : মৎস্য উপদেষ্টা কোনো নিরীহ মানুষ যেন হয়রানির শিকার না হয় : আইজিপি নির্বাচন যত দেরি হবে ততই ষড়যন্ত্র হবে : তারেক রহমান কায়কোবাদের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন উপলক্ষে মুরাদনগরে বিএনপির প্রস্তুতি সভা কিশোরগঞ্জে ’দুর্বার প্রজন্মের’ শীতবস্ত্র বিতরণ অনুষ্ঠিত তারেক রহমান ও কায়কোবাদের মামলা প্রত্যাহার না করলে আন্দোলনের হুমকি হিন্দু সম্প্রদায়ের রাতের অন্ধকারে ঘরে ঢুকে বৃদ্ধাকে শ্বাসরোধে হত্যা তাড়াইলে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের দাওয়াতি মজলিস ও মতবিনিময় সভা মুরাদনগরে মাটিখেকোদের বিরুদ্ধে রাতের আঁধারে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান বরিশাইল্লা বউ : লুৎফুন্নেসা রহমান

দুদক দায়মুক্তি দিচ্ছে কর্ণফুলী গ্যাসে’র সেই নয় কর্মকর্তাদেরকে

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • আপলোডের সময় : সোমবার, ৩১ জানুয়ারী, ২০২২
  • ৫৯২২ বার পঠিত

পেট্রো বাংলার অধীন ‘কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লি:’ (কেজিডিসিএল)র নিয়োগ জালিয়াতি ও পদোন্নতির অভিযোগ থেকে ৯ কর্মকর্তাকে দায়মুক্তি দিচ্ছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। দায়মুক্তির তালিকায় রয়েছেন বহুল বিতর্কিত কর্মকর্তা আইয়ুব খান চৌধুরীও। যদিও তাদের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ২০১/৪০৯/১০৯ ধারাসহ ১৯৪৭ সনের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫ (২) ধারায় মামলা রুজুর সুপারিশ ছিলো। কিন্তু ‘পুন:অনুসন্ধান’র নামে দেয়া হচ্ছে দায়মুক্তি। দুদকের ‘রাতকে দিন করা’র প্রতিবেদন প্রণয়নে কর্মকর্তাদের মাঝে লেনদেন হয়েছে অন্তত: ৩ কোটি টাকা। অর্থের ভাগ পাওয়া কর্মকর্তাদের পরিকল্পনা ঠিক থাকলে চলতি সপ্তাহেই দায়মুক্তির এই প্রতিবেদন অনুমোদন লাভ করবে কমিশনের। তথ্য নির্ভরযোগ্য সূত্রের।

সূত্রটি জানায়, ২০২০ সালে ২২ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রামের একটি দৈনিকে কর্ণফুলী গ্যাসের ৩৭ ভুয়া কর্মকর্তাকে রাতের আঁধারে পদোন্নতি দেয়ার প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। তাতে উল্লেখ করা হয়, নিয়োগ পরীক্ষায় ৩৭ কর্মকর্তা ফেল করেন। এদের অনেকের শিক্ষাগত যোগ্যতাও ছিল না। তবু ১০ বছর আগে ৩৭ জন লোক ‘নিয়োগ’ পেয়েছিলেন সহকারী ব্যবস্থাপক পদে। জালিয়াতি ধামাচাপা দিতে এমনকি তাদের কোনো নথিপত্রও রাখা হয়নি। এদের নিয়োগ পরীক্ষার কোনো নথি, লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষার খাতার কিছুই পাওয়া যায়নি। কারও কারও সনদও জাল। কেউ কেউ পাসের আগে পাস দেখিয়ে সার্টিফিকেট জমা দিয়েছেন নিয়োগের সময়। এমনকি নজিরবিহীন কাণ্ডে নিয়োগ পাওয়া সেই কথিত ‘কর্মকর্তারা’ গত ১০ বছরে পদোন্নতিও বাগিয়ে নিয়েছেন। নিয়োগ-জালিয়াতির বিষয়ে অনুসন্ধান করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। সেই অনুসন্ধানের তথ্য গোপন করে দেয়া হয় পদোন্নতি। এ ক্ষেত্রে ব্যবহার হয় দুদকের ভুয়া ক্লিয়ারেন্স।

ভুয়া নিয়োগ এবং পদোন্নতির অভিযোগটি অনুসন্ধান (চট্টগ্রাম-২’র ই/আর নং-২৬/২০১৮) শেষে সংস্থার সমন্বিত জেলা কার্যালয়, চট্টগ্রাম-২ কমিশনে প্রতিবেদন পাঠায়। তাতে কর্ণফুলী গ্রাসের তৎকালিন ব্যবস্থাপনা পরিচালক আইয়ুব খান চৌধুরী ও অন্যান্যদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগে আংশিক অনুসন্ধান বিশদ (মধ্যরাতের পদোন্নতি ও ৩৭ ভুয়া কর্মকর্তার নিয়োগের বিষয়ে) বিবরণ ছিল। প্রতিবেদনে ৩ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলা রুজুর সুপারিশ করা হয়।

