শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ১০:১৭ পূর্বাহ্ন
শিরোনামঃ
সড়ক ও জনপথ কর্মকর্তার ব্যাংকে শত কোটি টাকার লেনদেন হরিরামপুরে ৪ ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা অনিয়ম-দুর্নীতির মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা অর্জনের অভিযোগ ডিপিএইচই’র প্রাক্কলনিক আনোয়ারের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের উন্নয়নে চীনের সমর্থন অব্যাহত রাখার আশ্বাস দিলেন শি জিনপিং বেনজীর-মতিউর-এর কুশপুতুল দাহ করায় হুমকি : উদ্বেগ প্রকাশ কোটা সমস্যার সমাধান করার দাবি জাতীয় শিক্ষাধারার হরিরামপুরে পদ্মা তীর রক্ষা বাঁধে ধস, জনমনে আতংক মুরাদনগর শ্রীকাইলে ক্যাপ্টেন নরেন্দ্রনাথ দত্ত স্মৃতি ফুটবল টুর্নামেন্টের ফাইনালে হুরোয়া চ্যাম্পিয়ন তাড়াইলের কথিত পীর লুৎফর রহমানের বিরুদ্ধে ইউএনও বরাবর লিখিত অভিযোগ বর্ষার পানি বৃদ্ধির সঙ্গে বাড়ছে নৌকার চাহিদা

বেতাগীর শিশু শিক্ষার্থী ফাতিমার ভর্তি হওয়া হয়নি, যাওয়া হয়নি বই উৎসবেও

বেতাগী (বরগুনা) প্রতিনিধি:
  • আপলোডের সময় : মঙ্গলবার, ১০ জানুয়ারী, ২০২৩
  • ৫৯৪৩ বার পঠিত

এখনো ভর্তি হয়নি শিশু শিক্ষার্থী ফাতিমা আক্তার। যাওয়া হয়নি পহেলা জানুয়ারি বই উৎসবেও। সেদিনকার তার প্রতি অমানবিক আচরণ সে কিছুতেই ভুলতে পারছে না। চাখেমুখেও ভীতি আর আতঙ্কের ছাপ।

ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে। এমনকি সহপাঠীদের দেখলেও লজ্জায় মুখ লুকায়। থাকেন সারাক্ষণ ঘরের কোনে নীরব ও নিস্তব্ধে। বাকীটা সময় কাটান ছোট বোন আফসানার সাথে। আদরের সন্তানের জীবনের এ ছন্দপতনে তাঁর অভিভাবকরাও ক্ষুব্দ ও হতাশ। স্থানীয়দের মাঝে চলে আলোচনার ঝড়।

উপজেলার পূর্ব দেশান্তরকাঠী নব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হিসাবে গত ৩০ ডিসেম্বর প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষায় বেতাগী সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে অংশ গ্রহণ করে (তাঁর রোল নং: ম-৪২)। পরীক্ষা চলার ৪৫ মিনিটের মাথায় ফাতিমা আক্তারকে কেন্দ্র থেকে বের করে দেওয়া হয়।

শিশু শিক্ষার্থী বাবা পেশায় আব্দুস সালাম মিন্টু একজন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী। মা ইসরাত জাহান বেগম গৃহিণী। মিন্টু-ইসরাত দম্পতির ৩ মেয়ে। মেঝ মেয়ে সায়মা আর ছোট মেয়ে আফসানা। সোমবার দুুপুরে তার গ্রামের বাড়ীতে গেলে এ নিয়ে কথা হয় শিশু শিক্ষার্থী ফাতিমা আক্তারের মা ইসরাত জাহান বেগমের সঙ্গে।

এসময় তিনি অভিযোগ করেন, গত ৩০ ডিসেম্বর কেন্দ্রে প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষায় কর্তব্যরত পরিদর্শক তার মেয়ের কাছে আচমকা গিয়ে তার মুখেবাধা মাস্ক সরিয়ে ফেলে, ছবি তোলে। ভয় দেখিয়ে একই সাথে পরীক্ষাকেন্দ্র থেকে দ্রুত যেতে বাধ্য করেন।

পরীক্ষার কথা না হয় বাদই দিলাম এতে তার শিশু মানসিকভাবে ভেঙে পরেছে। শারীরিক সমস্যায় ভুগছে। তেমন খাওয়া-দাওয়া নেই। চোখেমুখে ভীতি ও আতঙ্ক বিরাজ করছে। এখন তার অবস্থা এমন হয়েছে, রাতে ঘুমের ঘোরে হঠাৎ চিৎকার করে উঠে। একই সময় কথা হয় শিক্ষার্থী ফাতিমা আক্তারের সঙ্গে। ফাতিমা বলেন,‘ওই দিনের কথা আমি আর মনে করতে চাইনা।’

ফাতিমার আব্দুস সালাম মিন্টু বলেন, গত পহেলা জানুয়ারি তার সহপাঠীরা খুশি মনে বই উৎসব গিয়ে বই আনলেও সে বই উৎসবেও যায়নি। আমার মেয়ের প্রবেশপত্র সঠিক ছিলো। তার পারেও একজন শিশুর কেন অমানবিক ঘটনার শিকার হলো। এতে তাঁর মনে আনন্দ নেই, শুধু বিষাদের ছাঁয়া।

