বেতাগী(বরগুনা) প্রতিনিধি:
বরগুনার বেতাগীতে খাল খননে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। সরকারের ৫৫ লাখ টাকা ব্যয়ে প্রায় সাড়ে ১০ কিলোমিটার খালের পলি অপসারণের কথা থাকলেও তা না করে ভেকু মেশিন দিয়ে মাটি কেটে ঠিকাদার ও স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরের (এলজিইডি) কর্মকর্তাদের যোগসাজসে অর্থ লুটপাটের পাঁয়তারা করা হচ্ছে বলে সুবিধাভোগী একাধিক কৃষকদের অভিযোগ। ফলে খাল খননের সুফল পাচ্ছে না কৃষকরা। জানা গেছে, বেতাগী উপজেলার সদর, হোসনাবাদ ও মোকামিয়া ইউনিয়নে পানি নিস্কাশন এবং সংরক্ষণের জন্য ৩টি উপ- প্রকল্পের মাধ্যমে ৫টি খাল খনন উপ-প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ৫৫ লাখ টাকা। বেতাগী এলজিইডির বাস্তবায়নে সদর, হোসনাবাদ ও মোকামিয়া পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতি কাজগুলো তদারকি করছে। কিন্তু দেখা গেছে, কিছু জায়গায় খালের দু’পাশে ঘাট কেটে পরিস্কার করা হয়েছে মাত্র। কোথাও এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে যেন নালা। কিছু জায়গায় খনন করলেও খালের গভীরতাও খুব একটা দেখা যায়নি। এলাকাবাসী জানেন না কীভাবে এর সুফলভোগী হবেন। এলজিইডি কার্যালয় সূত্র জানা গেছে, প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য সমবায় অফিস থেকে নিবন্ধিত এবং এলজিইডির ক্রাইটেরিয়া পরিপূর্ণকারী কোনো সংস্থাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। এরপর তাদের কাজের প্লাণ এবং ডিজাইন বুঝিয়ে দেওয়া হয়। সংস্থাটির নির্বাচিত কমিটি তখন স্থানীয়ভাবে লেবার কন্টাক্টিং সোসাইটি (এলসিএস) তৈরি করে। সুবিধাভোগী জনগণের মাধ্যমে ১০-১৫ জনের আলাদা এলসিএস গ্রæপ করে তারা এটি বাস্তবায়ন করে। সরেজমিনে এসব খাল ঘুরে দেখা গেছে অনিয়মের চিত্র। পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতি এবং এলজিইডির চুক্তি ও নির্দেশ মোতাবেক শুকনো খাল মাটি কাটা শ্রমিকের মাধ্যমে কোদাল ব্যবহার করে খনন করতে হবে। কিন্তু খনন করা হচ্ছে এস্কেভেটর বা ভেকু মেশিন ব্যবহার করে। এ ভাবে খালের কাদা মাটি কেটে ৫৫ লাখ টাকার অধিকাংশ টাকা লোপাটের পথ তৈরি করা হয়েছে বলে অভিযোগ মিলেছে। মেশিন ব্যবহার করে খননের নামে খালটিকে নালায় পরিনত করা হচ্ছে। এস্কেভেটর মেশিনের বডির মাপ মোতাবেক খালের মেঝের প্রস্থ হচ্ছে ৬-৭ ফুট। মেশিন দিয়ে কাটা কাদা মাটির অধিকাংশ খালের গায়ে দেওয়া হচ্ছে। ফলে বর্ষা মৌসুমে বৃষ্টির তোপে গায়ের মাটি খুলে ফের খালে এসে পড়বে এবং দ্রæত ভরাট হয়ে যাবার আশংকা করছেন এলাকাবাসী। স্থানীয় একাধিক কৃষক অভিযোগ করেন, নিয়ম মেনে খাল খনন না করে ঠিকাদার ও এলজিইডি’র লোকজন এক হয়ে অর্থ লুটপাট করেছেন। দায়সারা গোছের এ ধরনের খাল খনন তাদের কোনো কাজে আসছেনা। নালার মত করে খনন করা খালের পানিতে ওই পরিমানের অর্ধেক জমিতেও সেচ দেওয়ার পানি মিলবে না, মিলবে না মাছও। এমনটা দাবী করছেন স্থানীয় মৎস্যজীবী ও অন্যান্য ভুক্তভোগিরা। মেশিন ব্যবহার করে মাটি কাটার ফলে কর্ম মিলছে না দরীদ্র জনগোষ্ঠীর। ব্যহ ত হচ্ছে প্রকল্পের উদ্দেশ্য। খাল কাটার নামে এমন অনিয়মের প্রতিবাদে ফুঁসে উঠেছেন সাধারণ মানুষ। লক্ষীপুরা- রানীপুর-খন্তাকাটা উপ-প্রকল্পের ঠিকাদার মো: মোস্তাফিজুর রহমান (মুরাদ খলিফা ) বলেন, ‘ কাজে ত্রæটি-বিচ্যুতি থাকতেই পারে। তবে সব অভিযোগ সত্য নয়। যতটুকু সম্ভব প্রাক্কলন অনুসারেই খনন কাজ হচ্ছে।’ এসব অভিযোগ অস্বীকার করে ছোট ও বড় মোকামিয়া উপ-প্রকল্পের ঠিকাদার মো. শাহ জালাল (ওরফে জালাল মেম্বর) বলেন, ‘যত অভিযোগ মিথ্যাও বানোয়াট। সঠিকভাবেই খাল খননের কাজ বাস্তবায়িত হচ্ছে।’ এলজিইডি’র বেতাগী উপজেলা প্রকৌশলী মো. রাইসুল ইসলাম বলেন, এই মুহূর্তে যতটুকু জানি সরকারি নিয়ম মেনেই খনন কাজ হচ্ছে। সরেজমিনে গিয়ে কোথায় কোথায় সমস্যা তা দেখে বিস্তারিত পরে জানাতে পারবো।