সেভ দ্য রোড-এর মাসিক প্রতিবেদন, সচেতনতা ক্যাম্পেইনসহ বিভিন্ন কর্মকান্ডের কারণে জুন মাস ও ঈদের ছুটির মোট ৩৮ দিনে সড়কপথে দুর্ঘটনা কমেছে ৩৩%। সড়কে ছোট বড় ৩ হাজার ৩৫৪ টি দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন ৪ হাজার ৮৬৮ জন, নিহত হয়েছেন ৬৯৫ জন।
সেভ দ্য রোড-এর মহাসচিব শান্তা ফারজানা প্রেরিত প্রতিবেদনে আরো জানা যায়, ১ জুন থেকে ৮ জুলাই পর্যন্ত ১ হাজার ২১৮ টি মোটর বাইক দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন ১ হাজার ৩৭৩ জন, নিহত হয়েছেন ৭২ জন; ৭৫৭ টি ট্রাক দুর্ঘটনায় আহত ১ হাজার ২৬৯ এবং নিহত হয়েছেন ৬৭ জন, নির্ধারিত গতিসীমা না মেনে পরিবহন মালিকদের উদাসিনতা ও সতর্কতা অবলম্বন না করায় বিশ্রাম না নিয়ে টানা ১২ থেকে ২০ ঘন্টা বাহন চালনাসহ বিভিন্ন অনিয়মের কারণে ৬৬০ টি বাস দুর্ঘটনায় আহত ১ হাজার ১১৪৯ এবং নিহত হয়েছেন ৩০৭ জন, দায়িত্বে অবহেলা, স্থানিয় পুলিশ-প্রশাসনের দুর্নীতিসহ বিভিন্নভাবে সড়ক-মহাসড়কে অবৈধ বাহন নাসিমন-করিমন এবং অন্যান্য ৩ চাকার বিভিন্ন ধরণের বাহনে ৭১১ টি দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন ১ হাজার ৭৭ এবং নিহত হয়েছেন ২৪৯ জন। সেভ দ্য রোড-এর চেয়ারম্যান ও সাবেক উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান জেড এম কামরুল আনাম, প্রতিষ্ঠাতা মোমিন মেহেদী, ভাইস চেয়ারম্যান বিকাশ রায়, জিয়াউর রহমান জিয়া, আইয়ুব রানা ও লায়ন ইমাম হোসেন-এর তত্বাবধায়নে দৈনিক যুগান্তর, দৈনিক দেশ রূপান্তর, দৈনিক দিনকাল, দৈনিক প্রথম আলো, দৈনিক ইত্তেফাক, দৈনিক কালের কন্ঠ, বাংলাদেশ প্রতিদিন, দৈনিক জনকন্ঠ, দৈনিক কালবেলা, দৈনিক ভোরের দর্পণসহ ২২ টি জাতীয় দৈনিক, আরটিভি, জিটিভি, যমুনা নিউজ, মাছরাঙ্গা, এটিএন বাংলাসহ ২০ টিভি-চ্যানেল, জাগো নিউজ, বাংলা নিউজ, বিডি নিউজসহ আঞ্চলিক ও স্থানিয় ৮৮ টি নিউজ পোর্টাল এবং স্থানিয় প্রত্যক্ষদর্শী-সেভ দ্য রোড-এর স্বেচ্ছাসেবিগণের দেয়া তথ্যানুসারে এই প্রতিবেদন দুর্ঘটনামুক্ত পথ-এর জন্য তৈরি করা হয়েছে। আকাশ-সড়ক- রেল ও নৌপথ দুর্ঘটনামুক্ত করার জন্য নিবেদিত দেশের একমাত্র সচেতনতা-গবেষণা ও স্বেচ্ছাসেবি সংগঠন সেভ দ্য রোড-এর পক্ষ থেকে আরো জানানো হয়- ১ থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত নৌপথ দুর্ঘটনা ঘটেছে ৬৩ টি। আহত হয়েছে ১৭১ জন, নিহত হয়েছে ৩৪ জন। রেলপথ দুর্ঘটনা ঘটেছে ৮৪ টি। আহত হয়েছে ১০৮। নিহত হয়েছে ৬৪ জন। আকাশপথে কোন দুর্ঘটনা না ঘটলেও বিমানবন্দরের অব্যবস্থাপনা. দায়িত্বে অবহেলা আর উদাসিনতার অভিযোগ করছেন প্রবাসী ও পর্যটকগণ। এই প্রতিবেদনে সেভ দ্য রোড-এর পক্ষ থেকে ২০১১ সালের ১১ জুলাই মিরসরাইতে বঙ্গবন্ধু টুনার্মেন্ট-এর খেলা শেষে ফেরার পথে পথ দুর্ঘটনায় নিহত অর্ধশত শিক্ষার্থীকে স্মরণিয় কওে রাখার লক্ষ্যে ১১ জুলাইকে ‘দুর্ঘটনামুক্ত পথ দিবস’ করার জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রতি অনুরোথ জানান।