কষ্টের কথা কাউকে প্রকাশ করতে পারছেনা। তাকে সান্তনা দেওয়ার জন্য বিভাগীয় শহর বরিশালে ঘুরতে নিয়ে গিয়ে ছিলাম। যে মেয়ে আগে যেখানে সকালে ঘুম থেকে উঠেই স্কুলে যাওয়ার জন্য উদগ্রীব থাকতো।

সেই মেয়ে এখন বই আনাতো দুরের কথা নতুন শিক্ষা বর্ষে স্কুলে ভর্তি হওয়ার কোন আগ্রহ নেই। এসব বলে আর লাভ কি। আদরের সন্তানের এ অসহায়ত্ব এখন মুখ বুঝে সহ্য করতে হয়। মনে হয় এলাকা ছেড়ে কোথাও পালিয়ে যাই?

এর আগে এ নিয়ে শিক্ষার্থীর ক্ষুব্দ বাবা আব্দুস সালাম মিন্টু সামাজিক যোগযোগ মাধ্যমে স্ট্যার্টাস দিয়ে এভাবে তার কষ্টের কথা ব্যক্ত করেন, ‘আমার মেয়েটি বৃত্তির খাতায় ৪৫ মিনিট লেখার পর তাঁকে টেনে তিন তালা থেকে নামিয়ে দিল। মেয়েটির কলম, জ্যামিতিবক্স্র নিতে দিলোনা। তাকে টেনে গেটের বাহির করে দিয়ে বলে তাড়াতাড়ি বাড়ি নিয়ে যান। কি করে এভাবে সভ্য সমাজের টিচাররা করতে পারেন?’

নাম প্রকাশে অনেচ্ছুক স্থানীয় একাধিক ব্যক্তি জানিয়েছেন, শিশুটি গ্রাম্য পলিটিক্সের শিকার। জমি-জমা নিয়ে তার পরিবারের সাথে বিরোধের জেরে একে-বেঁকে গেল তার শিক্ষা জীবন। কারন এর পেছনে প্রতিপক্ষের হাত রয়েছে।

পরীক্ষা কর্তৃপক্ষ কেন্দ্র থেকে শিশু শিক্ষার্থী ফাতিমা আক্তারের চলে যাওয়ার পেছনে অসুস্থতার অজুহাত তুললেও কেন্দ্রের কর্তব্যরত চিকিৎসক জানিয়েছেন, শিশু শিক্ষার্থী ফাতিমা আক্তারের অসুস্থতার বিষয় তারা কিছুই জানে না।

ফতিমার মা ইসরাত জাহানের অভিযোগ সবকিছু জেনেও কর্তৃপক্ষ না জানার ভান করছেন। অবশ্য হল চর ছোপখালী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কেন্দ্র সুপার মো: গোলাম সরোয়ার বলেন, শিক্ষার্থীকে কেউ ভয় খোয়নি। অসুস্থতার কারনেই কেন্দ্র থেকে চলে যান।

নাম প্রকাশে অনেচ্ছুক বেতাগী উপজেলার এক অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষা কর্মকর্তা বলেন, শিক্ষার্থী ফাতিমা আক্তারের বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ থাকলেও প্রবেশ পত্র ইস্যু থেকে শুরু করে তাকে কেন পরীক্ষায় অংশ গ্রহণের সূযোগ দেওয়া হলো।

যখন সূযোগই দেওয়া হলো। তখন ওইভাবে কেন্দ্র থেকে তাকে বের করে না দেওয়াই ভাল ছিলো। তাছাড়া কোন অপরাধ থাকলেও আইনের আশ্রয় নেওয়া যেত। তানা হলে মানুষের মাঝে কোন প্রশ্নের সৃষ্টি হতোনা। এমনিতেই করোণায় ঝড়ে পড়া শিক্ষার্থীরা এখনো বিদ্যালয়মুখি হয়নি। সেখানে সংখ্যায় একটি হলেও শিশুটিকে অনিশ্চয়তার পথে ঠেলে দেওয়ার যৌক্তিকতা কতটুক?

বেতাগী সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কেন্দ্র সচিব মো: গোলাম কবির জানান, এ বিষয় আমি কিছুই জানিনা। সাংবাদিকের কাছে আমি প্রথম বিষয়টি শুনেছি। যদি উদ্দেশ্য প্রনোদিতভাবে তাকে বের করা হয়ে থাকে সেটা অত্যন্ত দু:খ জনক।

বেতাগী উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো: মিজানুর রহমান খান বলেন, ঘটনার সময় আমি সেখানে ছিলাম না। এ নিয়ে বাইরে অনেক গুঞ্জন চললেও আমি যতটুকু শুনেছি অসুস্থতার কারণে মেয়েটি কেন্দ্র থেকে চলে যায়।

দয়া করে শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরীর আরো খবর..