হবিগঞ্জের নবীগঞ্জে আলোচিত কলেজ ছাত্রী তন্নী রায় ধর্ষণ ও হত্যা মামলার আসামী প্রেমিক রানু রায়ের মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন সিলেট দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-২/৭ জানুয়ারি সোমবার দুপুর সাড়ে ১২ টায় ট্রাইব্যুনাল এর বিচারক মোঃ রেজাউল করিম এ রায় দেন।
মৃত্যুদ-প্রাপ্ত রানু রায় (২৭) নবীগঞ্জ পৌর এলাকার জয়নগর গ্রামের কানু রায়ের পুত্র। চাঞ্চল্যকর এ মামলার রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করে দ্রুত এ রায় কার্যকরের দাবি জানিয়েছেন তন্নীর পরিবার সূত্র জানায় তন্নী রায় পৌর এলাকার শিবপাশা গ্রামের বিমল রায়ের কন্যা ও নবীগঞ্জ ডিগ্রী কলেজে ২০১৬ সালে এইচএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়, ২০১৬ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর বেলা দেড়টার দিকে তন্নী রায় নবীগঞ্জ শহরতলীর শেরপুর রোডের ইউকে আইসিটি ইন্সটিটিউট কম্পিউটার ট্রেনিং সেন্টারে যাওয়ার কথা বলে বাসা থেকে বের হয়ে আর ফেরেনি। তার নিখোঁজের ঘটনায় নবীগঞ্জ থানায় সাধারণ ডায়েরী করেন তন্নী রায় এর বাবা বিমল রায়।
সাধারণ ডায়েরী করার ৩ দিনের মাথায় তন্নী রায়ের বস্তাবন্দি লাশ নবীগঞ্জ শহরতলীর একটি নদী থেকে উদ্ধার করে নবীগঞ্জ থানা পুলিশ এদিকে, তন্নী হত্যা মামলার প্রধান আসামী রানু রায়কে গ্রেফতার ও সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে একের পর এক বিভিন্ন সামাজিক, রাজনৈতিক সংগঠন মানববন্ধন করে। হত্যাকা-ের ২০ দিনের মাথায় ডিবি পুলিশ বি.বাড়িয়া থেকে অভিযান চালিয়ে রানুকে গ্রেফতার করে।
পরদিন হবিগঞ্জের জুডিসিয়াল ম্যাজিস্টেট আদালতে সে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি প্রদান করে এবং তন্নী হত্যাকাণ্ডের কথা স্বীকার করে। ওই সময় হত্যার কারণ হিসেবে রানু রায় স্বীকারোক্তিতে বলে-তন্নীর সাথে দীর্ঘদিন ধরে তার প্রেমের সম্পর্ক চলে আসছিল। এর কারণে ১৭ সেপ্টেম্বর শনিবার প্রেমিক রানু রায়ের ডাকে সাড়া দিয়ে তন্নী কোচিং সেন্টারে যাওয়ার কথা বলে বাসা থেকে বের হয়ে তার বাড়িতে যায়। যাওয়ার পর তন্নীর সাথে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বার্তার এক পর্যায়ে ঝগড়ার সৃষ্টি হয় এ সময় রানু রায় তন্নীকে হাত দিয়ে জোরে আঘাত করে।
এরপর তন্নীর গলায় রানু চেপে ধরলে এক পর্যায়ে ঘটনাস্থলে তন্নী মৃত্যুর কোলে ঢলে পরে অপরদিকে, তন্নীর ময়না তদন্তের রিপোর্টে উল্লেখ রয়েছে-জোর পূর্বক ধর্ষন করে গলা টিপে তাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। এদিকে গত ১ ও ২ জানুয়ারী আইনজীবীদের যুক্তিতর্ক পর্ব শেষে ৭ জানুয়ারি সোমবার মামলার রায়ের দিন ধার্য করেন আদালত।
বিভাগীয় স্পেশাল পিপি কিশোর কুমার কর আসামিদের সর্বোচ্চ শাস্তির বিষয়ে আইনগত যুক্তি উপস্থাপন করেন। অন্যদিকে আসামীদের আইনজীবী মিনহাজ গাজী আসামীকে নির্দোষ উল্লেখ করে তাঁদের বেকসুর খালাস দাবি করে আইনগত যুক্তি তুলে ধরেন। ৭ জানুয়ারি সোমবার সিলেট দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-২ এর বিচারক মোঃ রেজাউল করিম আলোচিত এই মামলার রায়ে আসামী রানু রায়কে ৩০২ ধারা মোতাবেক
মৃত্যুদ-ও ১০ হাজার টাকা জরিমানা এবং ২০১ ধারা মোতাবেক ৩ বছরের জেল ও ৫ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে ৬ মাস জেল প্রদান করেন। তন্নী রায়ের বাবা বিমল রায় জানান, আমার মেয়ে তন্নীকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। আসামী রানুর মৃত্যুদ- রায় হওয়ায় আমরা সন্তুষ্ট। এ রায় দ্রুত কার্যকর করার জোর দাবি জানান তিনি। রায়ে সন্তুষ্ট তন্নীর ভাই বিভাষ রায় দ্রুত এ রায় কার্যকরের দাবি জানিয়ে বলেন, আমি চাই আমার বোনের মত আর কেউ যেন এ ধরনের ঘটনার শিকার না হয়। দেশের অন্য বিচারপ্রার্থীরা যেন দ্রুত ন্যায়বিচার পায়।