প্রতিবেদনে বলা হয়, দুদকে অভিযোগ অনুসন্ধানাধীন থাকা, গত ২০১১ সালের সহকারী ব্যবস্থাপক (সাধারণ) পদের মূল নিয়োগ নথি অসৎ উদ্দেশ্যে বিলোপসাধন করে এবং নিয়োগপ্রাপ্ত মো: মহিউদ্দিন চৌধুরীর ব্যক্তিগত নথি জব্দ থাকা, গত ২০১৫ সালের উপ-ব্যবস্থাপক (কারিগরি) পদের নিয়োগ নথি এবং দুদক কর্তৃক মো: আশেক উল্লাহ চৌধুরী ও শাপলা দেওয়ানজির ব্যক্তিগত নথি জব্দ থাকা, গত ৩১/১২/২০১৭ ও ৩১/১২/২০১৮ তারিখের রেটিং শীট জব্দ থাকা এবং দুদকের ছাড়পত্র ও ব্যবস্থাপনা পরিচালকের অনুমোদন ছাড়াই ৩৩ দিন মহাব্যবস্থাপক (প্রশাসন ভারপ্রাপ্ত) হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে আপন ছোট ভাই প্রকৌশলী রফিক খানকে ব্যবস্থাপক হতে উপ-মহাব্যবস্থাপক (কারিগরি) পদে পদোন্নতির জন্য তড়িগড়ি করে এবং নিয়মের তোয়াক্কা না করে অসৎ উদ্দেশ্যে অর্পিত ক্ষমতার অপব্যবহার করে একে অপরের যোগসাজশে নিজেরা লাভবান হওয়ার নিমিত্তে সর্বমোট ৫৭ জনকে পদোন্নতি প্রদানের সাথে জড়িত থেকে অপরাধমূলক অসদাচারণ করে অভিযুক্ত (১) প্রকৌশলী মো: সারওয়ার হোসেন, মহাব্যবস্থাপক (ইঞ্জি: সার্ভিস), কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানী লি:, পিতা: মৃত আব্দুস শুকুর খান, স্থায়ী ঠিকানা ৬-ডি/২২-১৬, মীরপুর, ঢাকা-১২১৬, (২) লুৎফুল করিম চৌধুরী, উপ-মহাব্যবস্থাপক (প্রশাসন), কেজিডিসিএল, প্রধান কার্যালয়, ষোলশহর, চট্টগ্রাম; পিতা-মরহুম মো: নূরুন্নবী চৌধুরী, স্থায়ী ঠিকানা: গ্রাম: শোবন্দী, ডাকঘর: বরমা, উপজেলা: চন্দনাইশ, জেলা: চট্টগ্রাম ও (৩) সুলতান আহম্মেদ, ব্যবস্থাপক, কেজিডিসিএল, ফৌজদারহাট, চট্টগ্রাম, পিতা মৃত তোরাব আলী মন্ডল, মাতা মৃত জহুরা খাতুন, গ্রাম-তারাবাড়িয়া, ডাকঘর-সাতবাড়িয়া, থানা-সুজানগর, জেলা-পাবনা, দণ্ডবিধি’র ২০১/৪০৯/১০৯ ধারা এবং ১৯৪৭ সনের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫ (২) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ করায় বর্ণিতদের বিরুদ্ধে একটি মামলা রুজুর সুপারিশ করে এ আংশিক অনুসন্ধান প্রতিবেদন (মধ্যরাতের পদোন্নতি ও ৩৭ ভুয়া কর্মকর্তার নিয়োগের বিষয়ে) দাখিল করা হলো।

তবে এ প্রতিবেদনে নিয়োগ জালিয়াতি এবং অবৈধ পদোন্নতির মূলহোতা কেজিডিসিএল’ ব্যবস্থাপনা পরিচালক আইয়ুব খান চৌধুরী, অবৈধভাবে নিয়োগ পাওয়া কর্মকর্তাদের আসামি করার বিষয়টি চেপে যাওয়া হয়। তবে অনেক সময় দুদক প্রভাবশালী ব্যক্তিদের নাম এজাহারে উহ্য রাখে। পরে তদন্ত পর্যায়ে আসামি করে চার্জশিট দেয়। এটি কমিশনের একটি কৌশল। কিন্তু কর্ণফুলি গ্যাসে নিয়োগ-পদোন্নতি দুর্নীতির পুন:অনুসন্ধান প্রতিবেদনে দায়মুক্তির সুপারিশ করা হয় ৩ আসামিসহ সম্ভাব্য আরো ৫ জনের।

দুদকের চট্টগ্রাম সমন্বিত জেলা কার্যালয়-২ এর উপ-পরিচালক (বর্তমানে ঢাকা সমন্বিত কার্যালয়) মুহ্র; মাহবুবুল আলম এ সুপারিশ দেন। দায়মুক্তির সুপারিশপ্রাপ্ত ৯ কর্মকর্তা হলেন, আইয়ুব খান চৌধুরী, ভুয়া কাগজে নিয়োগ এবং পদোন্নতিপ্রাপ্ত তার ছেলে মো: আশেক উল্লাহ চৌধুরী, আইয়ুব খান চৌধুরী নিকটাত্মীয় শাপলা দেওয়ানজী, ফারুক আহমেদ, আরিফা আক্তার, আপেল মাহমুদ, মো: লোকমান হোসেন গাজী, মো: হাসান আল কাদির এবং কারীমা আখতার।

