টানা বৃষ্টিপাত ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের কারণে জেলাজুড়ে বাড়ছে নদী-নদীর পানি। একই সঙ্গে ডুবছে জেলার নিন্মাঞ্চলগুলো। ইতোমধ্যে জেলার ৫টি উপজেলার ২২টি ইউনিয়নের ৮ হাজার ২৪০টি পরিবার বন্যার পানিতে আক্রান্ত হয়েছে। আর এতে করে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে অর্ধলক্ষাধিক মানুষ। বন্যায় আক্রান্ত উপজেলাগুলো হল, চুনারুঘাট, মাধবপুর, শায়েস্তাগঞ্জ, হবিগঞ্জ সদর ও নবীগঞ্জ উপজেলা।
এদিকে হবিগঞ্জ শহরের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া থোয়াই নদীর পানি মহাবিপদসীমা অতিক্রম করায় দুইদিন নির্ঘুম রাত কাটে শহর ও শহরতলীর মানুষের। বাধের বিভিন্ন স্থানে ছোটখাট ছিদ্র হওয়ার খবরে রীতিমতো আতংক ছড়িয়ে পড়েছিল। তবে চোখরাঙাগানো খোয়াই ক্রমশ শান্ত হতে চলেছে।
শুক্রবার সকাল ৯টায় হবিগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোেের্ডর নেয়া তথ্যে পানি কমার তথ্য পাওয়া গেছে। হবিগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোেের্ডর নির্বাহী প্রকৌশলী শামীম হাসনাইন মাহমুদ জানান, চুনারুঘাট উপজেলায় খোয়াই নদীর বাল্লা পয়েন্টে বিপৎসীমার ১৯৯ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বৃহস্পতিবার বিকেলে ছিল ২৭৮ সেন্টিমিটার উপরে। শায়েস্তাগঞ্জ পয়েন্টে বিপৎসীমার ১৫৩ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বৃহস্পতিবার বিকেলে ছিল ১৬৭ সেন্টিমিটার উপরে। হবিগঞ্জ সদর উপজেলার মাছুলিয়া পয়েন্টে বিপৎসীমার ১৬৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বৃহস্পতিবার বিকেলে ছিল ১৯৫ সেন্টিমিটার বিপৎসীমার উপরে। এছাড়াও কুশিয়ারা নদীর শেরপুর পয়েন্টে ১০ সেন্টিমিটার, বানিয়াচং মার্কুলি পয়েন্টে ৭ সেন্টিমিটার এবং আজমিরীগঞ্জের কালনী নদীতে ৩৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হয়েছে। জেলায় গত ২৪ ঘন্টার মোট বৃষ্টিপাত কমেছে।
জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা (অতিরিক্ত দায়িত্ব) সুমি রানি বল জানান, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের জন্য এখন পর্যন্ত মোট ১১৬টি আশ্রয়কেন্দ্র চালু করা হয়েছে। আশ্রয় কেন্দ্রে ৫০ জন পুরুষ, ৬৫ জন মহিলা ও ২৫ জন শিশু আশ্রয় নিয়েছে।পানিবন্দি মানুষদের মধ্যে বিতরণের জন্য ৯৬৫ টন চাল, ১ হাজার ৫৬০ প্যাকেট শুকনো খাবার ও নগদ ২৩ লাখ ২৭ হাজার ৫০০ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
হবিগঞ্জের বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা শুক্রবার দুপুরে পরিদর্শন করবেন বন, পরিবেশ ও পানিসম্পদ মন্ত্রনালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। তিনি বিকেল ৩টায় চুনারুঘাট উপজেলা পরিষদ প্রাঙ্গনে পরিবেশ অধিদপ্তর, বন অধিদপ্তর ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা করবেন।
এদিকে টানা বৃষ্টিপাত ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের কারণে সাধারণ মানুষের ঘর বাড়ির সঙ্গে বন্যার পানিতে ভেসে যাচ্ছে রোপা আমনের বীজতলাসহ মাছের ঘের। অনেক স্থানেই আবার বন্যার পানিতে মানুষদের মাছ ধরতেও দেখা গেছে। আর বন্যা দুর্গতের মধ্যে দেখা দিয়েছে চরম দূর্ভোগ। জেলার নিন্মাঞ্চলগুলোত তলিয়ে গেলেও এখনও বেশিরভাগ উচু এলাকা রয়েছে অক্ষত। হবিগঞ্জ শহরতলীর রিচি ও লুকড়া ইউনিয়নের ২০টি গ্রাম পানিতে তলিয়ে গেছে। বাহুবল উপজেলার ভাদেশ্বর ও বাহুবল উপজেলার করাঙ্গী তীরবর্তী প্রায় অর্ধশতাধিক গ্রাম বন্যা কবলিত হয়ে পড়েছে। বাহুবল সদরে অবস্থিত বাহুবল আদর্শ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বাহুবল সদর ইউপি কার্যালয়, উপজেলা রিসোর্স সেন্টার (ইউআরসি), উপজেলা প্রাণী সম্পদ হাসতপাল, উপজেলা পরিষদ কমপ্লেক্স, উপজেলা সমাজসেবা অফিস, উপজেলা আনসার-বিডিপি কার্যালয় ও দীননাথ ইনস্টিটিউশন সাতকাপন সরকারি হাইস্কুলের অভ্যন্তরে বানের পানি প্রবেশ করেছে। চুনারুঘাট উপজেলার ৮টি ইউনিয়ন ও চুনারুঘাট পৌরসভার নি¤œাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। নবীগঞ্জ উপজেলার দীঘলবাক ইউনিয়ন ও শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলার বেশকিছু এলাকা প্লাবিত হয়েছে।
হবিগঞ্জ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক নুরে আলম জানান, বন্যায় হবিগঞ্জ জেলার ৩৭৩ হেক্টর বোরো আমন বীজতলা, ৬ হাজার ৭২৬ হেক্টর রোপা আমন, ১ হাজার ৯৪৫ হেক্টর আউশ ও ৪৬৮ হেক্টর জমির শাকসব্জি আক্রান্ত হয়েছে।