সড়কপথ, নৌপথ ও রেলপথের দুর্ঘটনামুক্ত পথ চলাচলের অধিকার রক্ষায় মালিক-শ্রমিক-প্রশাসনিক এবং সাধারণ জনগণের সমন্বয়ের কোন বিকল্প নেই বলে সেভ দ্য রোড মনে করে। আর তাই বারবার ৭ দফায় ফিরে যাই। পাশাপাশি সেভ দ্য রোড-এর পক্ষ থেকে গত ১৪ বছর যাবৎ ৪ পথ দুর্ঘটনামুক্ত করতে সেভ দ্য রোড-এর ৭ দফা দাবী নিয়ে এগিয়ে চলা অব্যহত রয়েছে ছাত্র-যুব-জনতা-আবাল-বৃদ্ধ-বণিতার ঐক্যবদ্ধতায়। আর সেই ৭ দফা হলো- ১. মিরেরসরাই ট্রাজেডিতে নিহতদের স্মরণে ১১ জুলাইকে ‘দুর্ঘটনামুক্ত পথ দিবস’ ঘোষণা করতে হবে। ২. ফুটপাত দখলমুক্ত করে যাত্রীদের চলাচলের সুবিধা দিতে হবে। ৩. সড়ক পথে ধর্ষণ-হয়রানি রোধে ফিটনেস বিহীন বাহন নিষিদ্ধ এবং কমপক্ষে অষ্টম শ্রেণি উত্তীর্ণ ও জাতীয় পরিচয়পত্র ব্যতিত চালক-সহযোগি নিয়োগ ও হেলপারদ্বারা পরিবহন চালানো বন্ধে সংশ্লিষ্ট সকলকে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। ৪. স্থল-নৌ-রেল ও আকাশ পথ দূর্ঘটনায় নিহতদের কমপক্ষে ১০ লাখ ও আহতদের ৩ লাখ টাকা ক্ষতি পূরণ সরকারীভাবে দিতে হবে। ৫. ‘ট্রান্সপোর্ট ওয়ার্কার্স রুল’ বাস্তবায়নের পাশাপাশি সত্যিকারের সম্মৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার লক্ষে ‘ট্রান্সপোর্ট পুলিশ ব্যাটালিয়ন’ বাস্তবায়ন করতে হবে। ৬. পথ দূর্ঘটনার তদন্ত ও সাজা ত্বরান্বিত করণের মধ্য দিয়ে সতর্কতা তৈরি করতে হবে এবং ট্রান্সপোর্ট পুলিশ ব্যাটালিয়ন গঠনের পূর্ব পর্যন্ত হাইওয়ে পুলিশ, নৌ পুলিশ সহ সংশ্লিষ্টদের আন্তরিকতা-সহমর্মিতা-সচেতনতার পাশাপাশি সকল পথের চালক-শ্রমিক ও যাত্রীদের আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে হবে। সকল পরিবহন চালকের লাইসেন্স থাকতে হবে। ৭. ইউলুপ বৃদ্ধি, পথ-সেতু সহ সংশ্লিষ্ট সকল মন্ত্রণালয়ে দূর্নীতি প্রতিরোধে সকলকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। যাতে ভাঙা পথ, ভাঙা সেতু আর ভাঙা কালভার্টের কারণে আর কোন প্রাণ দিতে না হয়।
উল্লেখ্য, ‘সেভ দ্য রোড-এর অঙ্গীকার পথ দূর্ঘটনা থাকবে না আর…’ বাক্যটিকে লালন রেখে ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের টিএসসি থেকে ২০০৭ সালে পথচলা শুরু করে আকাশ-সড়ক- রেল ও নৌপথ দুর্ঘটনামুক্ত করার জন্য নিবেদিত দেশের একমাত্র সচেতনতা-গবেষণা ও স্বেচ্ছাসেবি সংগঠন সেভ দ্য রোড।