প্রথম অনুসন্ধান প্রতিবেদনে তাদের কার কি অপরাধ সেটির পৃথক বিশ্লেষণ এবং বিবরণ রয়েছে। কিন্তু পুন:অনুসন্ধানের প্রতিবেদনে (দায়মুক্তির সুপারিশ সম্বলিত) তাদের পক্ষে সাফাই গাওয়া হয়। তাতে শেষোক্ত ৮ ব্যক্তির বিষয়ে বলা হয়, অভিযোগ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিগণ নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর নির্ধারিত সময়ের মধ্যে আবেদন করেন। কেজিডিসিএল কর্তৃপক্ষ গৃহিত আবেদনপত্রগুলো কমিটির তত্ত্বাবধানে যাচাই-বাছাই শেষে সংশ্লিষ্ট নিয়োগ কমিটি লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা গ্রহণ করা হয়। লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতে নিয়োগ কমিটির সুপারিশের প্রেক্ষিতে কর্তৃপক্ষ অভিযোগ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিগণের নামে নিয়োগপত্র ইস্যু করেন।

এ প্রেক্ষিতে তারা চাকরিতে যোগদান করেন। ২০১৬ সালের উক্ত উপ-ব্যবস্থাপক (কারিগরি) নিয়োগ সম্পর্কিত বিষয়টি ১৮.০৫.২০১৮ তারিখে সরকারি বাণিজ্যিক নিরীক্ষাদল নিশেষভাবে নিরীক্ষা স্পেশাল অডিট করে এবং নিরীক্ষাকালে উপ-ব্যবস্থাপক পদে নিয়োগ প্রক্রিয়ায় কোনো অনিয়মের প্রমাণ পায়নি। চাকরিতে যোগদানের পর কেজিডিসিএল কর্তৃপক্ষ কর্তৃক তার প্রাক পরিচয় ও শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদপত্র বাংলাদেশ পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ কর্তৃক ভেরিফায়েডকৃত বিধায় তাদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগটি প্রমাণিত না হওয়ায় পরিসমাপ্তি করা যেতে পারে।

প্রতিবেদনে আইয়ুব খান চৌধুরী ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের চাকরি (১৯৮৭) এবং চেক জালিয়াতির দায়ে বরখাস্ত (স্মারক নং ৩৬৩০/৯২) হওয়া, অর্থ আদায়ের নামে মামলা (চট্টগ্রাম কোতয়ালী থানার মামলা নম্বর ১১ তারিখ ৬ মার্চ ১৯৯১) এবং ভুয়া জন্মতারিখ ( ৪ আগস্ট ১৯৬২) প্রসঙ্গে সাফাই গাওয়া হয়।

বলা হয়, তিনি (আইয়ুব খান চৌধুরী) ১৯৭৮ সালে এসএসসি পরীক্ষায় প্রথমশ্রেণিতে উত্তীর্ণ হন। তার এসএসসি পাসের সনদ অনুযায়ী জন্ম তারিখ ০৪/০৮/১৯৬২ খ্রি:। তিনি পেট্রোবাংলার নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির আলোকে আবেদন করে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ১৬.০১.২৯৯৪ তারিখে সহকারী ব্যবস্থাপক পদে (প্রথম শ্রেণীর পদ) চাকরিতে যোগদান করেন। সর্বশেষ তিনি প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনক্রমে গ্রেড-২ (অতিরিক্ত সচিব পদমর্যাদা) পদে পদোন্নতি প্রদান করা হয়। এর পদ থেকে তিনি ০৩/০৮/২০২১ সালে অবসর গ্রহণ করেন। সকল অভিযোগ থেকে দায়মুক্তির সুপারিশ করে প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, ‘মো: আইয়ুব খান চৌধুরীর বিরুদ্ধে আনীত বিভিন্ন অভিযোগ রেকর্ডভিত্তিকভাবে প্রমাণিত না হওয়ায় সংশ্লিষ্ট অভিযোগগুলো পরিসমাপ্তি করা যেতে পারে।’ দুদকের চট্টগ্রাম বিভাগীয় কার্যালয়ের পরিচালক মো: মাহমুদ হাসান প্রতিবেদনটি (স্মারক নং-০০.০১.১৫০০.৬২১.০১.১৪৩.১৮) অনুমোদনের জন্য গত ১৩ জানুয়ারি প্রধান কার্যালয়ে পাঠান। দুদকের দুর্নীতিগ্রস্ত কর্মকর্তাদের পরিকল্পনা অনুযায়ী চলতি সপ্তাহে এটি কমিশনের টেবিলে ওঠার কথা রয়েছে।

দয়া করে শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরীর আরো খবর..